শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পারিশ্রমিক বিলের ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ  রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ২০২১ সালের এস এস সি ও এইচ এস সি পরীক্ষার ব্যবহারিক, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও সনদ যাচাই বাছাইসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে প্রেরনের জন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ৬টি পারিশ্রমিক বিল অভিনব ও সুচতুরতার সাথে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহী’র চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ হাবিবুর রহমান ও ডি.ডি (হিসাব নীরিক্ষা) মোঃ বাদশা হোসেন, কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ হুমায়ন কবীর লালু, সাধারন সম্পাদক মোঃ মাহবুব আলী ও ক্যাশিয়ার মোঃ শফি উদ্দিন এর সহযোগীতায় উক্ত টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

উল্লেখিত বিল সমূহ বন্টনের সুষ্ঠু নীতিমালা না থাকায় চেয়ারম্যান ও ডি.ডি (হিঃনী) তাদের আশীর্বাদ পুষ্ট কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নামে তাদের প্রকৃত প্রাপ্য বিলের অতিরিক্ত বিল প্রদান করে পরবর্তীতে কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারন সম্পাদক ও ক্যাশিয়ারের মাধ্যমে অতিরিক্ত ৪০ লক্ষ টাকা বিল সংগ্রহ করে আত্মসাত করেছেন।

সাধারণ কর্মকর্তা/কর্মচারীরা পূর্ব থেকেই ধারনা করেছিলেন, যে রমজান মাস উপলক্ষে এরকম একটা জালিয়াতি হবে, ভেবেই তারা সকলে সভা করে কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দদের মাধ্যমে চেয়ারম্যান-কে প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিল সমূহ বন্টনের একটি সুষ্ঠু নীতিমালা তৈরি করার জন্য এবং বিল কর্তন করে কোন কর্মকর্তা/কর্মচারীর নামে যেন অতিরিক্ত বিল প্রদান করা না হয়। এ প্রস্তাব পাওয়া মাত্র চেয়ারম্যান ও ডি.ডি (হিঃনী) অত্যন্ত রাগান্বিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে উল্লেখিত বিল সমূহ আটকিয়ে রাখেন এবং বলেন চেয়ারম্যানকে তার মন্ত্রনালয়ে অনেক টাকা দিতে হয়েছে আর ডি.ডি (হিঃনী) এর প্রেষনের মেয়াদ ৩ বছর উত্তির্ণ হওয়ায় বর্ধিত সময়ের জন্য তারও মন্ত্রনালয়ে প্রচুর অর্থ দিতে হবে বলে দু’জনে মিলে ৭০ লক্ষ টাকার অবৈধ চাহিদা কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দকে দেন। সাধারণ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের রমজান মাস ও ঈদের খরচের প্রয়োজনীয়তার দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে অবশেষে কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও ক্যাশিয়ার দর কষাকষি করে উক্ত ৪০ লক্ষ টাকা প্রদান করেন।

উল্লেখ্য, এস এস সি পরীক্ষা – ২০২১ এর ব্যবহারিক কাজের পারিশ্রমিক বিল থেকে ৭,৯৮,৭৭৬ টাকা, এইচ এস সি পরীক্ষা – ২০২১ এর ব্যবহারিক কাজের পারিশ্রমিক বিল থেকে ৭,০৪,৮৭৮ টাকা, এস এস সি পরীক্ষা-২০২১ এর মূল একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট স্বাক্ষর, যাচাই, বাছাই কাজের পারিশ্রমিক বিল থেকে ৩,৯৩,২৩৪ টাকা, এইচ এস সি পরীক্ষা-২০২১ এর মূল একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট স্বাক্ষর, যাচাই, বাছাই কাজের ২০২১ এর সনদপত্র স্বাক্ষর, যাচাই, বাছাই পারিশ্রমিক বিল থেকে ৬,৫৯,৪০০ টাকা, এস সি পরীক্ষার কাজের পারিশ্রমিক বিল থেকে ৬,৯৯,২৮৪ টাকা এবং এইচ এস সি পরীক্ষা-২০২১ এর সনদপত্র স্বাক্ষর, যাচাই, বাছাই কাজের পারিশ্রমিক বিল থেকে ৭,৫৪,০০০ টাকা সর্ব মোট ৬টি বিল থেকে ৪০,০৯,৫৭২ (চল্লিশ লক্ষ নয় হাজার পাঁচশত বায়াত্তর টাকা) টাকা সাধারণ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিল থেকে কর্ত করা হয়।

পরে চেয়ারম্যান ও ডি.ডি (হিঃনী) এর আস্থাভাজন বেশ কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রকৃত প্রাপ্য বিলের অতিরিক্ত বিল দিয়ে কর্মচারী ইউনিয়নের ক্যাশিয়ারের মাধ্যমে সংগ্রহ করে চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ হাবিবুর রহমান ও ডি ডি (হিঃনী) বাদশা হোসেনকে দেয়া হয়।  তবে কর্মচারী ইউনিয়নের অন্যান্য, নেতৃবৃন্দেকে বলতে শোনা যায়, চেয়ারম্যান প্রফেসর হাবিবুর রহমান একাই ২৫ লক্ষ ও ডি ডি বাদশা হোসেন ১০ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। তবে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন, এ অর্থের পরিমান ১ কোটি ত্রিশ লক্ষ টাকা পযর্ন্ত হতে পারে। এছাড়াও বর্তমান চেয়ারম্যান প্রফেসর হাবিবুর রহমান ১ জন প্রাক্তন বিদ্যালয় পরিদর্শক দেবাশীষ রঞ্জন রায় ইন সিটু থাকাকালীন যথাক্রমে বোর্ড থেকে অবৈধভাবে প্রায় ২৫ ও ৩৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ঢাকা এবং পরিচালক রাজশাহী বরাবর বিভিন্ন সুত্র জানালেও তারা নীরব ভূমিকায় আছেন। সুত্র বলছে,  ইতোপূর্বেও শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, সচিব,  দুর্নীতি করলে কিংবা মামলা হলে দূর্নীতি দমন কমিশনের অসাধু কর্মকর্তা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মুক্ত করে দেন। দুদকের ভুমিকা যদি এরকম হয় তাহলে দুদকের প্রতি সাধারণ জনগণ আস্থা হারাবে এবং সারাদেশে দূর্নীতিতে ভরে যাবে।

এ বিষয়ে কথা বলতে রাজশাহী জেলার দুদকের উপ-পরিচালক নাসির উদ্দিনকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন রাজশাহী বিভাগর পরিচালক কামরুল আহসানকে ফোন দিলে তিনি বলেন, সংবাদ বা তথ্য সংক্রান্ত কথা বলতে হলে জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে হবে।

কথা বললে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ডি. ডি বাদশা হোসেন (হিসাব নীরিক্ষা) বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। তিনি বোর্ড চেয়ারম্যান ও সচিবের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

কথা বলতে বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর হাবিবুর রহমানকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Next Post

রাজশাহীতে হ্যাকার চক্রের চার সদস্য আটক

শনি সেপ্টে. ১০ , ২০২২
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীতে হ্যাকার চক্রের চার সদস্যকে আটক করে জেলা পুলিশ। দূর্গাপুর থানা পুলিশের একটি অভিযানে তাদের আটক করা হয়। আটক চারজন ডিজিটাল প্রতারক। তারা অন্য ব্যক্তির ফেসবুক/মেসেঞ্জার হ্যাক করে মূল আইডির পরিচিতজনের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বিকাশে টাকা আদায় করতো। গত ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা শহরের একজন ভূক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links