রাসিকের ২৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মাসুদ রানা বহু মামলার আসামী

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বহু মামলার আসামীসহ মাদকের গড়ফাদার এবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। প্রতারণা মামলায় জেল থেকে ফারজানা হক নামে এক নারী কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রচার প্রচারণাসহ নানা সংঘাতের মধ্যে চলছে নির্বাচনের প্রস্তুতি। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী ৩৮ কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে মাদক চোরাচালান, হত্যা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।
২৯ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মাসুদ রানা ওরফে শাহিন এবারের নির্বাচনে মিষ্টি কুমড়া প্রতীকে অংশ নিয়েছেন। সে মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও আছেন। মাসুদ রানার বক্তব্য অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ৩৫টি মামলা হয়েছে। এখনো অনেক মামলা চলমান আছে। তবে হলফনামায় তিনি ৫ টি মামলার কথা উল্লেখ করেছেন। ৫টি মামলার মধ্যে ২ টি মামলায় নিম্ন আদালতে দ্বন্দ্ব প্রাপ্ত হন তিনি। তবে উচ্চ আদালত, হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন তিনি। অপর তিনটি মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। ঐ তিনটি মামলার মধ্যে একটি মাদক ও দুটি হত্যা মামলার আসামী ছিলেন তিনি। একটি জলসায় কাউন্সিলর প্রার্থী মাসুদ রানা ২৩ মিনিটের ভিডিও এর এক পর্যায়ে তাঁর বিরুদ্ধে ৪৭টি মামলার কথা স্বীকার করেন। পুলিশের ক্রোসফায়ারে নিহত ঐ এলাকার কুখ্যাত মাদক সম্রাট আলমগীর হোসেন আলো স্থলভিত্তিক হয়েছেন মাসুদ রানা।
সুত্র বলছে গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের নিকট থেকে টাকা ধার করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। পরে অবশ্য ধারের টাকাও পরিশোধ করেননি। গত নির্বাচনে ওয়ার্ডবাসী একজন ভালো মানুষ হিসেবে তাকে ভোট দিয়েছিলেন এলাকার উন্নয়নসহ মাদক নির্মূল করবেন বলে। কিন্তু কথায় আছে না, যে যায় লংকায়, সে হয় রাবণ” এমনটায় ঘটে মাসুদ রানার বেলায়। বর্তমানে নিজের ২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি দোতলা বাসা করেছেন তিনি। যদিও তিনি ঐ বাসা তাঁর বোনের বলে পরিচয় দেন। তবে ঐ বাসাটি এখন তাঁর টর্চার সেল নামে পরিচিত। এছাড়াও তাঁর একটি একতলা বিশিষ্ট নিজস্ব বাড়ি আছে। তাঁর নিজের বাড়ির পাশে ১৭ কাঠা অন্যের জায়গা দখন করে রেখেছেন। দখলকৃত জায়গায় তিনি গরুর খামার করেছেন। সেখানেও তিনি লক্ষ লক্ষ টাকার গরু পালন করছেন। বর্তমানে তিনি আরও কয়েক জায়গায় জমি দখলসহ কিছু জায়গা ক্রয় করেছেন। যার বাজার মুল্য প্রায় কয়েক কোটি টাকা। গত নির্বাচনে তার কাছে তেমন কোনো টাকাই ছিলো না, সে গত ৫ বছরে এতো টাকা পেলেন কোথায়?
ওয়ার্ডবাসী বলছেন, এই এলাকার মাদকের গড়ফাদার তিনি। মাদক কারবার থেকে গত ৫ বছরে কয়েক কোটি টাকা আয় করেছেন তিনি।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাভুক্ত মতিহার থানাধীন খোজাপুর, সাতবাড়িয়া, চরশ্যামপুর, জাহাজঘাট, নিয়ে অত্র ২৯ নং ওয়ার্ড গঠিত। এছাড়াও শ্যামপুরঘাট, তালাইমারী বালুর ঘাট, চরখানপুর, চর মাজার দিয়াড, ১০ নম্বর ঘাট ভারতীয় সীমান্ত অঞ্চল। আর এই সীমান্ত অঞ্চলে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার মাদক বানিজ্য হয়ে থাকে। সেই সাথে রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মাদক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে রাসিকের এই ২৯ নং ওয়ার্ডেই।
নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিন এই সকল মাদকের সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে থাকেন। কাউন্সিলর কার্যালয়টিকে তিনি কিশোরদের আড্ডাখানা বানিয়েছেন। সেখানেই তিনি তাদের মাদক সেবন ও মিনি ক্যাসিনো চালান। এলাকায় কিশোর সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ হয় এই কার্যালয় থেকেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাসিক কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিন কার্যালয়ে বসে থাকে একদল কিশোর। সরেজমিনে গিয়ে সেখানে অভি, কুলিবাবু, রানা, বিশাল, কাউসার নামে অনেকেই সেখানে দেখা গেছে। এরা সকলেই তাঁর অপরাধ কর্মের সফর সঙ্গী। কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিনের নামে এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড অব্যহত আছে ।
ওয়ার্ডবাসী আরও বলছেন, তাঁর আপন ভাই মুন্না ডাঁসমারি বটতলার মোড় ও নিজ বাসায় জুয়ার আসর পরিচালনা করেন। মাসুদ রানা’র রাইট হ্যান্ড হক নামে যুবক এখন এলাকায় আতংক। তিনি রাবিতে কর্মরত। আজাদ নামে আরেক সঙ্গী খোঁজাপুর গোরস্থানের দ্বায়িত্বে আছেন। তিনি গোরস্থানের আম, ডাব, লিচুসহ সকল কিছুই বিক্রি করেন। পরে তা মাসুদ রানার সঙ্গে ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়। এদিকে মাদক কারবারিদের দেখভালের দ্বায়িত্বে আছেন জনি। রানা নামে আরেক সঙ্গী তিনি চাঁদা কালেকশনের দ্বায়িত্ব পালন করেন। ডাঁসমারি উত্তরপাড়ায় ফকিরের ছেলে ফরিদ এখন ক্যাসিনো পরিচালনা করেন। এরা সকলেই এখন ওয়ার্ডবাসীকে নানা হুমকি ধামকি সহ মাসুদ রানার কথা মতো ওয়ার্ডে নবনির্মিত বাসা বাড়ি থেকে মোটা অংকের চাঁদা ও মাসোহারা উত্তোলন করেন। এলাকায় মাসুদের রয়েছে নিজস্ব কিশোর গ্যাং।
ওয়ার্ডবাসী ও এলাকার উন্নয়ন না হলেও কাউন্সিলর হওয়ার পর ভাগ্যের অভূতপূর্ব পরিবর্তন হয়েছে মাসুদের।
জিরো থেকে হিরো হওয়া কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিনের মাদক কারবারি কথা এখন সবার মুখে মুখে।
বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে পুলিশ দিয়ে ২৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের হ্যাস্তন্যাস্ত করারও অভিযোগ রয়েছে রাসিক কাউন্সিলর মাসুদ রানা শাহিনের বিরুদ্ধে। এছাড়াও মাদক সিন্ডিকেটের বিভিন্ন সদস্যদের নিয়ে ২৯ নং ওয়ার্ড কার্যালয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে দেনদরবার ।
প্রসঙ্গত, এবারের নির্বাচন হলফনামায় তিনি তাঁর ডেইরি ফার্ম থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। এদিকে কাউন্সিলর হিসেবে সম্মানি ভাতা পেয়েছেন ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা আছে ১ লক্ষ ২০ হাজার, নগদ আছে ৬০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে ১০ ভরি স্বর্ণ, একটি নিজ নামে মোটরসাইকেল আছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে হলফনামায়। এছাড়াও আছে ৩.৪৯৫ একর কৃষি জমি।
এ বিষয়ে কথা বলতে কাউন্সিলর প্রার্থী মাসুদ রানাকে ০১৭১৯-১৬৬৩৫৩ নম্বরে ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। বিধায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Next Post

আবারও রাসিকের ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী নিজামের বিরুদ্ধে আচারণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগ

সোম জুন ১২ , ২০২৩
নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ঠেলাগাড়ি প্রতীকের নিজাম উল আযীমের বিরুদ্ধে আবারও নির্বাচনী আচারণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার ( ১২ জুন) আচারণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ঐ ওয়ার্ডের অপর কাউন্সিলর প্রার্থী মিষ্টি কুমড়া প্রতীকের গোলাম ফারুক। অভিযোগ […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links