ইরান আরেকটু হলে গ্রুপ পর্ব থেকে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়েই দিয়েছিল প্রায়।
শেষ পর্যন্ত ইরান না পারলেও পেরেছিল দক্ষিণ কোরিয়া।
গ্রুপ পর্ব থেকে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে বিদায়ের পথটা দেখিয়েছিল তারাই।
কিন্তু মহাপরাক্রমশালী প্রতিপক্ষের পথের কাঁটা হতে পারলেও ইরান আর দক্ষিণ কোরিয়া নিজেরাও বিদায় নিয়েছে গ্রুপ পর্বের বাধা পেরোতে না পারার অপূর্ণতা নিয়েই।
তাদের বিদায়ের পরও বিশ্বকাপে ঠিকই উড়ছিল এশিয়ার পতাকা। ওড়াচ্ছিল জাপান। রুস্তভ এরেনায় কাল রাতের বীরত্বে সেই পতাকা আরো ওপরেও উড়ল। বীরত্বের সেই সমুন্নত পতাকা আবার বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট বেলজিয়ামের প্রবলভাবে ফিরে আসার ক্ষমতায় অবনমিতও হলো। ম্যাচের ইনজুরি সময়ের শেষ মিনিটে নাসের চাদলির গোল ০-২ গোলে পিছিয়ে পড়া ‘রেড ডেভিল’দের শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলে পার করে নিল শেষ ষোলোর বাধা। যে গোল নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার জাপানি স্বপ্নকে ধূলিস্যাৎ করে ব্রাজিলের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল ভিনসেন্ট কোম্পানির বেলজিয়ামকে।
ম্যাচের আগে জাপানের কাছে হেরে যাদের বিদায়ের আশঙ্কা করেনি সম্ভবত কেউই।
প্রথমার্ধের খেলা দেখার পর তো আরো সেরকম কিছু ভাবার অবকাশ ছিল না। বেলজিয়াম এমনই আক্রমণের ঝড় বইয়ে দিচ্ছিল যে গোলবারের নিচে ভীষণ ব্যস্ততায় পেরিয়ে যাচ্ছিল কাওয়াশিমার সময়। দ্বিতীয়ার্ধে তাঁর মতোই অবস্থা হলো বেলজিয়ামের গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়ারও। পাল্টা আঘাতই শুধু হানল না জাপান, তারা বরং দ্বিতীয়ার্ধে ৪ মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে এগিয়েও গেল। পিছিয়ে থাকা বেলজিয়াম এরপর মরণ-কামড় দিল আরো। তাতে একপর্যায়ে ৫ মিনিটের মধ্যে তারাও দিল দুই গোল শোধ করে। তাতে বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচটির শেষাঙ্কে গিয়ে নাসের চাদলির গোলে ভাগ্য পুড়ল জাপানের।
অথচ ৪৮ মিনিটে গাকো শিবাসাকির থ্রু ইয়ান ফের্তোঙ্গেনের ক্লিয়ার করার ব্যর্থতায় গোল করে জাপানকে এগিয়ে নেন জেনকি হারাগুচি। এর রেশ কাটতে না কাটতেই বেলজিয়ামকে বজ াহত করে দেওয়া দ্বিতীয় গোল জাপানের। বক্সের বাইরে কাগাওয়ার কাছ থেকে বল পাওয়া তাকাশি ইনুই সেখান থেকেই জোরালো শটে কোর্তোয়াকে পরাস্ত করে এক রকম শেষ আটের চৌকাঠে নিয়েই দাঁড় করিয়ে দেন জাপানকে। কিন্তু প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম বলে কথা! এত সহজেই তো আর হাল ছেড়ে দেওয়ার দল তারা নয়। আক্রমণ চলতে থাকে একের পর এক। এরই ফল ধরা দেয় ৬৯ মিনিটে। নিজেদের প্রথম গোল হজমের কারণ ফের্তোঙ্গেন হেডে লক্ষ্যভেদ করে প্রায়শ্চিত্ত করেন নিজের ব্যর্থতার। একটি ফিরিয়ে দিতেই আরো উজ্জীবিত বেলজিয়াম ৭৪ মিনিটেই ফেরায় সমতা। এডেন হ্যাজার্ডের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে সমতা ফেরান বদলি খেলোয়াড় মারুয়ান ফেলাইনি। সমতা আসার পর দুই দলই চালাতে থাকে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। তবে ৯৪তম মিনিটে সাফল্যটা ধরা দেয় বেলজিয়ামের হাতেই। জাপানের আক্রমণে বল প্রতিহত করা গোলরক্ষক কোর্তোয়া দ্রুত বল বাড়ান সামনে। সেটি ধরে দূরন্ত গতিতে সামনে ছুটে যাওয়া কেভিন ডি ব্রুইন বল দেন থমাস মিউনিয়েরকে। বক্সের ভিতরে ডান দিক থেকে তাঁর আড়াআড়ি পাস মাঝখানে দাঁড়ানো রোমেলু লুকাকু ছেড়ে দিলে বল খুঁজে পায় বাঁ দিকে অবস্থান নেওয়া চাদলিকে। ম্যাচভাগ্য গড়ে দিতে বিন্দুমাত্র সময়ও নেননি। তাঁর লক্ষ্যভেদেই অবনমিত বিশ্বকাপে জাপানি বীরত্বের পতাকাও!