নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আমের শহর রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ । এবার আম চাষীদের নানা সমস্যায় পড়তে হতে পারে বলে আশস্কা করছে চাষিরা । আম পচনশীল বস্তু হওয়ায় এবার করোনা দুর্যোগকালে সেই সমস্যা আরো জটিল হতে পারে বলে ধারণা করছে অধিকাংশ আম চাষী । আমের ন্যায্য দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা। এ অবস্থায় আমের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবি করছেন আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, বড় বড় জুস কম্পানিকে নির্ধারিত দামে বাজার থেকে আম কেনার ব্যবস্থা নিতে হবে।
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের আম চাষিরা বলছেন, ২০১৮ সালে রোজার মধ্যে অধিকাংশ জাতের আম পাকতে শুরু করায় গাছেই নষ্ট হয় শত শত টন আম। বাজারে দাম না পেয়ে হতাশ চাষিরা গাছ থেকে আম না পাড়ায় বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। সেবার আমের উৎপাদনও হয়েছিল রেকর্ড পরিমাণ। কিন্তু এবার আম পাড়ার সময় আবার রোজাও থাকছে না, আমের ফলন কম হবে, এর পরও ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা তৈরি করেছে করোনা পরিস্থিতি।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার আম চাষি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা আতঙ্কে যদি বাজারে মানুষ নামতে না পারে, তাহলে পাইকাররাও আসতে পারবেন না। তখন আমের বাজার একেবারেই পড়ে যাবে। এবার শুরুতেই আমের বাজার খারাপ। এর ওপর আমের ফলনও ভালো হয়নি। ‘পাইকাররা বাজারে নামতে না পারলে আমরা বড় ক্ষতির মুখে পড়ব। পাইকারদের যেকোনো উপায়ে বাজারে আসতে দিতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এর আগে যখনই কোনো সংকট তৈরি হয়েছে তখন বড় বড় আমের পাইকার (জুস কম্পানি, আচার কম্পানি) আমের ন্যায্য দাম দেয়নি, বরং চাষিদের জিম্মি করে স্বল্প দামে আম কিনেছে। এই অবস্থায় আমের দাম বেঁধে দিয়ে তাদের বাজারে নামতে বাধ্য করতে হবে।’
বাঘা আম চাষি জয়নাল বলেন, ‘চাষিদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার যদি আমের দাম নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে আমাদের উপকার হবে। না হলে এবার আমের ন্যায্য দাম না পাওয়ার ব্যাপক শঙ্কা রয়েছে।’
তিনি বলেন, গুটিজাতের আম এখন রাজশাহীতে বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মণ। সেই আম ঢাকায় পাঠিয়ে দাম পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। ফলে ঢাকায়ও আমের বাজার এবার অনেক কম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আম চাষিরা বলেন, আমের উৎপাদন খরচ হিসাব করে দাম নির্ধারণ করলে চাষিদের কিছুটা লাভ হতে পারে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ অধিকাংশ আম চাষী বলেন, ধান কাটা ও সংগ্রহে সরকার যেভাবে কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিন ভর্তুকিতে দিচ্ছে, সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত আম চাষি ও বাগান মালিকদেরও ভর্তুকি দেওয়া উচিত। দাম নির্ধারণ করে দিলে আম কেনার নিশ্চয়তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। পাইকাররা না কিনলে সরকারের দাম নির্ধারণের পর চাষিরা পড়বেন আরো বিপাকে। কারণ আম অত্যন্ত স্পর্শকাতর (সেনসিটিভ) ফল। বাজারজাত করতে নানা জটিলতাসহ মিজ পোকার আক্রমণ, খরা ও অতিবৃষ্টি, ঝড়, শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয় আমের।
রাজশাহীতে এবার ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৩৯ হাজার ৭৮ মেট্রিক টন। এটি রেকর্ড লক্ষ্যমাত্রা হলেও চাষিরা বলছেন, এবার গতবারের চেয়ে উৎপাদন অনেকটা কম হবে। গত বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল দুই লাখ ১৩ হাজার ৪২৬ মেট্রিক টন। সেখানে আম উৎপাদিত হয় দুই লাখ ৩৯ হাজার ৭৮ মেট্রিক টন। ফলে গত বছরের অর্জনটিকেই এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। আম আবাদ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে। তবে এ জেলায় মুকুল আসার সময় অকালবৃষ্টি হওয়ায় ফলন অনেক কমে যাওয়ার কথা বলছেন চাষিরা।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল আলীম বলেন, ‘হেক্টরপ্রতি গড়ে ১৫ দশমিক ৫৮ মেট্রিক টন হারে আম উৎপাদিত হবে বলে এবারও আশা করা হচ্ছে। সেই হিসাবে এবার আমের উৎপাদন গতবারের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। তবে এবার অফ সিজন। সে ক্ষেত্রে ফলন কিছুটা কম হতে পারে।’