আভা ডেস্ক: জাতির ইতিহাসে গভীরতম শোকের মাস আগস্ট। শোক জমতে জমতে শক্ত পাথর হয় যা প্রতিরোধের শক্তি জোগায়। এ কারণে আমরা সবসময় নিদারুণ কষ্ট সয়েও এই শোকের কাছ থেকেই গত তেতাল্লিশ বছর ধরে শক্তি অর্জন করি। আঘাতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য, বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। বাঙালি জাতি শত-সহস বছর ছিল অন্ধকারে। পরাধীনতার শিকলে বাঁধা। শত বঞ্চনা, নিপীড়ন, দাসত্বের যন্ত্রণা নিয়ে কত দীর্ঘ সময় যে জাতির কেটেছে তা ইতিহাস জানে।
এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি দিয়েছেন যিনি, জাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে যার আবির্ভাব তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই মহামানবের জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না, বাঙালি জাতি মুক্তির স্বাদ পেত না। তাঁর নেতৃত্বে স্বাধীনতা শব্দটি স্থান পেয়েছে জাতির জীবনে। তিনি উপনিবেশবাদীদের নানামুখি চক্রান্ত এবং কায়েমি স্বার্থের শক্ত বাঁধন ছিন্ন করে জাতিকে দিয়েছেন একটি স্বাধীন মানচিত্র, স্বাধীন ভাষা, স্বাধীন জাতিসত্তা। আজ বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখার সাহস পায় না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনিবার্যভাবে সমকালীন ও প্রাসঙ্গিক। ইতিহাসের অমোঘ সত্য এই যে, সে নিজেই যথার্থ বীরকে তার বুকে স্থায়ী আসন দেয়। কোনো ষড়যন্ত্র, মিথ্যাচার এবং অপশাসন ইতিহাসের পাতা থেকে এই প্রকৃত বীরের নাম মুছে ফেলতে পারে না। যে কারণে ৭৫-এর ১৫ই আগস্টের পর থেকে প্রায় দুই যুগ শত চেষ্টা করেও মহামানব মুজিবের নাম মুছে ফেলা যায়নি। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি বাঙালির মনে তার স্থান চিরস্থায়ী হয়ে আছে।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক অভিন্ন সত্তা। এ আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। দীর্ঘ একুশটি বছর তিনি তার সংগ্রাম, দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্ব, সততা, সারল্য এবং দূরদৃষ্টি দিয়ে অর্জন করেছিলেন দল-মত নির্বিশেষে সকল বাঙালির ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও আস্থা। প্রকৃত জননেতার সর্বোচ্চ গুণ বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া, বন্ধু হওয়া, দিক-নির্দেশক হওয়া– এসব তিনি পেয়েছিলেন আবহমান বাংলার দর্শন থেকে। যে কারণে তিনি যেমন বাঙালিকে বিশ্বাস করতেন, সাড়ে সাত কোটি বাঙালিও তাঁর হাতে সঁপে দিয়েছিল তাদের ভবিষ্যৎ।
৭০-এর নির্বাচনে তাই দেখি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা তিনি। তাঁর রাজনৈতিক দর্শনে কোনো কপটতা ছিল না, জটিলতা ছিল না। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টে কিছু বাঙালি নরপশুর হাতেই তার জীবনাবসান ঘটে। তাতে কি বাঙালির এই উজ্জ্বলতার সূর্যের প্রখর আলো ম্লান হয়েছে? হয়নি। কারণ আমরা গত ৪৩ বছর যে সংগ্রাম করেছি, যে ত্যাগ স্বীকার করেছি এবং যতটুকু অর্জন করেছি তা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে পাওয়া সাহস ও তাঁর দর্শন বুকে নিয়ে এবং বিপুল শক্তিতে ভর করে। তাই এটা অনিবার্য সত্য যে, অন্তত আমার কাছে আগস্ট শুধু শোকের মাস নয়, শক্তি অর্জনেরও মাস।
ইত্তেফাক