আভা ডেস্কঃ ভারতে ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ২৫ এপ্রিল থেকে দুই দেশের মধ্যেকার সব ইমিগ্রেশন পথ বন্ধ রয়েছে। আকস্মিক এই বন্ধের কারণে দুই দেশেই আটকে পড়েছে ভারত-বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ। এ কারণে অবৈধভাবে বিভিন্ন সীমান্তপথে অনুপ্রবেশের আশঙ্কাও বেড়েছে। বিশেষ করে ভারত থেকে যাতে কোনোভাবেই কেউ অবৈধভাবে রাজশাহী তথা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সীমান্তপথে বাংলাদেশে ঢুকতে না-পারে, সেজন্য সীমান্তে কঠোর নজরদারি ও টহল বাড়িয়েছে বিজিবি। বিশেষ করে স্থল ও নদীবেষ্টিত রাজশাহী অঞ্চলের বিস্তীর্ণ সীমান্তপথে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিজিবি।
বিজিবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্তে অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বেশ কয়েকজনকে আটকের ঘটনা ঘটেছে। ভারতে বিধ্বংসী করোনার ছোবল থেকে বাঁচতে অনেকেই অবৈধ পথে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে। রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ সীমান্তপথেও ভারত থেকে বাংলাদেশে অথবা বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলাচল করতে পারে-এমন আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে রাজশাহী অঞ্চলের সীমান্ত এলাকাগুলোয় বিজিবিকে অতি সজাগ ও সার্বক্ষণিক সতর্কাবস্থায় থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিজিবি রাজশাহী অঞ্চলের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান শুক্রবার দুপুরে যুগান্তরকে বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে রাজশাহী অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৪শ কিলোমিটার সীমান্তপথ বেশ বিচিত্র। এ অঞ্চলে দুর্গম নদী সীমান্তও আছে শতাধিক কিলোমিটার। বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে কখনো কখনো এসব সীমান্তে অবৈধভাবে চলাচলের ঘটনা ঘটে। ভারতে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কেউ অবৈধভাবে প্রবেশ করলে বাংলাদেশ আরও ঝুঁকিতে পড়বে। ফলে সীমান্তে অনুপ্রবেশ বন্ধে বিজিবির টহল দ্বিগুণ ও নজরদারি আরও কঠোর করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সীমান্তের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম জেলার সঙ্গে ভারতের বিস্তীর্ণ সীমান্ত রয়েছে। এসব সীমান্তপথে বাংলাদেশিরা যেমন গবাদি পশু আনতে অবৈধ পথে ভারতে যাতায়াত করে, তেমনি ভারতীয়রা মাদকের চালান পৌঁছে দিতে বাংলাদেশের ভেতরেও ঢুকে পড়ে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, বিজিবির কঠোর নজরদারির কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় রাজশাহীসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সীমান্তপথে অনুপ্রবেশ ও নাগরিক চলাচল কমে এলেও তা এখনো শুন্যে নেমে আসেনি। ফলে মাঝে মাঝেই সীমান্তে অনুপ্রবেশ ও লোক চলাচলের ঘটনা ঘটে। কখনো কখনো বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিকের হতাহতের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেখা যায়। বিজিবি এসব কারণে সীমান্তে কঠোর নজরদারি করে থাকে। কিন্তু ভারতে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে যাতে একজন মানুষও সীমান্তের এপার-ওপার হতে না-পারে, সে ব্যাপারে বিজিবি সার্বক্ষণিক টহল পরিচালনা করছে। সরকারের উপর মহল থেকেও সীমান্ত নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহীর মাঝারদিয়াড়, খরচাকা, মধ্যচর, গোদাগাড়ী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরবাগডাঙ্গা ও পোলাডাঙ্গা সীমান্তের কয়েকজন কৃষক জানান, এসব এলাকায় দুই দেশের নাগরিকরা একত্রে চাষাবাদ করেন। সীমান্তের অধিকাংশ এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া না-থাকায় এপার-ওপারের বাসিন্দারা যাতায়াত করতেন। কিন্তু ভারতে ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির খবর আসার পর তারা আর সীমান্তে চাষাবাদের কাজে যাচ্ছেন না। বিজিবির পক্ষ থেকে নদী সীমান্ত পথগুলোয়ও চলাচল সীমিত করতে বলা হয়েছে। কোনোভাবেই যাতে কেউ এই সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না-পারে, সেজন্য সীমান্তের গ্রামবাসীকেও সজাগ থাকতে বলেছে বিজিবি। যুগান্তর