পথের ভিখারি থেকে কোটিপতি পর্যন্ত সবাইকে একই হারে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) দিতে হয়।

আভা ডেস্কঃ প্রচলিত নিয়মানুযায়ী বছরে আড়াই লাখ টাকার বেশি আয় হলে একজন ব্যক্তিকে আয়কর দিতে হয়। এর কম আয় করলে আয়কর দিতে হয় না। কিন্তু পথের ভিখারি থেকে কোটিপতি পর্যন্ত সবাইকে একই হারে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) দিতে হয়।

নতুন আইনের আওতায় আগামী বাজেটে একদিকে ভ্যাটের পরিধি ব্যাপক হারে বিস্তৃত করা হচ্ছে, তেমনি নিত্যব্যবহার্য কিছু পণ্যের ভ্যাটহার বাড়ানো হচ্ছে। এতে বাড়তে পারে ওইসব পণ্যের দাম। যা ভোক্তাকে ভোগাবে।

পুরনো ভ্যাট আইনে এলপি গ্যাস, গুঁড়া দুধ, গুঁড়া মসলা, টমেটো কেচাপ, চাটনি, ফলের জুস, টয়লেট টিস্যু, টিউবলাইট, চশমার ফ্রেমসহ নিত্যব্যবহার্য ৮৬টি আইটেমের ওপর ট্যারিফ মূল্য ছিল। নতুন আইনে উৎপাদন পর্যায়ে এসব পণ্যে ট্যারিফ মূল্যের পরিবর্তে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে।

এ কারণে গুঁড়া দুধের দাম কেজিপ্রতি ২০-৫০ টাকা, গুঁড়া মসলা দাম কেজিপ্রতি ২-১০ টাকা, ফলের জুসের দাম ২-৫ টাকা বাড়তে পারে। একই কারণে বাসাবাড়িতে ব্যবহার্য এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়বে।

এ ছাড়া ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের পর জামা-কাপড় কিনতে গেলে বেশি অর্থ খরচ করতে হবে। কারণ আগে পোশাক মূল্যের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হতো, আগামীতে সেখানে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে।

অন্যদিকে যারা পোশাক বানিয়ে পরেন, তাদেরও ছাড় নেই। জামা-কাপড় তৈরির ওপর ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে।

যেসব পণ্য ও সেবায় ৫ শতাংশ ভ্যাট : আগামী বাজেটে মোট ৫৫টি আইটেমের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হচ্ছে। এসব পণ্যের ওপর আগে ট্যারিফ ভ্যালু ছিল। এসব পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- প্লাস্টিকের তৈরি গৃহস্থালি সামগ্রী, সিআর কয়েল, জিআই ওয়্যার, তারকাঁটা, স্ক্রু, অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি গৃহস্থালি সামগ্রী (হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন ইত্যাদি), ব্লেড, ট্রান্সফরমার, টিউবলাইট, চশমার ফ্রেম, সানগ্লাস, রিডিং গ্লাস ও ম্যাটরেস।

এ ছাড়া ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, ইনডেনটিং, আসবাবপত্র, লঞ্চের এসি কেবিন, পরিবহন ঠিকাদার, স্বর্ণ ও রুপার জুয়েলারি, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর সেবা ও বিদ্যুৎ বিলের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দেয়ার প্রস্তাব আসছে নতুন বাজেটে।

এ ছাড়া ভ্যাটের চাপ আসছে সিগারেট, বিড়ি, জর্দা ও গুলের ওপর। নিম্ন থেকে উচ্চমানের প্রতিটি সিগারেটের মূল্যস্তর বাড়ানো হচ্ছে। এ কারণে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়বে। গরিবের বিড়ির মূল্যস্তর ও সম্পূরক শুল্ক দুটোই বাড়ানো প্রস্তাব করা হয়েছে। ফিল্টারবিহীন হাতে তৈরি ৮, ১২ ও ২৫ শলাকার প্রতি প্যাকেট বিড়ির দাম যথাক্রমে বাড়ানো হচ্ছে ৪৮ পয়সা, ৭২ পয়সা ও দেড় টাকা। সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে।

অন্যদিকে ফিল্টারযুক্ত ১০ ও ২০ শলাকার বিড়ির দাম যথাক্রমে ১ ও দুই টাকা বাড়ানোর পাশাপাশি ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব থাকছে। নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করার পর ধোঁয়াবিহীন তামাক যেমন জর্দা ও গুলের দামও বাড়বে।

বেশি কথা, বেশি কর : আগামীতে মোবাইল ফোনে কথা বলারও খরচ বাড়বে। বর্তমানে কথা বলার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আদায় করা হয়। বাজেটে সম্পূরক শুল্কহার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। বাজেট ঘোষণার দিন থেকে তা কার্যকর হবে।

গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ফি’র ওপর ভ্যাটের পাশাপাশি সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, লরি, অ্যাম্বুলেন্স ও স্কুলবাস ছাড়া সব ধরনের পরিবহন রেজিস্ট্রেশন, রুট পারমিট নবায়ন, ফিটনেস সনদ, মালিকানা সনদ নিতে এবং নবায়ন করতে বিআরটিএ নির্ধারিত সেবামূল্যের ওপর ভ্যাটের পাশাপাশি ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিতে হবে।

দীর্ঘযাত্রায় যানজট এড়াতে এখন হেলিকপ্টার সেবা জনপ্রিয় হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সেবামূল্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন বাজেটে। আগে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিতে হতো। আগামীতে সেখানে ভ্যাটের পাশাপাশি ২৫ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক দিতে হবে।

যারা বাড়িঘর করার কথা ভাবছেন, তাদের জন্যও দুঃসংবাদ আছে। নতুন ভ্যাট আইনের কারণে রডের দাম বাড়বে। বর্তমানে রড উৎপাদন ও বিপণনে টনপ্রতি ৯০০ টাকা ভ্যাট দিতে হয়। আগামীতে টনপ্রতি রডে ২ হাজার টাকা নির্দিষ্ট কর আরোপ করা হচ্ছে। অর্থাৎ টনপ্রতি রডের দাম ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা বাড়তে পারে।

১০ শতাংশ ভ্যাট : যেসব সেবায় ১০ শতাংশ ভ্যাট কার্যকরের প্রস্তাব থাকছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- মোটর গাড়ির গ্যারেজ এবং ওয়ার্কশপ, ডকইয়ার্ড, ছাপাখানা, নিলামকারী সংস্থা, যান্ত্রিক লন্ড্রি, চলচ্চিত্র স্টুডিও, চলচ্চিত্র প্রদর্শক (প্রেক্ষাগৃহ), চলচ্চিত্র পরিবেশক, মেরামত ও সার্ভিসিং, সিকিউরিটি সার্ভিস, স্বয়ংক্রিয় বা যান্ত্রিক করাতকল, খেলাধুলা আয়োজক, পরিবহন ঠিকাদার (পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য ব্যতীত), বোর্ডসভায় যোগদানকারী, টেইলারিং শপ ও টেইলার্স, ভবন, মেঝে ও অঙ্গন পরিষ্কার বা রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা, লটারির টিকিট বিক্রয়কারী এবং সামাজিক ও খেলাধুলাবিষয়ক ক্লাব।

শিল্পের ভ্যাট অব্যাহতি : রফতানিমুখী তৈরি পোশাককে ভ্যাটের চাপ থেকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক গ্যাস, ওয়াসা, জোগানদার, সিকিউরিটি সার্ভিস, পরিবহন ঠিকাদার, যানবাহন ভাড়া প্রদানকারী, বিদ্যুৎ বিতরণকারী, তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর সেবা, বিদেশি সেবা গ্রহণ, শ্রমিক কল্যাণ ও বিনোদন ব্যয়, ল্যাবরেটরি চার্জ, বন্দর, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স, সিঅ্যান্ডএফ সংস্থা, বীমা কোম্পানি, শিপিং এজেন্ট, বন্দর, টেলিফোন, টেলেক্স, ফ্যাক্স, অগ্নিবীমা, কুরিয়ার সার্ভিস ও ব্যাংকিং সেবার ওপর শতভাগ ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। আগে বেশকিছু সেবার বিপরীতে আংশিক ভ্যাট ছিল। একই সুবিধা পাবেন হাইটেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়াও মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল ফোন, ফ্রিজের কম্প্রেসার উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বহাল থাকবে। পাশাপাশি বাজেটে দেশে প্রাইভেট কার ও ওষুধ উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেয়া হয়েছে।

আইনের যত পরিবর্তন : নতুন ভ্যাট আইনে বেশকিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ভ্যাট অব্যাহতির সীমা ৩০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব থাকছে নতুন বাজেটে। একই সঙ্গে বাড়ানো হচ্ছে টার্নওভার ট্যাক্সের সীমা ও করের পরিমাণ।

টার্নওভারের সীমা ৮০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ কোটি টাকা ও করহার ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করার প্রস্তাব আছে। অন্যদিকে বাজেটে ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে নিবন্ধন নিলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা করার বিধান থাকছে।

পুরস্কার আছে, শাস্তি নেই : ভ্যাট কর্মকর্তাদের কাজে উৎসাহ জোগাতে নতুন ভ্যাট আইনে আর্থিক পুরস্কারের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন বাজেটে। এ জন্য নতুন আইনে ১২৬(ক) ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি পুরস্কার নিশ্চিত করতে তহবিল গঠনের বিধান রাখার প্রস্তাব আছে। এর আওতায় আইনের অধীনে আদায় করা রাজস্বের দশমিক ৫০ শতাংশ বরাদ্দ ‘পুরস্কার ও কর্মদক্ষতা প্রণোদনা প্রদানযোগ্য অর্থের জন্য তহবিল’ নামে একটি বিশেষ তহবিল রাখা হয়েছে।

অবশ্য কর্মকর্তাদের পুরস্কারের বিধান রাখা হলেও ব্যবসায়ীদের হয়রানি ও অসাধু কাজে জড়িতদের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়নি। উল্টো দায়মুক্তির বিধান রাখা হয়েছে। আইনে ‘সরল বিশ্বাসে কৃত কাজকর্ম রক্ষণ’ নামে ১২৯(ক) ধারা যুক্ত করা হয়েছে।

এ ধারায় কর্মকর্তাদের দায়মুক্তি দিয়ে বলা হয়েছে, ভ্যাট আইনের অধীনে কোনো কর্মকর্তার কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা বা অন্য কোনো আইনগত কার্যধারা দায়ের বা রুজু করা যাবে না।

যুগান্তর

Next Post

Actress lobbies against new California vaccination bill, draws ire love again

বৃহস্পতি জুন ১৩ , ২০১৯
seeing how our clients and our featured partners are using the new publishing tools at their disposal. Not convinced that the new WordPress editor is powerful enough for enterprise clients? Think again!

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links