এই ড্রোন, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারে।

ava desk :সদ্য পদোন্নতি পাওয়া স্কোয়াড্রন লিডার অনির্বাণ (আসল নাম নয়) ১৬ জুলাইয়ের ফার্নবরো এয়ার শো দেখলে আনন্দিত ও শঙ্কিত হবেন। এবারের ফার্নবরো শোয়ের মূল আকর্ষণ এফ-৩৫। আধুনিক উড়ুক্কু প্রযুক্তির এক সমাহার এই এফ-৩৫ বানাতে যে গবেষণা, সেখানে খরচা গেছে ৫০ বিলিয়ন ডলার। ১০টি দেশের অর্থায়নে গবেষণায় কাজ করেছে লকহিড মার্টিন। প্রতিটি এফ-৩৫ লাইটনিং যুদ্ধবিমান তৈরিতে খরচ পড়বে ১০০ মিলিয়ন ডলার। মাত্র!

ফার্নবরো এয়ার শোর দর্শক কিংবা সামরিক বাহিনীর সদস্য, তাঁদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, এরপরে কী?

এফ-৩৫-এর পরের চমক দেখার জন্য আমাদের যেতে হবে ফার্নবরো থেকে আরও ৪০০ কিলোমিটার উত্তরে। ল্যাংকাশায়ারের কাছে প্রেস্টন শহরে। সেখানে ইংল্যান্ডের বৃহত্তম ডিফেন্স কনট্রাকটর বিএই সিস্টেমসের হ্যাঙ্গার ৩১ বিল্ডিংয়ে বসে আছে তারানিস নামের স্বয়ংক্রিয় ড্রোন। ড্রোনের নাম হয়েছে কেল্টিক বজ্রদেবের নামে।

তারানিস দেখলে বিজ্ঞান কল্পকাহিনিকেই সত্য মনে হওয়া শুরু হবে। এই ড্রোন, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারে। উড্ডয়ন, লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা, শেষে আবার হ্যাঙ্গারে অবতরণ—সবই নিজে থেকেই করতে পারবে তারানিস। তবে প্রথাগত নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও আছে। এটুকু পড়েই যারা টার্মিনেটর ফ্রাঞ্চাইজির স্কাইনেটের ভয় পাচ্ছিলেন, তাঁদের দিলে পানি আসবে। হোম বেইজে তারানিসের দায়িত্বে থাকতে পারবেন একজন মানুষ পাইলট।

ড্রোনের রমরমা বাজারে তাই নিজের চাকরি হারানোর ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই পাইলটদের। দিনের শেষে ড্রোনের মস্তিষ্ক একটি কম্পিউটার বৈ আর কিছুই নয়। প্রচুর তথ্য নিজের হার্ডডিস্কে জমা রেখে, প্রয়োজনমতো পাইলটের হেডসআপ ডিসপ্লেতে সেগুলো সরবরাহ করে। সেসব দেখেই নভোসমরের সব সিদ্ধান্ত নিতে পারেন একজন পাইলট। যন্ত্র যতই দ্রুত হিসাব করতে পারুক, দেখেশুনে সেই হিসাবের ফল দিয়ে কী করবে, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে একমাত্র মানুষ।

এ ছাড়া নগদ নারায়ণের বিষয়ও আছে। তারানিসের যে প্রযুক্তি, সেখানে পাইলটের ব্যবস্থা করতে গেলে তারানিসের আকার বেড়ে হবে দ্বিগুণ। খরচও বাড়বে। অন্যদিকে, ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার মাধ্যমে একজন পাইলট একাধিক ড্রোন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। বিএইর হেড অব এয়ার স্ট্র্যাটেজি মাইকেল ক্রিস্টি মনে করেন, এভাবেই নতুন যুগের এয়ার স্কোয়াড্রন তৈরি হবে। একজন মানুষ পাইলট ও তাঁর যুদ্ধবিমান, সঙ্গে ড্রোন বাহিনী।

ড্রোন স্কোয়াড্রনের ধারণা নিয়ে বিভিন্ন দেশেই চলছে গবেষণা। আমেরিকার লকহিড মার্টিন কিছুদিন আগে একএফ-১৬ বিমানকে পাইলটহীন ড্রোনে রূপান্তর করেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অ্যান্টিকলিশন-প্রযুক্তিই। টেস্ট রেঞ্জে আরেক পাইলটচালিত বিমানের সঙ্গে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনে নিজের বেইজে ফিরেও এসেছে ড্রোন এফ-১৬। কম্ব্যাট ড্রোন গবেষণায় পিছিয়ে নেই চীনও। ডার্ক সোর্ড নামে একটি ড্রোন তৈরি করার চেষ্টা করছে তারা। এই এফ-১৬ ড্রোনের মতোই অন্য পাইলটের সঙ্গে সমন্বয় করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

নতুন পৃথিবীর আকাশযুদ্ধ ধীরে ধীরে ড্রোন স্কোয়াড্রনের দিকে এগোচ্ছে। তবে তার জন্য দরকার প্রচুর প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। কিছু প্রযুক্তি অবশ্য এফ-৩৫-এ সংযোজিত আছে। এই এফ-৩৫ একটা অতলান্তিক ইনফরমেশন সিস্টেম। যে পরিমাণ তথ্য সে পাইলটের হেলমেটের হেডস আপ ডিসপ্লেতে সরবরাহ করতে পারে, অতখানি তথ্য সামলানো মানুষের পক্ষে অসম্ভব।

এফ-৩৫ শুধু প্রয়োজনীয় তথ্যই দেয় তার পাইলটকে। পাইলট সে তথ্য দেখার জন্য ককপিটের টাচস্ক্রিন আর হেলমেটের ডিসপ্লের সাহায্য নিয়ে থাকেন। আবার বিমানের গঠনেও যুক্ত করা হয়েছে ক্যামেরা। সেই ক্যামেরা দিয়ে আশপাশে নজরদারিও করতে পারবেন পাইলট। এরপর যদি যুদ্ধবিমানের উন্নতি করতেই হয়, সেটা বিমানের থেকে বেশি করে করতে হবে পাইলটের হেলমেটে।

এত সব তথ্য স্কোয়াড্রনের অন্য ড্রোনের কাছেও পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারে এফ-৩৫। কোনো সুরক্ষিত অবস্থানে নিজে হামলা না করে এফ-৩৫ স্কোয়াড্রন লিডার তার অনুসারী ড্রোন দিয়ে আক্রমণ পরিচালনা করতে পারেন। স্রেফ প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠিয়ে দেবেন। ড্রোনের কমব্যাট এলগরিদম বাকি কাজ সারবে। তবে ধীরে ধীরে এই স্কোয়াড্রন লিডার আর ড্রোনের এই যোগাযোগ আরও উন্নত হবে। কোনো কাজের নির্দেশ দেওয়া থেকে শুরু করে এলাকা প্রদক্ষিণের মতো আদেশও দেওয়া যাবে ড্রোনগুলোকে। অবশ্য সেটা যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন করেই।

এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে বেসামরিক বিমানেও। তবে এয়ারলাইনের বসেরা মনে করেন, মানুষ পাইলট না থাকলে তাদের পরিবহনে চড়ে ঠিক স্বস্তি পাবে না যাত্রীরা। তাই তাঁরা চান যাত্রীবাহী বিমানে এখনো থাকুক মানুষ পাইলট। তবে এখানে কথা থাকে। প্রযুক্তির উন্নয়নে, ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার, রেডিও অপারেটর, নেভিগেটর এই কাজগুলো এখন অপ্রাসঙ্গিক। একই ঘটনা ঘটতে পারে কো-পাইলটের ক্ষেত্রেও। এয়ারবাসে কো-পাইলট মাটিতে থেকেই চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন বিমান। একদল দক্ষ পাইলটের হাতে চলবে পুরো যাত্রীবাহী বিমানের যাতায়াত। তবে যাত্রীরা কতখানি স্বস্তিতে থাকবেন, সেটা দেখার বিষয়।

jugantor

Next Post

গোদাগাড়ীতে বিভিন্ন বিষয়ে মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোম জুলাই ৯ , ২০১৮
গোদাগাড়ী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে আইন শৃংখলা, সন্ত্রাস-নাশকতা, মাদক, যৌতুক নিরোধ, বাল্যবিবাহসহ বিভিন্ন বিষয়ে মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শিমুল আকতারের সভাপতিত্বে এ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সভার উপদেষ্টা মো. ইসহাক। সভায় উপস্থিত সদস্যরা বক্তৃতায় বর্তমান সরকারের মাদক বিরোধী অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links