শপথ পাঠ করালেন প্রধানমন্ত্রী

আভা ডেস্কঃ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলতে দেশবাসীকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উন্নত-সমৃদ্ধ ও অসম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তোলার শপথ করিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই লক্ষ্য অর্জনে সবাইকে দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করার শপথ করান তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ শপথ বাক্য পাঠ করান।

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুসহ ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আজ ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দিন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দীর্ঘ ২৪ বছরের স্বাধীনতা সংগ্রামের ফসল। বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বাঙালি জাতি পাকিস্তানের শাসনভার গ্রহণ করবে এটা পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান মেনে নিতে পারেনি। তাই বাঙালিদের ওপর শুরু করে নিপীড়ন-নির্যাতন।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ভাষণে বাংলাদেশের মানুষকে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকতে বলেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রতি জেলা, মহকুমা, থানা, গ্রামে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলতে নির্দেশ দেন। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। তার ভাষণে তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ’ বাংলাদেশের জনগণ তার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। ‘

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্থানে আক্রমণ করে গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু সে রাতেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন: ‘ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছ, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও। সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ শত্রুটিকে বাংলার মাটি হতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। ’

‘২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন ইপিআর হেডকোয়ার্টার থেকে ওয়ারলেসের মাধ্যমে সমগ্র দেশে পাঠানো হয়। আগে থেকেই ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলী তার তিনজন সহকর্মীসহ সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর এবার্তা বাংলাদেশের সব পুলিশ স্টেশন অর্থাৎ থানায় প্রেরণ করা হয়। থানায় কর্মরত অফিসাররা তা সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের হাতে ভোর রাতে পৌঁছে দেন। একইসঙ্গে টেলিগ্রাম ও টেলিপ্রিন্টারেও এ বার্তা সমগ্র দেশে পৌঁছে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পায়ে হেঁটে, মুখে চোঙ্গা ফুঁকিয়ে বা রিকশায় করে মাইক দিয়ে জেলা থেকে থানা পর্যন্ত সেই বার্তা প্রচার করেন। প্রচারপত্র তৈরি করে বিলি করেন। ২৬ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম পাঠ করেন। এরপর একে একে অন্য নেতারা এই ঘোষণা পাঠ করতে থাকেন। ‘

‘বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রেডিও, টেলিভিশন ও পত্রিকায় প্রচারিত হয়। বাঙালিরা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের পাশে দাঁড়ায় প্রতিবেশী ভারত, রাশিয়াসহ অন্য বন্ধুপ্রতীম দেশ ও সেসব দেশের জনগণ। মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে আমরা পরাজিত করি। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের বিজয়। ’

দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আসুন আমরা বাংলাদেশের বিজয়ের এই সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষে শপথ গ্রহণ করি যে, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো, বিশ্বসভায় উন্নত-সমৃদ্ধ বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে চলবো। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা এখন শপথ গ্রহণ করবো। প্রিয় ভাই-বোনেরা, আমি এখন শপথ বাক্য পাঠ করবো। আপনাদের আমার সঙ্গে কণ্ঠ মিলানোর অনুরোধ জানাচ্ছি। ’

শপথবাক্য

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বিশ্বের বুকে বাঙালি জাতি প্রতিষ্ঠা করেছে তার স্বতন্ত্র জাতিসত্তা। আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষের বিজয় দিবসে দৃপ্ত কণ্ঠে শপথ করছি যে, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না। দেশকে ভালোবাসবো, দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করবো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শে উন্নত-সমৃদ্ধ ও অসম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তুলবো। মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।

এ সময় সব মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবাসীকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Next Post

বর্ণাঢ্য আয়োজনে রাজশাহী শিশু একাডেমীতে বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী পালন

বৃহস্পতি ডিসে. ১৬ , ২০২১
আভা ডেস্কঃ বর্ণাঢ্য আয়োজনে রাজশাহী শিশু একাডেমীতে বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জয়া মারিয়া পেরেরা’র পঞ্চ প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে শুরু হয়।  বাংলাদেশ শিশু একাডেমি রাজশাহী ও রাজশাহী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শিশুদের নিয়ে মনোমুগ্ধ সাংস্কৃতিক আয়োজন, বর্ণিল পদযাত্রা আর […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links