শিক্ষার্থীর উপর হামলায় অন্তত ৫০ জন আহত।

আভা ডেস্ক: আগের দিনের উত্তাপ সকালে গিয়ে টের পাওয়া যায়নি। ধানমন্ডির জিগাতলা মোড়ে আজ রোববার সকাল ১১টার দিকে কিছু পুলিশ নির্মাণাধীন নতুন একটি ভবনে বসে ছিলেন। পরনে কেবলই ইউনিফর্ম। সামনে ভেস্ট, লেগগার্ড আর হেলমেট রাখা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে গতকাল শনিবারের মতো উত্তাপ না থাকায় অনেকটাই অলস সময় পার করছিলেন তারা। সড়কে গাড়ি চলাচল অন্যান্য দিনের মতোই কম।

বেলা একটার দিকে হঠাৎই বদলে যায় চিত্র।

এ সময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে আরও পুলিশ এসে অবস্থান নেয়। উল্টো দিকে তাকালে দেখা যায় বিজিবি ৪ নম্বর গেটের দিক থেকে বিশাল একটি মিছিল এগোচ্ছে। হঠাৎই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে পুলিশ ও সরকারদলীয়দের দুই ঘণ্টার পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, মারপিট, টিয়ার সেল নিক্ষেপের ঘটনায় ধানমন্ডি থেকে সায়েন্স ল্যাব হয়ে বাটা সিগন্যাল পর্যন্ত এলাকা রণক্ষেত্রে পরিচিত হয়। মুহূর্তে বদলে যাওয়া ধানমন্ডি এলাকায় আহত হয় অর্ধশত ছাত্র, সাংবাদিক। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলনে আজ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে জিগাতলামুখী হয়। এঁদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি ছিল। তাঁদের সঙ্গে ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থীও কিছু ছিল। মিছিল থেকে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেওয়া হয়। দুপুর ১টার সময়ে মিছিলটি জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের মোড় পর্যন্ত এলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। সাঁজোয়া যান নিয়ে ধাওয়া করে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা যে যার মতো ছুটতে থাকে। কেউ কেউ লেকের মধ্যে ঝাঁপ দেয়। পুলিশ সেখানে গিয়েও তাঁদের লাঠিপেটা করে।

ঢাকার জিগাতলায় বিজিবি গেট এলাকায় আজ রোববার হামলার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ধাওয়া খেয়ে অনেক শিক্ষার্থী জিগাতলার ইবনে সিনা হাসপাতালের গলির দিয়ে বিভিন্ন বাসার নিচে আশ্রয় নেয় ও লেক পাড়ের দিকে চলে যায়। সেখান থেকে সাংবাদিকেরা অনেককে বের করে নিয়ে আসেন। তখন এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, মিছিল নিয়ে তাঁরা জিগাতলা মোড় থেকে ইউ টার্ন নিয়ে আবার ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের ওপর চড়াও হয়। লেক পাড়ের দিকে যাঁরা আশ্রয় নিতে যান সেখানে ছাত্রলীগ তাঁদের মারধর করে ধাওয়া দেয়।

জিগাতলায় লাঠিপেটা ও ধাওয়ার পরে ধানমন্ডির বিভিন্ন গলিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করা হয়। ধানমন্ডি ১ নম্বর থেকে মাথায় হেলমেট, মুখে কাপড়, হাতে রড, রাম দা ও লাঠিসোঁটাসহ একদল যুবক পুলিশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিতে থাকে।

বেলা দুটার সময় সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজনকে পেটায় একদল যুবক। শিক্ষার্থী ও সন্দেহজনক কাউকে পেলেই তারা হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ পদচারী সেতুর নিচে দাঁড়িয়ে থাকে।

ঢাকার ধানমন্ডি লেকে আজ রোববার লাঠিপেটা করে পুলিশ। সোয়া দুটার দিকে ধানমন্ডি ২ নম্বরে মিরপুর সড়কে দাঁড়িয়ে পুলিশের রমনা জোনের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের বলেছেন, মিছিলকারীরা ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে যাচ্ছিল। তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তারা শোনেনি। তিনি বলেন, সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। লাঠি ও রাম দা হাতে নিয়ে যুবকদের নিবৃত্ত না করা ও সাংবাদিকদের মারধর করার সময়ে পুলিশের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পুলিশ বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিল।

বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশ ও যুবকদের দল এলিফ্যান্ট রোডের দিকে এগোয়। সেখানে মাল্টিপ্ল্যান সিটির সামনে পুলিশ আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয় এবং আবারও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।

ধানমন্ডি এলাকা থেকে এলিফ্যান্ট রোড পুরোটাই তখন হেলমেট পরিহিত ও হাতে রড, লাঠি, রাম দাসহ থাকা যুবকদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তারা ধাওয়াও দিতে থাকে। তারা ‘জয় বাংলা’ ও শিবিরকে উদ্দেশ্য করে স্লোগান দিতে থাকে। পৌনে ৩টার দিকে বাটা সিগন্যাল থেকে বা দিকে হাতিরপুল যাওয়ার সড়কে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যায়। ৩টার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।

বেলা ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এ হামলা ও ধাওয়ার ঘটনায় আশপাশের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শাটার টেনে বন্ধ করে দেয়। আতঙ্কে অনেকেই বিভিন্ন বাসা ও দোকানে আশ্রয় নেয়।

হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আটজন শিক্ষার্থী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতরা জানান, আরও অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রথম আলো

Next Post

অঘোষিত ভাবে রাজশাহীতে পরিবহন ধর্মঘট, যাত্রী ভোগান্তি চরমে।

রবি আগস্ট ৫ , ২০১৮
নিজস্ব প্রতিবেদক: নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে অঘোষিত ‘পরিবহন ধর্মঘটে’ তৃতীয় দিনেও চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজশাহীর সাধারণ মানুষ। রোববার সকাল থেকে বিভাগীয় শহর রাজশাহী থেকে আন্তঃজেলা বা দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। শুধু বিআরটিসি বাস চলাচল স্বাভাবিক অাছে। পর্যাপ্ত বাস না থাকায় আশপাশের জেলার সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে অচল হয়ে পড়েছে […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links