দু’দিনের সফরে শনিবার মধ্যরাতের পর ঢাকায় এলেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। রাত ১টা ৪৫ মিনিটে কাতার এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নামেন।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় আসেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। তারা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিন দেখতে এলেন।
এ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথ মিটিং করবেন জাতিসংঘের মহাসচিব। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পও পরিদর্শন করবেন তিনি।
জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ছাড়াও বাংলাদেশ সফরে রয়েছেন আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (আইসিআরসি) প্রেসিডেন্ট পিটার মাউরা।
একই সময়ে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সফরকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বছরই রয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে তাদের এ সফরে।
সূত্র জানায়, জাতিসংঘের মহাসচিব এর আগে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রধান থাকাকালে ২০০৮ সালে একবার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে এসেছিলেন।
কিন্তু জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে এই প্রথম সফরে এলেন তিনি। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের এটি দ্বিতীয় সফর।
এর আগে বিশ্ব দারিদ্র্য নিরসন দিবস পালন উপলক্ষে অতিথি হিসেবে গত বছর ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে।
গুতেরেস ও জিম ইয়ং কিম কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। তারা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
সূত্র জানায়, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও বাংলাদেশের পক্ষে তাদের ভরণপোষণ ও যত দিন এখানে অবস্থান করবেন তত দিন সুস্থ জীবন নিশ্চিত করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় তাদের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থা এগিয়ে এসেছে।
বিশ্বব্যাংকও রোহিঙ্গাদের সহায়তার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল। গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয় সংস্থাটি।
এ পরিপ্রেক্ষিতে একটি সহায়তা মিশন সম্প্রতি কাজ শেষ করেছে। একই সঙ্গে অন্যান্য দাতা সংস্থা ও দেশ যৌথভাবে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে এবং ইতিমধ্যেই কিছু সাহায্যও পাওয়া যাচ্ছে।
এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের ওপর ইতিহাসের বর্বরোচিত নির্যাতনকে জাতিগত নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মহাসচিব রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের জন্য মিয়ানমার সামরিক জান্তার কঠোর সমালোচনা করেন এবং রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য বিশ্ববাসীকে পাশে দাঁড়ানোরও আহ্বান জানান।
যুগান্তর