১ বছরে ১২৩০ টি অপরাধের নিষ্পত্তি করেছে আরএমপি সাইবার ক্রাইম ইউনিট

আভা ডেস্কঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের “ স্বপ্নের সোনার বাংলা ” গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষে এগিয়ে যাচ্ছেন। সেই লক্ষে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) পুলিশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশকে উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ হিসেবে গড়ে তোলার কাজ করে চলেছেন। পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আইজিপি এর নানাবিধ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ আরএমপি’র পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন অনন্য ব্যক্তিত্ব, মানবিক, চৌকস এবং চিন্তা ও মননে আধুনিক পুলিশ কর্মকর্তা মোঃ আবু কালাম সিদ্দিক।

পুলিশ কমিশনার আরএমপিতে যোগদানের পরপরই সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময়ের জন্য মিট দ্যা প্রেসের আয়োজন করেন। সেখানে বক্তব্যে তিনি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ এবং পুলিশি সেবা নগরবাসীর দোরগড়ায় পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। মিট দ্যা প্রেসে সাংবাদিকরা ডিজিটাল নিরাপত্তায় সাইবার ক্রাইম ইউনিট গঠনের প্রস্তাবনা দিলে, তিনি প্রযুক্তি নির্ভর ও ইন্টেলিজেন্স ভিত্তিক পুলিশিং সেবা প্রদানের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এরপর তিনি গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ একজন সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ১ জন এস আই, ১জন এএসআই এবং ৩ জন কনস্টেবল অর্থাৎ মোট ৬ জন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত সদস্য নিয়ে আরএমপিতে একটি সম্পূর্ণ পৃথক সাইবার ক্রাইম ইউনিট গঠন করেন। পরবর্তীতে আরও কিছু প্রশিক্ষিত সদস্য যুক্ত হয়ে বর্তমানে ১ জন সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও চৌকস টিম এই ইউনিটে কাজ করছে।

সরাসরি অপারেশনাল টিম হিসেবে ফিল্ডে কাজ না করার কারণে অনেকেই এই ইউনিটের কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত নন। মূলত এই ইউনিট রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল কার্যক্রমে বিশেষ করে সাইবার অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকরন সহ গ্রেফতারে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মেট্রোপলিটন এলাকার সকল ক্লু-বিহিন ঘটনা উদঘাটন, অপরাধী শনাক্তকরন ও গ্রেফতারে সহায়তার কাজ নিয়মিত ভাবে করে যাচ্ছে।

মূলত সাইবার অপরাধ বলতে কি বোঝায়? এক কথায় কোন ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে সংঘটিত অপরাধ ই সাইবার অপরাধ। গত ১ বছরে রাজশাহী মেট্রোপলিটনসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মধ্যে প্রায় ৩৬০টির মত ফেইসবুক সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ এসেছে এই ইউনিটে। উল্লেখযোগ্য ফেইসবুক সংক্রান্ত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে নারীদের বিভিন্ন স্পর্শকাতর ছবি/ভিডিও সোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্লাকমেইল করা, ফেইসবুকে যে কারো ছবি দিয়ে ভুয়া একাউন্ট তৈরি করা, সোসাল মিডিয়ায় বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছেড়ে দিয়ে মানহানি করা, ফেইসবুক একাউন্ট হ্যাকড করা, বিভিন্ন ভুয়া মেসেঞ্জারের মাধ্যমে পর্ণ ছবি ও ভিডিও পাঠানোসহ ফেইসবুকের মাধ্যমে সংঘটিত সকল অপরাধ। ফেইসবুক সংক্রান্ত প্রায় ৩৬০টি অপরাধের মধ্যে ৩৪০টির মত নিষ্পত্তি করেছে আরএমপি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

এরপর আছে বিকাশ, নগদ, রকেটসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস মানি ট্রান্সজেকশন/ ট্রান্সফার সিস্টেমের অপরাধ। বিভিন্ন ভুয়া অফারের মাধ্যমে পিনকোড নিয়ে বিকাশ একাউন্ট হ্যাকড, ভুয়া রেজিষ্ট্রেশন, সংঘবদ্ধ অপরাধীদের বিকাশ, নগদ ও রকেট চক্রের পরিকল্পনামাফিক ফাঁদ সহ অন্যান্য অপরাধ। গত ১ বছরে এই সংক্রান্ত প্রায় ৫০টি’র অভিযোগ এসেছে এবং সব কয়টির নিষ্পত্তি করেছে এই ইউনিট।

ইমো সংক্রান্ত ৩ টি অভিযোগ এসেছে এই ইউনিটে এবং সব কয়টির ই নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত অপরাধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইমো ব্যবহার করে সম্পর্ক স্থাপন ও আর্থিক প্রতারণা মত ঘটনা।

পর্ণগ্রাফি সংক্রান্ত অপরাধের প্রায় ৫০টির মত অভিযোগ এসেছে এই ইউনিটে। এই সংক্রান্ত অপরাধের সব কয়টির অপরাধী শনাক্ত ও গ্রেফতারে ভূমিকা রেখেছে এই ইউনিট। উল্লেখযোগ্য অপরাধ হলো পূর্বে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো কিন্তু বর্তমানে নেই তাই সাবেক প্রেমিক/প্রেমিকাকে হেনস্থা বা ব্লাকমেইল করার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন ছবি/ ভিডিও প্রচার করা।

ই-মেইল সংক্রান্ত ৩টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে ২টি অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে এবং একটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য অপরাধ হলো ই-মেইল হ্যাকড করে বিভিন্ন অপ্রতিকর তথ্য পাঠানো ও ভুয়া বা বেনামে মেইল আইডি খুলে বিভিন্ন অপরাধ করা।

টিকটক/লাইকি সংক্রান্ত মোট ৫টি অভিযোগ এসেছে এবং সবগুলোরই শনাক্ত পূর্বক নিষ্পত্তি করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য অপরাধ হলো বিভিন্ন উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েদের বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত করা।

প্রায় ৩০টির মত অপহরণের অভিযোগ এসেছে এই ইউনিটে এবং প্রত্যেকটি ঘটনার ভিক্টিম উদ্ধারসহ আসামি শনাক্তকরণ ও গ্রেফতারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। উল্লেখযোগ্য অপরাধ হলো অপ্রাপ্ত/অল্প বয়সী মেয়ে/ছেলেদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে অপহরণ করা, বিভিন্ন আর্থিক বিষয়ে অপহরণ করা।

হারানো বা চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল উদ্ধারের মত অনেক সফলতা রয়েছে এই ইউনিটের। গত ১ বছরে প্রায় ৮২০টির মত অভিযোগ/জিডি এসেছে এবং প্রায় ৭৫০টি মোবাইল উদ্ধার করার তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে।

উপরোক্ত বিভিন্ন অপরাধ ছাড়াও মেট্রোপলিটন এলাকার অন্যান্য ক্লু-বিহীন ঘটনা ও সংঘবদ্ধ অপরাধ ও অপরাধী শনাক্ত পূর্বক গ্রেফতারে প্রতিনিয়ত নিরবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে চলছে এই ইউনিট। বিভিন্ন ধরনের অপরাধসহ সর্বমোট প্রায় ১৩২১টির মত অভিযোগ এসেছে এবং ১২৩০টির মত অপরাধ এর নিষ্পত্তি করেছে আরএমপি’র নব্য গঠিত সাইবার ক্রাইম ইউনিট যেখানে সফলতার হার প্রায় ৯৩ শতাংশেরও উপরে।

এছাড়াও আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট বাংলাদেশের সকল ইউনিটের মধ্যে সর্বপ্রথম কিশোরদের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করেছে। যেখানে রাজশাহী মহানগর এলাকার প্রায় ৫০০ জনের মত কিশোরের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া রাজশাহী মহানগর এলাকার প্রায় ৯টির মত কিশোর গ্যাং এর বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রতিদিন আরএমপির প্রত্যেকটি থানার মাধ্যমে ডাটাবেজ এ সংরক্ষিত কিশোরদের তদারকির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশিং সেবার অন্যতম বহুল তথ্য সম্বলিত “” হ্যালো আরএমপি “” এ্যাপস সাইবার ক্রাইম ইউনিট কর্তৃক পরিচালিত হয়। আপনার পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন অভিযোগ ও তথ্য প্রদান করতে পারবেন। এছাড়াও এই এ্যাপস এর মাধ্যমে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সকল তথ্য আপনি অতি সহজেই পাবেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ২২৪টির মত অভিযোগ এই এ্যাপস এর মাধ্যমে পাওয়া গিয়েছে এবং সব গুলো অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

রাজশাহী মহানগর এলাকার সার্বিক আইন শৃংখলা মনিটরিং, বিভিন্ন অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখা রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অপারেশন কন্ট্রোল এন্ড মনিটরিং সেন্টার (সেন্ট্রাল সিসি ক্যামেরা ইউনিট) ও পরিচালিত হয় আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট মাধ্যমে। রাজশাহী মহানগরীর প্রায় ৫০০ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপন পূর্বক পুরো মহানগরীকে নজরদারিতে নিয়ে আসার মত কঠিন কাজও করে যাছে এই ইউনিট। এখন পর্যন্ত প্রায় ২২৭টির মত ঘটনার অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে এই ইউনিট।

সর্বোপরি সাইবার ক্রাইম ইউনিট নিরবে রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকার জঙ্গি ও রাষ্ট্র বিরোধীদের শনাক্তসহ অন্যান্য সকল অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকরন ও গ্রেফতারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে চলছে। এই ইউনিট রাজশাহী মহানগরবাসীর সেবায় সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

Next Post

শাহমখদুম থানা পুলিশের অভিযানে ৭৮ পিচ ফেন্সিডিলসহ আটক-৩

শনি সেপ্টে. ১৮ , ২০২১
আভা ডেস্কঃ রাজশাহী মহানগরীতে ৭৮ বোতল ফেন্সিডিলসহ ৩ চোরাকারবারিকে আটক করেছে আরএমপি’র শাহমখদুম থানা পুলিশ। আটককৃতরা হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার রাজনগর হাঙ্গামী গ্রামের আমিরুলের মেয়ে মোছাঃ মিলিয়ারা বেগম (৩৫), শিয়ালমারা গ্রামের মোঃ দেলশাদের ছেলে মোঃ পলাশ(২২) ও মির্জাপুর মাদ্রাসাপাড়ার মৃত মোহর আলীর ছেলে মোঃ এরফান আলী(৭২)। ঘটনা সূত্রে জানা […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links