আভা ডেস্কঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া ৬টি বাসের ছাদে এখন লতাপাতা আর ধূলোবালির আস্তরণ। নেই জানালার কাচ, উলট-পালট ভেতরের সিট, নষ্ট চাকার টায়ার।
এমনকি ইঞ্জিনসহ দামি ও গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের কিছুই অবশিষ্ট নেই বাসের বডিতে।
এই ৬টি বাসের মধ্যে ৪টি বাস ‘ভাড়া না উপহার’ এই প্রশ্নটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বুঝতে ও বিআরটিসি’র বুঝাতে ব্যর্থ হওয়ায় বাসগুলোর এমন পরিণতি।
উভয় পক্ষের এমন অবহেলা আর অজ্ঞতায় সরকারের ক্ষতি হতে চলেছে প্রায় তিন কোটি টাকা!
এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বকেয়াই পড়ে আছে দেড় কোটি টাকা। এই টাকা পরিশোধ না করে আলোচনায় সমাধানের তাগিদ দিয়েছে সিন্ডিকেট।
অন্যদিকে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে দেড় কোটি টাকাসম মূল্যের চারটি বাস। এই চারটি বাসের এমন বেহাল অবস্থা যে, কেজি দরে লোহা-লক্কড়ে বিক্রি ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই বলেই মন্তব্য করেছেন পরিবহন অফিস সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুইটি বাস উপহার দেন।
এর কিছুদিন পর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ‘প্রধানমন্ত্রীর উপাহার’ লেখা সম্বলিত আরো ৪টি বাস জাবির পরিবহন পুলে প্রেরণ করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি- এই ৬টি বাসই উপহার স্বরূপ প্রধানমন্ত্রী তাদের উপাহার দিয়েছেন।
কিন্তু এর কিছুদিন না যেতেই ৪ জুলাই পরে পাঠানো ৪টি বাসের ভাড়া দাবি করে বিআরটিসি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বাসগুলো উপহার দাবি করে ভাড়া পরিশোধের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে বিআরটিসিকে চিঠি পাঠায়। কিন্তু এই চিঠির কোন সদুত্তর না দিয়ে পরবর্তীতে আবারো ভাড়ার তাগিদ দিয়ে চিঠি দেয় বিআরটিসি।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই মোট এক কোটি ৪৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা বকেয়া চেয়ে চিঠি পাঠায় বিআরটিসি। বাসগুলো পরিবহন পুলে প্রেরণের পর বিআরটিসি দিনপ্রতি একটি বাসের ভাড়া ধরে ১৪০০ টাকা। এই হিসেবে ২০১৯ পর্যন্ত ভাড়ার ধরা হলে আরো ২৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বকেয়া বাড়বে।
চিঠি চালাচালির ৮ বছর পর ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর সিন্ডিকেটের এক সভায় এ বিষয়টি উপস্থাপিত হয়। টাকা পরিশোধ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিআরটিসির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে টাকার হিসাব-নিকাশ সমাধান করার কথা বলে সিন্ডিকেট।
এর আগে একই বছর ৫ নভেম্বর বাসগুলোর ভাড়া দাবি করা- ‘মিরপুর দ্বি-তলা বাস ডিপো-বিআরটিসিকে এই চারটি বাস নষ্ট হয়েছে বলে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন জাবির পরিবহন অফিস।
কিন্তু বিআরটিসি এর কোন উত্তর কিংবা বাসগুলোর ব্যাপারে কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করেনি।
জাবির পরিবহন পুলে যুক্ত হওয়া যে কোন বাসের ব্যবহারের বয়স ৬/৭ বছর না হওয়া পর্যন্ত বেচা নিষিদ্ধ হওয়ায় এই বাসগুলো অকেজো হলেও বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
তবে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই বাসগুলোতে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু বিআরটিসি ভাড়া দাবি করা ৪টি বাসের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন সিন্ধান্ত নিতে পারেনি। ফলে এই বাসগুলো অকেজো হয়েই ধস্ত-বিধস্ত অবস্থায় পড়ে আছে রাস্তার ধারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, যখন এই ৫২ আসন বিশিষ্ট ‘চায়না ডেলিগেটেড সিএনজি’ বাসগুলো উপহার দেয়া হয়েছিল তখন একেকটি বাসের দাম ছিল প্রায় ৩২-৩৫ লাখ টাকা।
৩২ লাখ টাকা ধরলেও সেই হিসেবে চারটি বাসের মূল্য দাঁড়ায় এক কোটি ২৮ লাখ টাকা। বাস গুলো অকেজো হওয়ায় এই মূল্যের তেমন কিছুই অবশিষ্ট নেই বলেও জানান এই কর্মকর্তা। এছাড়া গাড়ির মূল্যবান ও ব্যবহার যোগ্য যন্ত্রাংশগুলোও চুরি হয়ে গেছে।
অর্থাৎ গাড়ির মূল্য ও বাসের ভাড়া হিসাব করলে প্রায় তিন কোটি টাকা হয়। যদি বিআরটিসি ও জাবির মধ্যে টাকার লেনদেন না হয়ে শুধু সমঝোতা হয় তবে এই খাতে সরকারের ক্ষতি হবে প্রায় তিন কোটি টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) রহিমা কানিজ বলেন, ‘এই বাসগুলো আমাদের উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিআরটিসি পরে ভাড়া দাবি করে চিঠি পাঠায়। আমরাও আমাদের বিষয়টি পরিষ্কার জানিয়েছি দিয়েছিলাম। আর এখন এতো টাকা দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। এ বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের আলোচনা সাপেক্ষে একটা যৌক্তিক সমাধান হতে পারে। ‘
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) মিরপুর অফিসে যোগাযোগ করা হলে কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
অপরদিকে বিআরটিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ এহছানে এলাহীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পরে মিরপুর দ্বি-তলা বাস ডিপো-বিআরটিসি’র ম্যানেজারকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কথা বলতে হলে হিসাব দেখতে হবে। হিসাব দেখে পরে কথা বলব।
যুগান্তর