নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীতে রেল কোচ ওয়াশিং প্লান্টের উদ্বোধন করা হয়েছে। এখন থেকে এনালগ পদ্ধতি নয় ডিজিটাল স্বয়ংক্রিয় মেশিনে পরিষ্কার করা রেল কোচ বগি। স্বয়ংক্রিয়ভাবে দশ মিনিটে ৪২টি বগি পরিষ্কার করা যাবে উক্ত মেশিনে। প্লান্টি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরী।
৮ নভেম্বর সোমবার দুপুরে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ওয়াশফিটে এই ওয়াশিং প্ল্যান্টের উদ্বোধন করেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
১৫০০ লিটার পানির পরিবর্তে ৬০ লিটার পানিতে পরিচ্ছন্ন কাজ সম্পন্ন করবে এই মেশিন। সময়ও লাগবে কম।
রেলওয়ের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্ল্যান্ট দুটি কমলাপুর ও রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ওয়াশপিটে স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের শেষে দিকে নেওয়া এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা। পরীক্ষামূলকভাবে প্ল্যান্ট দুটিতে ট্রেন ঢুকিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে।
বর্তমানে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে (লিকুইড ডিটারজেন্ট) প্রতিদিন পরিচ্ছন্নতা কাজ করার নির্দেশনা আছে। কিন্তু এটি বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে। মাসে এক-দুই বার কোনো কোনো ট্রেন পরিষ্কার করা হয়। এতে ট্রেনের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশে মরিচা ধরাসহ যত্রতত্র পড়ে থাকে ময়লা-আর্বজনা। মলমূত্র আর ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে যাত্রীরা রীতিমতো অতিষ্ঠ।
এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যেই উল্লিখিত অত্যাধুনিক ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় রেল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে দেশে ৩৫৯টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। এরমধ্যে আন্তঃনগর ১০৪, মেইল-এক্সপ্রেস ও ডেমু ১২০ এবং লোকাল ১৩৫টি।
রাজশাহীতে স্বয়ংক্রিয় রেল কোচ ওয়াশিং প্ল্যান্টের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায়, রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রেল বান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অন্যান্য উন্নয়নের সাথে তিনি রেলের মান উন্নয়নে এবং যাত্রী সেবার মান বাড়াতে বহু উন্নয়ন করেছেন এবং উন্নয়ন মূলক প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ৮ নভেম্বর ঢাকার কমলাপুরে এবং রাজশাহীতে দুটি প্ল্যান্ট উদ্বোধন করা হয়েছে। রেলে সেবারমান উন্নয়নের সঙ্গে দিন দিন অত্যাধুনিক কোচ-ইঞ্জিন ক্রয় করা হচ্ছে। ট্রেন পরিচালনায় সময় সাশ্রয়ে-এরকম প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। স্টেশনগুলোও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। প্রতিবারই একেকটি ট্রেন পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করবে। যাত্রীদের ভালো লাগবে।
রাসিক মেয়র আরো বলেন, জনবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলকে আধুনিক ও শতভাগ যাত্রীবান্ধব করতে একের পর এক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন। অত্যাধুনিক কোচ আমদানী করা হয়েছে। এসব কোচ স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং প্ল্যান্ট ছাড়া যথাযথ পরিষ্কার করাও সম্ভব নয়। বর্তমান সরকারের আমলে আরও অত্যাধুনিক ইঞ্জিন-কোচ আনা হচ্ছে। বৈদ্যুতিক ট্রেন চালানোর উপযোগী নতুন রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। বৈদ্যুতিক ও দ্রুতগতির ট্রেনও চালু করা হবে। এসব ট্রেন পরিষ্কার রাখতে স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং প্ল্যান্টের কোনো বিকল্প নেই। এসব প্ল্যান্ট আরও স্থাপন করা হবে। এতে যেমন ট্রেন ঝকঝক-চকচক থাকবে, তেমনি সময় ও পানি সাশ্রয় হবে। এতদিন ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হাত ও ব্রাশ দিয়ে ঘষে ঘষে ট্রেনের ভেতর ও বাহির পরিষ্কার করা হতো। আমেরিকার প্রযুক্তিতে স্থাপিত একেকটি ওয়াশিং প্ল্যান্টে এক থেকে তিনটি ট্রেনের বগি পরিষ্কার করা সম্ভব হবে। সময় লাগবে মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিট।
পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাপরিচালক মিহির কান্তি গুহ বলেন, ওয়াশিং প্ল্যান্ট ছাড়া কোনো ট্রেনই যথাযথ পরিষ্কার রাখা সম্ভব নয়। এছাড়া ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পরিষ্কার করা কতটুকুই বা সম্ভব। বর্তমান সরকার একের পর এক অত্যাধুনিক ইঞ্জিন-কোচ ক্রয় করছে। নতুন নতুন ট্রেন পরিচালনা করছে। শুধু আন্তঃনগর ট্রেন নয়, সব ট্রেনই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় কোচ ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। নামমাত্র সময়ের মধ্যে ট্রেনগুলো পরিষ্কার শেষে চকচক দেখাবে। গ্লাস পরিষ্কার হবে ঝকঝকে। যাত্রীরা পরিষ্কার দেখতে পাবেন ট্রেনের বাহিরের দৃশ্য।
তিনি আরও বলেন, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে রেলের একটি প্রকল্পের অধীনে ৩৬ কোটি টাকা খরচে এ প্ল্যান্ট দুটি স্থাপন করা হয়েছে। একেকটি ট্রেনের পুরো কোচগুলো প্ল্যান্টে প্রবেশ করবে-অটোমেটিক পদ্ধতিতে পরিষ্কার হয়ে বেরিয়ে আসবে।
তিনি আরো বলেন, দেশের সব জেলা রেলওয়ে নেটওয়ার্কে আসছে-ট্রেনের সংখ্যা বাড়ছে। এরকম প্ল্যান্ট আরও বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ট্রেনের ভেতর-বাহির সব সময় পরিষ্কার থাকবে-যাতে যাত্রীরা স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন।
ব্রিটিশ আমলে কোচ ওয়াশিং প্ল্যান্ট ছিল। স্বাধীনতার পর এই প্রথম দেশে এ দুটি প্ল্যান্ট স্থাপনের মধ্য দিয়ে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ট্রেনগুলো ওয়াশের আওতায় আসছে। ট্রেন পরিষ্কার করার জন্য প্রায় ২ ঘণ্টা সময় নির্ধারিত থাকে। কিন্তু, কোনো ট্রেন যখন শিডিউল বিপর্যয় হয় তখন সেই ট্রেন ওয়াশ করার কারণে আরও বিপর্যয় হয়।
স্বাগত বক্তব্য দেন চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কুদরত ই খুদা। বক্তব্য দেন চীফ অপারেটিভ সুপারিনটেনডেন্ট শহীদুল ইসলাম, বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (পাকশি) মমতাজুল ইসলাম, বিভাগীয় রেল ব্যবস্থাপক (পাকশী) মোঃ শাহীদুল ইসলাম। আরো বক্তব্য দেন রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সভাপতি ওয়ালী খান, অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আক্তার আলী, রাজশাহী রেলওয়ে শ্রমীক লীগ ওপেন লাইন শাখার সভাপতি জহরুল ইসলাম, আরবিআর শাখার সভাপতি মোতাহার হোসেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের বিভাগীয় কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণসহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলওয়ে পশ্চিমের সকল চীফ ও বিভাগীয় কর্মকর্তাগন এবং রেলওয়ে রাজশাহীর শ্রমিক লীগের সকল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।