আভা ডেস্কঃ ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের তারিখ পেছানোর দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯ জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
এদের মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কয়েকজনকে অনশনস্থলে স্যালাইন দিয়ে কিছুটা সুস্থ করে তোলা হয়েছে।
তবু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অসুস্থ শরীর নিয়েও অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
তীব্র শীত ও না খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া এসব শিক্ষার্থী হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) উৎপল বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) কাজল দাস, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগের অপূর্ব চক্রবর্তী, সয়েল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের অর্ক সাহা, টুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সবুজ কুমার, সয়েল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের জয়ন্ত বণিক, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের সুকেশ দেবনাথ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের রবিউল আওয়াল রবি, সয়েল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের ভবতোষ চন্দ্র রায়।
গতকাল শুক্রবার বিকালের দিকে ৯ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এদিন তাদের অসুস্থতার কথা শুনে অনশনস্থলে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে নির্বাচন পেছানোর অনুরোধ জানান তিনি। ঢাবি ভিসি বলেন, ‘৩০ তারিখ নির্বাচনের তারিখ ঠিক করার বিষয়টি মূল্যবোধ বা কোনো চেতনার পরিপন্থী। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের আগেই ভাবা উচিত ছিল। সনাতন ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজার দিন নির্বাচনের মতো এত বড় আয়োজনের তারিখ কীভাবে ঠিক করা হয় তা আমাদের বোধগম্য নয়। বিশেষ করে আবহমান কাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সরস্বতী পূজার আবেদন গভীরভাবে অনুভূত হয়।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘যদি আদালতের কোনো ঝামেলা না থাকে, তবে অসাম্প্রদায়িক চেতনার দিকটি বিবেচনা করে আর কালবিলম্ব না করে নির্বাচন কমিশনের এই তারিখটি পরিবর্তন করা উচিত। যেন এসব শিক্ষার্থী তাদের অনশন ভাঙতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে প্রচণ্ড শীতের কারণে দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। শনিবার সকালে অনশনস্থলে চিকিৎসকরা এসে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। এতে তারা কিছুটা সুস্থবোধ করেন।
এ বিষয়ে অনশনে অংশ নেয়া আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী জগন্নাথ হল সংসদের ভিপি উৎপল বিশ্বাস বলেছেন, বৃহস্পতিবার থেকে এখানে আমরা অনশন করছি। আমাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, ন্যায্য দাবিতে অনশন করে অসুস্থ হয়ে পড়ছি আমরা অথচ সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের দেখতে আসেননি।
উল্লেখ্য, ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার দুই সিটিতে ভোটের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। পূজার দিনে ভোটের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আমরণ অনশনে বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল- ‘পূজার দিন নির্বাচন মানি না, মানবো না’; ‘৩০ তারিখ নির্বাচন মানি না; আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’; ‘হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই, পূজার দিনে নির্বাচন নাই!’
বৃহস্পতিবার উৎপল দাস বলেছিলেন, ‘সরস্বতী পূজার দিনে নির্বাচন দিয়ে এক ধরনের বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে। এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করবে।’
প্রসঙ্গত ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের তারিখ পেছানোর দাবিতে মঙ্গল ও বুধবার শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। বুধবার নির্বাচন কমিশন ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে তারা শাহবাগে পুলিশি বাধার মুখোমুখি হন। পরে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন তারা। বৃহস্পতিবার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আমরণ অনশনে বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ শিক্ষার্থী।