নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার তেলকুপি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। এর আগে তেলকুপি এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় একই বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক শাহজাহান বাদশা পলাতক রয়েছেন।
এদিকে সোমবার রাতে নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীর বড় ভাই সাইদুর রহমান বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে দু’জনকে আসামি করে শিবগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
জানা গেছে- উপজেলার শাহাবাজপুর ইউনিয়নের তেলকুপি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে শিবগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ওই বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক ও একই গ্রামের একরামুল হকের ছেলে শাহজাহান বাদশার ছেলের বান্ধবী হওয়ার সুবাদে তার বাড়িতে যাওয়া আসা করে আসছিলেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নিজ বাড়িতে তাকে ধর্ষণ করে গোপন ভিডিও ধারণ করে রাখেন দাপ্তরিক শাহজাহান বাদশা। এই ভিডিও ফুটেজকে পুঁজি করে পরবর্তীতে একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সালেরে ১৬ মে ও কয়েক বার একইভাবে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে ধর্ষিতার বড় ভাই বিষয়টি জানতে পেরে ছোট বোনকে সর্তক করে এবং ধর্ষিতার পিতার স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরাবর দাখিল করেন। কিন্তু অভিযোগ দাখিলের পরও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় গত রোববার ধর্ষিতার পরিবারের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জানানো হলে পরদিন সোমবার দুপুরে ধর্ষক দাপ্তরিক শাহজাহান বাদশার শাস্তিমূলক বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ সময় ধর্ষক শাহজাহান বাদশাকে না পেয়ে প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়।
এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান জানান, গত ১৬ মার্চ লিখিত অভিযোগ পেয়ে জরুরী ভিত্তিতে পরিচালনা কমিটির সভা ডেকে দাপ্তরিক শাহজাহান বাদশাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনার তদন্তের জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ধর্ষক শাহজাহান বাদশা, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের আত্মীয় হওয়ার কারণে আস্থা না পেয়ে ধর্ষিতার ভাই বাদি হয়ে সোমবার রাতে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৩০, তারিখ ১৮-০৩-১৯। মামলায় প্রধান শিক্ষককে ধর্ষণে সহায়তাকারী হিসাবে উল্লেখ করলেও প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।
অপরদিকে সরেজমিনে গিয়ে তেলকুপি এলাকার বিভিন্ন শিক্ষক, স্থানীয় দোকানাদার, কৃষকসহ নানান শ্রেণি পেশার ৪০ থেকে ৫০ জন মানুষ ধর্ষকের বিচার দাবি করলে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করেন তারা।
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ থানার ওসি সিকদার মশিউর রহমান জানান, ধর্ষিতার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শাহজাহান বাদশা ওই প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নানের সহযোগিতায় তাকে দীর্ঘ তিন বছর ধরে ব্ল্যাবমেইল করে ধর্ষণ করে আসছিলেন। তাই তাকে আসামি করা হয়েছে। এমনকি তিনি মূল আসামি শাহজাহান বাদশাকে আড়াল করে রেখেছেন।
এম/এস