আভা ডেস্ক : চট্টগ্রাম বন্দরে চীন থেকে আসা একটি কনটেইনারে কাগজের পরিবর্তে পাওয়া ৪১০ বস্তা বালু ও মাটির রহস্য ১৩ দিনেও উদ্ঘাটন করতে পারেনি চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ বালুর মধ্যে মূল্যবান কোনো খনিজ কিংবা তেজষ্ক্রিয় পদার্থ আছে কিনা জানতে নমুনা কাস্টমস হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সক্ষমতা না থাকায় সেখানে নমুনা পরীক্ষা করা যায়নি। এখন তা ঢাকায় পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এদিকে চালানটির আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা, নিলে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে- সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
১ সেপ্টেম্বর ঢাকার বনানীর প্রগ্রেস ইমপেক্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে চীন থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা একটি ২০ ফুট লম্বা কনটেইনারের কায়িক পরীক্ষা করেন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তারা। আমদানিকারক সাড়ে ১৯ টন ‘ডাবল এ ফোর’ কাগজ আনার ঘোষণা দিলেও তাতে কোনো কাগজ মিলেনি। কগজের পরিবর্তে পাওয়া যায় ৪১০ বস্তা বালু ও মাটি। কনটেইনারটি খুলে হতবাক হয়ে যান কাস্টমস কর্মকর্তারা। কম দামি পণ্য ঘোষণা দিয়ে বেশি দামের পণ্য এনে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার ঘটনা প্রায়ই ধরা পড়ে চট্টগ্রাম বন্দরে। কিন্তু পণ্যের পরিবর্তে মাটি ও বালু পাওয়ার ঘটনা খুব কমই ঘটে। কাগজের চালানের ঘোষিত আমদানি মূল্য ছিল প্রায় ১৩ লাখ টাকা। আমদানিকারক ব্যাংকিং চ্যানেলে ওই টাকা পরিশোধ করেন। এর বিপরীতে শুল্ক বাবদ আরও ৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকাও পরিশোধ করা হয়। কাস্টমস কর্মকর্তারা প্রথমে ঘটনাটিকে অর্থ পাচার বলে সন্দেহ করলেও পরে চালানের নেপথ্যে অন্য কোনো বিষয় আছে কিনা তা জানতে বালু ও মাটির রাসায়নিক পরীক্ষার উদ্যোগ নেন।
৩ সেপ্টেম্বর কনটেইনারটি থেকে সংগৃহীত দুটি নমুনা পাঠানো হয় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারে। ৫ সেপ্টেম্বর কাস্টমস হাউসের সিনিয়র কেমিক্যাল অ্যাসিসটেন্ট মনোয়ারা শিরীন এক চিঠিতে জানান, প্রয়োজনীয় ল্যাব ফ্যাসিলিটিজ না থাকায় সরবরাহকৃত নমুনা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ রিপোর্ট পাওয়ার পর বেকায়দায় পড়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। চালানটির রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় আমদানিকারকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা- সে ব্যাপারে তারা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার নূর উদ্দিন মিলন বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ল্যাব থেকে বলা হয়েছে সক্ষমতা না থাকায় বালু ও মাটির নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তাই সংগৃহীত নমুনা ঢাকায় পাঠিয়ে পরীক্ষা করানোর উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। কাস্টমস কমিশনারের কাছে এ সংক্রান্ত ফাইল পাঠানো হয়েছে। তিনি অনুমতি দিলে বুয়েট, বিসিএসআইআর ও পারমাণবিক শক্তি কমিশনের মধ্যে যে কোনো দুটি প্রতিষ্ঠানের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। রিপোর্ট পাওয়ার পর বুঝা যাবে বালু ও মাটিতে কোনো ধরনের মূল্যবান খনিজ কিংবা তেজষ্ক্রিয় পদার্থ রয়েছে কিনা।’
তিনি বলেন, ‘১১ সেপ্টেম্বর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে শুনানি হয়েছে। এতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছে, তারা চীনের প্রতিষ্ঠানটি থেকে এ প্রথম কাগজের চালানটি আমদানি করেছে। ওই প্রতিষ্ঠান কাগজের পরিবর্তে বালু ও মাটি পাঠিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।’ তিনি আরও বলেন, রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পরই বুঝা যাবে চালানটিতে কোনো ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা।
যুগান্তর