শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে একাই চাইলেন বিচার

আভা ডেস্কঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা নিজ বিভাগের শিক্ষক আবু শাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ তুলে বিচার চেয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ সেশনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজানা এই অভিযোগের বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে বুধবার বিচার দাবি করেন।

এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর আবেদন জমা দিয়েছেন তিনি। এর পরও তিনি বেশ কয়েকবার আবেদন জমা দেন বলে  জানিয়েছেন।

ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘২০১৯ সালের ৮ নভেম্বর শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন তার নিকেতনের ব্লক-এ-এর ২ নম্বর রোডের ৮২ নম্বর বাসায় তাকে ডেকে ফ্রেন্ডশিপের প্রস্তাব দিয়ে শারীরিকভাবে নিগৃহীত করেন।

শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন তার শরীরে হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমাকে দেখে তোমার কি কখনও কিছু অনুভব হয়নি? এ কথা বলতে বলতে তিনি নিজের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান। আমার চেয়ারের পেছনে এসে যৌন অঙ্গভঙ্গিতে আমার ঘাড়ে হাত দিয়ে ম্যাসাজ করতে শুরু করেন। তিনি তার যৌন তাড়না প্রকাশ করে বলতে থাকেন ভয় পেয়ো না। এখানে কেউ দেখতে পাবে না, কেউ শুনতেও পাবে না।

‘ওনার আচরণে আমি ভয় পেয়ে যাই এবং তখনই চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতেই আবারও আমাকে জোর করে জড়িয়ে ধরেন। নিজেকে রক্ষা করতে চিৎকার করে বলতে থাকি, স্যার আপনি যা চাচ্ছেন আমি তা চাচ্ছি না। আমি পুলিশ ডাকার ভয় দেখালে তিনি আমাকে ছাড়তে বাধ্য হন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তার পরের দিন এক সহপাঠীসহ বিভাগীয় চেয়ারম্যানকে এই ঘটনা জানাই। তবে চেয়ারম্যান বলেন, উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া বিচার করা সম্ভব না। প্রমাণ ছাড়া উপাচার্যের কাছে অভিযোগ করলে শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে ছাত্রত্ব বাতিল হতে পারে।’

এই শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি ক্লাসে লাঞ্ছনা, অ্যাসাইনমেন্ট ও উপস্থিতি বৈষম্যের শিকার এবং পরীক্ষায় স্বল্প মার্কসের ঘটনা ঘটলে উপাচার্যের কাছে এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করি। পরে আমাকে সহপাঠী ও অন্য শিক্ষকদের দিয়ে ঘটনা চেপে যেতে ভয়ভীতি দেখানো হয়।

‘এমনকি যৌন হয়রানির অভিযোগ সেলও ঘটনার তদন্তের উদ্যোগ নেয়নি। এই শিক্ষক প্রশাসনের আস্থাভাজন হওয়ায় বিভাগীয় চেয়ারম্যান বিষয়টি নিয়ে নীরব থাকেন। এমনকি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদেরও সংবাদ না করতে চাপ দেয়া হয়। বাধ্য হয়ে আমি প্রতিবাদ করতে নিজেই দাঁড়াই।’

ওই ছাত্রী প্রথম যখন অভিযোগ দেন তখন তিনি তৃতীয় বর্ষে পড়েন। লিখিত দিতে তার সময় নেয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী হওয়ায় অভিযোগ করার সাহস পাইনি।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন বলেন, ‘তিনি আমার কোর্সের কোনো ক্লাসে অংশ না নিয়ে শেষ ক্লাসে এসে পুরো কোর্স সম্পর্কে জানতে চাইলে তাকে তিরস্কার করি, যা সাধারণভাবে শিক্ষকরা করে থাকেন। যৌন হয়রানির অভিযোগ ভিত্তিহীন, কাল্পনিক, উদ্দেশ্যপ্রসূত ও আমলযোগ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সঠিক তদন্ত করে সত্য ঘটনা তুলে আনবে, এটা আমিও চাই।’

বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওই ছাত্রী আমার কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন ছয় মাস পর। তাকে লিখিত অভিযোগ দেয়ার কথা বলা হলেও তিনি তা করেননি। তিনি অসহযোগিতা করছেন।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইমদাদুল হক বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাটি তদন্তের জন্য যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই বিচার হবে।’

বারবার অভিযোগের পরও কেন বিষয়টি সমাধান হয়নি জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক লাইসা আহমেদ লিসা বলেন, ‘বিষয়টি গোপনীয়। তদন্তের স্বার্থে কারও নাম বলা যাচ্ছে না। আমরা মিটিং করব। তদন্ত হবে। পরবর্তীতে অবশ্যই ফল জানানো হবে।’

Next Post

পরিবেশ উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় আবারো জাতীয় পরিবেশ পদক পাচ্ছে রাসিক

বৃহস্পতি ফেব্রু. ২৪ , ২০২২
আভা ডেস্কঃ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও ফুলের মহানগরী রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের অর্জনে যোগ হচ্ছে আরো একটি পদক। পরিবেশ উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় আবারো জাতীয় পরিবেশ পদক-২০২১-এর চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। বৃহস্পতিবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় পরিবেশ পদক- ২০২১ প্রদান’ […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links