পুলিশ কে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টায় এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।

আভা ডেস্কঃ রাজধানীর মালিবাগে রোববার পুলিশের গাড়িতে বিস্ফোরণ এবং এক মাস আগে গুলিস্তানে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় একই চক্র জড়িত- এমনটি মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, পুলিশকে টার্গেট করার পাশাপাশি দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি চক্র এর নেপথ্যে কাজ করছে।

দুটি ঘটনার ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) কথিত দায় স্বীকার করেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপে টুইটারে দাবি করেছে। তবে এখন পর্যন্ত আইএস’র কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায়নি পুলিশ। এর পেছনে কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীও থাকতে পারে। মালিবাগের ঘটনার পর সোমবার সারা দেশের পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

পুলিশ সদর দফতর, পুলিশের জঙ্গি দমন ইউনিট এবং মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে মালিবাগের বিস্ফোরণে পুলিশের এএসআই রাশেদা আক্তার, রিকশাচালক লাল মিয়াসহ তিনজন আহত হওয়ার ঘটনায় রোববার রাতে পল্টন থানায় পুলিশের বিশেষ শাখার পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িটির চালক কনস্টেবল শফিক চৌধুরী। বিস্ফোরক ও সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

এদিকে সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাল মিয়াকে দেখতে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘মালিবাগ মোড়ে বিস্ফোরিত ককটেলটি পুলিশ ভ্যানের পেছনে আগে থেকেই রাখা ছিল। বিস্ফোরিত ককটেলটি বেশ শক্তিশালী ছিল।’

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টায় এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এর আগে গুলিস্তানে ট্রাফিক বক্সে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজন পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়েছিলেন। মেরে ফেলার উদ্দেশ্য থাকলে বিস্ফোরণটা আরও ভয়াবহতা হতে পারত। পুলিশ বক্স বা গাড়িতে হামলা করে পুলিশের মনোবল দুর্বল করে দেয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড দিয়ে পুলিশের মনোবল ভেঙে দেয়া যায় না। মনে হচ্ছে, কোনো স্বার্থান্বেষী মহল বা কোনো গোষ্ঠী এ ঘটনা ঘটিয়ে জনমনে ভীতি সঞ্চার করছে। গোষ্ঠী কারা, তা তদন্ত করে বের করতে হবে।

হামলায় জঙ্গিরা জড়িত কি না- জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, সেটা এ মুহূর্তে বলা যাবে না। কারণ জঙ্গিরাই যে দেশের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি চায়, এমনটা নয়। দেশীয় রাজনীতিতে একটি কর্নার সবসময় চেয়েছে এ দেশের নৈরাজ্য পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বোমা-সন্ত্রাস চালানো হয়েছিল। দেশের মানুষ জানে, কারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। দেশের একশ্রেণীর মানুষ বিদেশে থেকে দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। এখানে তাদেরও ইন্ধন আছে কি না খতিয়ে দেখতে হবে।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, এপ্রিলের শেষের দিকে গুলিস্তানে হাতবোমা বিস্ফোরণ এবং মালিবাগের বিস্ফোরণে একই গোষ্ঠী জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুটি হামলার ধরন প্রায় একই বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে। দুটি বিস্ফোরণেই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, পুলিশকে টার্গেট করে আগে থেকেই কোনো গোষ্ঠী হাতবোমা রেখে গিয়েছিল।

মালিবাগের ঘটনাটি ঘটেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সদর দফতরের কাছে। যে গাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছে, এসবি সদস্যদের খাবার আনা-নেয়া করা হয়। এ থেকে এটা সহজেই বোঝা যায়, একটি চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। পুলিশকে টার্গেট করে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করছে। এর পেছনে কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী, নাকি অন্য কোনো চক্র জড়িত রয়েছে- এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আইএস’র দায় স্বীকার সম্পর্কে সিটিটিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, দেশে কোনো সন্ত্রাসী হামলা হলেই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপে বলা হয়- আইএস দায় স্বীকার করেছে। আগের ঘটনাগুলোর তদন্ত করে আইএস’র কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। মালিবাগের ঘটনাটিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

সিটিটিসি’র ডিসি মহিবুল ইসলাম খান যুগান্তরকে বলেন, গুলিস্তান ও মালিবাগে বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্ত চলছে। পাশাপাশি আইএস’র কথিত দায় স্বীকারের বিষয়েও আমরা অবগত হয়েছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।

পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা যুগান্তরকে বলেন, মালিবাগে হামলার বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। আইএস’র দায় স্বীকারের বিষয়টিও আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এ ঘটনার সঙ্গে আইএস’র সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

সূত্র জানায়, মালিবাগের ঘটনার পর পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছেন। এর আগে চলতি মাসের শুরুতে ডিএমপির সর্বশেষ অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সব থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সব সদস্যকে দায়িত্ব পালনে সতর্কতা অবলম্বন করতেও বলেছিলেন তিনি। এমনকি চেকপোস্টে ‘অন গার্ডে’ তল্লাশি করার নির্দেশনাও দেন তিনি। মালিবাগে বিস্ফোরণের পর পুলিশ সদস্যদের আবারও সতর্কে থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেয়া হল।

পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা যুগান্তরকে বলেন, মালিবাগে পুলিশের গাড়িতে হামলার বিষয়ে পুলিশ সদর দফতর দৃষ্টি রাখছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিটকে করণীয় বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের সব ইউনিটকে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে বড় ধরনের হামলা করার সক্ষমতা জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেই। ধারাবাহিক অভিযানে দুর্ধর্ষ অনেক জঙ্গি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে। অনেকে আবার অভিযান চলাকালে নিহত হয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সারা দেশে একের পর এক টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটেছিল। পরে গুলশানের হলি আর্টিজান এবং শোলাকিয়ার ঈদগাহে জঙ্গি হামলা হয়েছিল।

ওই সময়ে পুলিশকে টার্গেট করে একাধিক জঙ্গি হামলার ঘটনাও ঘটেছিল। এসব ঘটনার নেপথ্যে ছিল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির নব্যধারা (নব্য জেএমবি)। অপরদিকে ব্লগার, সমকামী, লেখক, প্রকাশক এবং মুক্তমনাদের টার্গেট করে হত্যার নেপথ্যে ছিল আনসার আল ইসলাম (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-এবিটি)। দুটি সংগঠনের শীর্ষ অনেক নেতা নিহত ও গ্রেফতার হওয়ায় তারা সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বড় হামলা করার সক্ষমতা তাদের না থাকলেও তারা নিঃশেষ হয়ে যায়নি।

যুগান্তর

Next Post

নওগাঁর রাণীনগরে ৫ বছর বয়সি এক কন্যা শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গল মে ২৮ , ২০১৯
আভা ডেস্কঃ নওগাঁর রাণীনগরে ৫ বছর বয়সি এক কন্যা শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে এক প্রতিবেশির বাড়ী-ঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে গ্রামের উত্তেজিত জনতা। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার কুজাইল হিন্দুপাড়া গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয় ও শিশুর পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে কুজাইল হিন্দুপাড়া গ্রামের মৃত খগেন্দ্রনাথের ছেলে ডাব্লু (২৮) একই […]

এই রকম আরও খবর

শিরোনাম

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links