নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাস এর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার বিকেল চারটায় নগর ভবনে মেয়রের দপ্তর কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যৌথ উদ্যোগে পদ্মা নদী ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে এনে নৌরুট চালু, ট্রেন ও বিমান যোগাযোগ চালু, পারস্পারিক শিক্ষা বিনিময় এবং রেশম শিল্প উন্নয়নে আলোচনা হয়।
বিকেল চারটায় নগরভবনে আসলে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলীকে বর্ণিল আয়োজনে স্বাগত জানানো হয়। শুরুতে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এরপর নৃত্যশিল্পীরা গানের তালে তালে অতিথিদের নিয়ে নগরভবনে প্রবেশ করেন। এরপর মেয়র দপ্তরকক্ষে বৈঠকে মিলিত হন তাঁরা। বৈঠক শেষে নগর ভবনের বঙ্গবন্ধু কর্ণার পরিদর্শন করেন ভারতীয় হাইকমিশনার এবং পরিদর্শন শেষে পরিদর্শন বইয়ে মন্তব্য লিখেন। এর আগে মেয়র লিটন ভারতীয় হাইকমিশনারকে সৌজন্য উপহার প্রদান করেন। ভারতীয় হাইকমিশনারও মেয়রকে উপহার দেন।
পরে রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র ভারতের বাংলাদেশে নিযুক্ত হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাসের সাথে আমার বৈঠক হলো। আমরা ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে কয়েকটি ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করার কথা বলেছি এবং তিনি সেসব ক্ষেত্রে ভারত সরকারকে সম্মত করানোর যত যতটুকু করার দরকার করবেন। ভারতবর্ষের পশ্চিম বাংলার মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান থেকে গোদাগাড়ীর প্রেমতলী হয়ে রাজশাহী পর্যন্ত নৌ রুটটি অনুমোদন আছে। সেটা ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে পুনঃখনন করে সারাবছর নদীর নাব্যতা বজায় রেখে নৌ পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা, যাতে ভারত থেকে মালামাল আনা যায় এবং যাত্রী আনানেওয়া করা যায়। আমি তার কাছে চেয়েছিলাম রাজশাহী থেকে কলকাতা পর্যন্ত ট্রেন, এটির ব্যাপারেও তিনি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। আরেকটি হচ্ছে বিমান চলাচল। আমাদের রাজশাহীতে হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দরে অতি শিগগিরই নতুন একটি দ্বিতল টামির্নাল ভবনের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। রানওয়েটি সম্প্রসারিত হওয়ার পরে সেখান থেকে কলকাতা এবং দিল্লি পর্যন্ত বিমান চলাচলের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে গৌহাটি বিমান চালু হয়েছে, এটিও করা যাবে, কোন সমস্যা নেই।
মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন আরো বলেন, আমাদের মৃতপ্রায় রেশম শিল্পকে জাগিয়ে তোলার ব্যাপারে ভারত সরকার সম্পূর্ণ সহযোগিতা এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিতে চান। তারা চান এই এলাকায় সিল্কের বিপুল সম্ভাবনা জেগে উঠুক, এক্ষেত্রে তারা সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করবেন। এছাড়া শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের বিনিময়, যেমন শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, শিক্ষকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রদান-এই ক্ষেত্রে ভারত সরকার আরো বেশি করে অগ্রণী ভুমিকা পালন করবেন।
মেয়র বলেন, সব মিলিয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে, তারা ইতিবাচক দিকগুলো অনুসন্ধান করতে এসেছিলেন। আগামীকাল ভারতীয় হাইকমিশনার যাবেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্থলবন্দর দেখতে। আমাদের বাংলাদেশ প্রান্তের চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ এবং ভারত প্রান্তের মালদহের মাহদিপুর- এই দুটির অবকাঠামোগত মান আরো উন্নত করে সেখানে স্থলবন্দর বড় ক্যাপাসিটি নিয়ে করা যায়, সেই চিন্তাভাবনা তিনি করেছেন।
ভারত সরকারের সহযোগিতায় রাজশাহীতে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, ভারত সরকারের সহযোগিতায় ২২ কোটি টাকার চলমান প্রকল্প টাইলস দিয়ে ফুটপাত নির্মাণ, ছোট ছোট মন্দিরগুলোর সংস্কার, জলাশয়গুলো সংরক্ষণ করে পাড় বেঁধে দেওয়া ইত্যাদির ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এগুলো তাদের দেখিয়েছি, তারা সন্তষ্ট হয়েছেন। আমরা বর্ধিত কিছু সহযোগিতা চেয়েছি, তারা বলেছেন,বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন।
বৈঠককালে রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার সঞ্জিব কুমার ভাট্টি, সেকেন্ড সেক্রেটারী (ভিসা এন্ড কনসুলার) ভিশাল জ্যোতি দাস, জেএসএ প্রশাসন মনিশ কুমার ত্রিপাঠি, রাসিকের প্যানেল মেয়র-১ ও ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, প্যানেল মেয়র-৩ ও ১নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাহেরা বেগম মিলি, সচিব রেজাউল করিম, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা শাহানা আখতার জাহান, মাননীয় মেয়রের একান্ত সচিব আলমগীর কবির, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মোঃ মামুন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এএফএম আঞ্জুমান আরা বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এভি-১