রাবি প্রতিনিধিঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাসে অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকছেন। এ কারণে এই পাঠদান কার্যক্রমের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছুটি শুরু হয়। পরিস্থিতি অবনতির সঙ্গে ছুটিও বাড়তে থাকে। এর সাড়ে তিন মাস পর গত ৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অনলাইন ক্লাস শুরুর কথা জানায় প্রশাসন। ৯ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন বিভাগ অনলাইন ক্লাস শুরু করে। ভিডিও কনফারেন্সভিত্তিক অ্যাপ ‘জুম’-এর মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করছেন শিক্ষকরা।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৯টি বিভাগ ও ছয়টি ইনস্টিটিউটে প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী পড়েন। কয়েকজন শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে অনলাইন ক্লাস নিলেও তাতে শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অংশ ছিল না। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস শুরুর পর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও তা বিশ্ববিদ্যালয়টির মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেকেরও কম।
নিয়মিত ক্লাস করা শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য মতে, অনলাইন ক্লাসে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীর পরিমাণ গড়ে ৫০ শতাংশেরও কম। দু-একটি বিভাগের কোনো কোনো বর্ষের ক্লাসে উপস্থিতি ৮০ শতাংশ বা এর কিছু বেশি। আবার কিছু কিছু বিভাগের ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৩০ শতাংশেরও কম।
ক্লাসে অংশ নিতে না পারা শিক্ষার্থীরা জানান, তাঁদের বেশির ভাগের বাড়ি প্রত্যন্ত অঞ্চলে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের অনেকের নেই ল্যাপটপ কিংবা স্মার্টফোন। ইন্টারনেটের গতি নিয়ে সমস্যা আছে। এ ছাড়া ডাটা প্যাকেজ কিনতে যে টাকার প্রয়োজন—তা বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়। ফলে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশকে অনলাইন ক্লাসের বাইরে থাকতে হচ্ছে। তবে যে ক্লাসগুলো নেওয়া হচ্ছে, এর ভিডিও রেকর্ড কিংবা লেকচারের হ্যান্ড আউট ফেসবুকে আপলোড করা হলে অনেকে উপকৃত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লালমনিরহাটের সোহেল জানান, ঠিকমতো নেটওয়ার্ক না পাওয়ায় বারবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ জন্য শিক্ষকের লেকচার সঠিকভাবে বুঝতে পারেন না তিনি। তাই ক্লাস করা হচ্ছে না তাঁর।
কুড়িগ্রামে অবস্থান করা নৃবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নয়ন চন্দ্র মোহন্ত বলেন, ‘করোনার আতঙ্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বন্যা। বাড়ির চারপাশে পানি। লোডশেডিং, ঠিকঠাক নেটওয়ার্ক না পাওয়া এসব কারণে ক্লাস করতে পারছি না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক ফখরুল ইসলাম বলেন, ভার্চুয়াল ক্লাসগুলোর রেকর্ডিং সংরক্ষণ করে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরে এগুলো ক্লাস করতে না পারা শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে। তবে সরকারিভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টারনেট সুবিধা বাড়ানো গেলে ক্লাসের উপস্থিতি বাড়বে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘অনলাইন পাঠদান কার্যক্রমে সমস্যা একটু হচ্ছেই। তবে উপকারও হচ্ছে। টেকনিক্যাল কমিটিও শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছে। এ ছাড়া শিক্ষকদেরও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।