আভা ডেস্ক : নিজ নিজ এলাকায় কাজ করে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের সেবা আমাদের দায়িত্ব। আমরা নিজেদের জনগণের সেবক মনে করি এবং সেভাবেই কাজ করি।’
বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তেজগাঁওয়ের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভোট দিয়ে জনগণ আপনাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন। আপনাদের অনুরোধ করব মানুষের সেবা করুন।’
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার সব এলাকার সমউন্নয়নে বিশ্বাসী। কাজেই দলমত নির্বিশেষে যারাই নির্বাচিত হয়েছেন আপনারা এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে পারবেন। আমরা পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে সে সুযোগ সৃষ্টি করেছি।’
সরকারের বিভিন্ন সফলতার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। এখন জনগণের ঘরে ঘরে এই উন্নয়নের সুফলকে পৌঁছে দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘দেশকে ক্ষুধামুক্ত করেছি। এখনও দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারিনি। এই দেশকে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত করে গড়ে তুলব। ইনশাল্লাহ ২০২১ সালে বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করব।’
অনুষ্ঠানে নতুন মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমকে শপথবাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর কাউন্সিলরগণের শপথবাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব জাফর আহমেদ খান। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং গাজীপুরের রাজনৈতিক নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত মেয়র এবং ৭০ কমিশনার এদিন শপথ গ্রহণ করেন। হাইকোর্টের নির্দেশে কাউন্সিলরদের ৬টি আসনের নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। ২৬ জুন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মিসরের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ : বাংলাদেশে মিসরের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ওয়াহিদ আহমেদ শামসেলদিন এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তাদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। রোহিঙ্গা প্রসঙ্গও আলোচনায় উঠে আসে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানবিক কারণে আমরা মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। এখন চাচ্ছি তারা নিজেদের দেশে ফিরে যাক।’
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে মিয়ানমার এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। কিন্তু মিয়ানমার চুক্তি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য একটি জায়গা তৈরি করছি যেখানে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা একটু ভালো পরিবেশে বাঁচার সুযোগ পাবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ মিসরের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্Ÿোচ্চ গুরুত্ব দেয়। কারণ স্বাধীনতা লাভের পর আরব দেশগুলোর মধ্যে মিসরই সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ১৯৭৪ সালের নভেম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম ঐতিহাসিক মিসর সফরের প্রসঙ্গ স্মরণ করে বলেন, ‘সেই সফরেই দুই দেশের সম্পর্কের ভিত রচনা হয়েছিল।’ মিসরের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং সহযোগিতাকে আরও বৃদ্ধির জন্য আমি কাজ করে যাব।’ তিনি জানান, মিসর বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী এবং বাংলাদেশের একটি বৈদ্যুতিক তার কারখানা প্রতিষ্ঠায় প্রস্তুত আছে। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর সন্ত্রাস এবং মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধেরও প্রশংসা করেন। মিসরের রাষ্ট্রদূত দুই দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধনকে জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে মিসরের বিনিয়োগকে স্বাগত জানান এবং বলেন, ‘সরকার এজন্য দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’ তিনি রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালে সব রকমের সাহায্য এবং সহযোগিতার বিষয়ে আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
যুগান্তর