আভা ডেস্কঃ আবাসিক হলসমূহ বন্ধ রেখে অধিকাংশ বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী। ভর্তি, ফরম ফিলাপ এবং মেস ঠিক করা নিয়ে প্রায় সারাদিনই দৌঁড়ুতে হচ্ছে তাদের। আবার ফরম ফিলাপের টাকা জমা দিতে ব্যাংকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। যেখানে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্ব। আবার অনেক মেসের পরিবেশ নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
শিক্ষকদের এমন সিদ্ধান্তকে অপরিকল্পিত এবং তাদের দুরদর্শীতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য-নিরাপত্তার বিষয়ে তারা শতভাগ সচেতন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার এই ছুটির মধ্যেই সম্প্রতি প্রায় ৩০টি বিভাগ চূড়ান্ত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার। হঠাৎ করেই পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত হওয়ায় অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী রাজশাহীতে চলে এসেছে। হল বন্ধ থাকায় তাদেরকে মেসে উঠতে হচ্ছে। এই সুযোগে কতিপয় মেস মালিক মেসের সিট ভাড়া তিনশ থেকে পাঁচশ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন অনেক শিক্ষার্থী। সিট না পেয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মেসে উঠছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মেস মালিক সমিতির সভাপতি মো. শাজাহান মোল্লা জানান, কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে কিনা সে বিষয়ে তারা অবগত নন। কেউ অভিযোগ দিলে তা যাচাই করে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ে বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা হয়ে থাকে। কিন্তু করোনার এই সময়ে অনেক বিভাগেই প্রায় কাছাকাছি সময়ে পরীক্ষা গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া হলও হল বন্ধ। ফলে ফরম ফিলাপ ও আবাসন নিয়ে দুর্ভোগ চরমে শিক্ষার্থীদের।
গতকাল মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অবস্থিত অগ্রণী ব্যাংকটির ভিতর থেকে বাইরে পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন। বাইরের চেয়ে ব্যাংকের ভিতরেই আরো বেশি গাদাগাদি শিক্ষার্থীদের। কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্বও মানা হয়নি। ফলে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
ফরম ফিলাপের জন্য লাইনে অপেক্ষারত সোহেল আরমান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, হল বন্ধ রেখে একইসঙ্গে সব বিভাগের ফরম ফিলাপ ও পরীক্ষা নেওয়া খুবই অবিবেচনাপ্রসূত কাজ। এর দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হয়ত শিক্ষার্থীদের কথা ভাবে না কিংবা ভাবতে চায় না।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা ভেবে দ্রুত হল খোলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। আমরা স্মারকলিপিও দিয়েছি। সামনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। অথচ শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট ও নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এখনো কোনো পদক্ষেপ নেই।
মেসের চেয়ে হলই শিক্ষার্থীদের জন্য বেশি নিরাপদ উল্লেখ করে ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম কনক বলেন, হল খোলার মধ্যে আমি কোনো সমস্যা দেখছি না। বরং মেসেই বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। শিক্ষার্থীরা হলেই বেশি সুরক্ষিত ও নিরাপদ থাকবে। আবার এটা অনেক অভিভাবকের জন্যই বাড়তি আর্থিক চাপের বিষয়। তাই আমার মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন হল খুলে দিতে পারে।
কবে নাগাদ হল খুলতে পারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম টিপু বলেন, আমরা যে শিক্ষার্থীদের কথা ভাবছি না তা নয়। দীর্ঘদিন ধরে হল বন্ধ থাকায় সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করারও একটা ব্যাপার আছে। অন্যথায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। তাছাড়া সরকার কভিড পরিস্থিতিতে সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে ভাবছে। তাদের ভাবনার সাথে আমাদের ভাবনারও সামঞ্জস্য রাখা দরকার। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত হল খোলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করছে।