রাজশাহী কেশরহাটে লাখ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সরকারী জায়গা দেখবে কে?

মোহনপুর প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার অর্থনৈতিক জোন হিসেবে পরিচিত কেশরহাট পৌর বাজার। এ বাজারের রাস্তার দু’ধারে সড়ক ও জনপথ এবং বাজারের ভেতরের ফাকা জায়গাসহ সরকারি খাল দখল করে একের পর এক স্থাপনা তৈরী করায় বেকায়দায় পড়েছেন স্থানীয় প্রশাসন। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেশরহাট পৌর কাউন্সিলর সাবের আলী ও তার বাহিনী এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা নিজের খেয়াল খুশিমত হাটের ভেতরে ও বাহিরে যেসব জায়গা ফাঁকা রয়েছে সে জায়গাগুলো বাঁশের বেড়া, ইট দিয়ে তৈরী অবৈধ স্থাপনা নির্মান অব্যাহত রেখেছেন। এসব সরকারি জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে ঘটেছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, মামলা পাল্টা মামলা। এসব ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হওয়ায়। স্থানীয় গনমাধ্যমকর্মী আরিফুজ্জামান রাসেলকে সাবের কাউন্সিলর ও তার লোকজন প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ায় মোহনপুর থানায় নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়রী করছেন রাসেল।

বর্তমানে কেশরহাট বাজারে পৌর এলাকার ফুলশো গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে ব্যবসায়ী রাশেল আহম্মেদ ইট দিয়ে হাটের ১০৮ নম্বর মৌজার সরকারী খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গা ও খাল দখল করে পিলার দিয়ে দোকানের জন্য বিল্ডিং তৈরী করছেন। এ খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে প্রায় ৩১টি। এঘটনায় কেশরহাট ইউনিয়ন ভূমি অফিস স্থাপনা নির্মান বন্ধে গত ১৯ জানুয়ারী বুধবার একটি নোটিশ প্রদান করেন। সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্বেও গত ৩ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার রাত সাড় ১০টায় আবারো বিল্ডিং এর কাজ শুরু করেন রাসেল স্থানীয় প্রশাসন তা জানতে পেরে আবারো কাজটি বন্ধ করে দেয়। ওই একই রাতে প্রশাসন ফিরে আসার পর রাত সাড়ে বারোটার দিকে আবারো সাবের কাউন্সিলের নেতৃত্বে তার লোকজন কাজ শুরু করে খবর পেয়ে মোহনপুর থানা পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার এসআই ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ কাজটি বন্ধ করে দেয়। স্থানীয় প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকায়

তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হয়ে কাজটি বন্ধ করে দেয়। এরই মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে লুকোচুরি খেলতে খেলতে উঠে গেছে বিল্ডিং এর পুরোটায় এখন শুধু ছাদ ঢালাই দেওয়ার বাকি। বিল্ডিং এর ছাদ দিতে না পারলেও তারা যে কোন সরকারি ছুটির দিনে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এদিকে ব্যবসায়ী রাসেলের আপন বড় ভাই ব্যাগ ব্যবসায়ী মতিন আহম্মেদ কাউন্সিলর সাবেরকে অনৈতিক সুবিধার মাধ্যমে তাকেসহ তার লোকজনকে সাথে নিয়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার কেশরহাটে অবস্থিত সরকারি পুকুরের পশ্চিম-দক্ষিণ পাড়ে ফাঁকা জায়গা দখল করে বাঁশ ও কাঠের বেড়া দিয়ে রাতের আধারে স্থাপনা নির্মান করেন। অবৈধ স্থাপনা নির্মানের খবর পেয়ে ৬ ফেব্রুয়ারী রোববার মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সানওয়ার হোসেনের নির্দেশে কেশরহাট ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল কাশেম অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থাপনাটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেন।

শুনতে হাস্যকর মনে হলেও স্থানীয় লোকজন বলেন, ভূমিদস্যু সাবের কাউন্সিলর কেশরহাটে অধিকাংশ জমি দখল করে একের পর এক মার্কেট গড়ে তোলেন। বর্তমানে কেশরহাটের সিংহভাগ সরকারি জমি তার দখলে রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। ভবিষ্যতে  কেশরহাটের নাম পরিবর্তিত হয়ে সাবের হাটে রুপান্তর হতে পারে বলে সাধারণের ধারণা।

একের পর এক অবৈধ স্থাপনা নির্মান করায় হাটের জমি কমে গেছে ফলে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় রাজশাহী নওগাঁ মহাসড়কের ধারে বসছে বাঁশ, ধান, পাইকারি সবজি, ভ্যান ও সাইকেলের হাট।  ব্যস্ততম মহাসড়কের ধারে হাট বসায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় এ রাস্তায় চলাচলকারী যাত্রী ও শিক্ষার্থীদের। এতে ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা ঝরেছে প্রাণ। সম্প্রতি হাটের ভেতরে জায়গা না পেয়ে কবুতর হাট এখন পৌর প্রাঙ্গনে।

হাটের জায়গা দখলে কেউ প্রতিবাদ বা নিউজ করলে তাকে প্রাণনাশের হুমকিসহ  মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন ভুমিদস্যু সাবের কাউন্সিলর। সাবেরের বিরুদ্ধে মোহনপুর থানায় সাধারণ ডায়রী তা প্রমান করে। শূন্য থেকে কোটিপতি সাবের আলীর টার্গেট ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা তাদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে না হলে জোর করে জায়গা থেকে উচ্ছেদ করে দিনে দিনে গড়ে চলেছেন অসংখ্য দোকানপাট। এসব করতে গিয়ে সাবের আলী গত ২১ মে শুক্রবার দুপুরের পর জনতার হাতে গণধোলাইয়ের শিকারও হয়েছেন।

এবিষয়ে কেশরহাট পৌর সাবেক কাউন্সিলর মোঃ বুলবুল বলেন, কেশরহাটে আমার পরিবারের দখলে থাকা ২২ শতাংশ জমি সাবের কাউন্সিলর সড়ক ও জনপথ হতে জায়গাটি ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন বলে জোর পূর্বক দখল করে নিয়েছেন।

এবিষয়ে কাউন্সিলর সাবের আলীকে মুঠোফোনে সরকারি জমি দখল বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,  কেশরহাটে আমার জায়গা মানুষে দখল করে খায়। আমি কোন জায়গা দখল করিনি। আমরা হাটের জায়গা কিনে দোকান নির্মাণ করি। এসময় তাকে হাটের সরকারি জায়গা কার কাছ থেকে ক্রয় করেছেন প্রশ্ন করলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে বলেন, রাশেল মার্কেট করবে কেউ বাধা দিলে ফলাফল ভাল হবেনা।

কেশরহাট ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকতা মোঃ ইকবাল কাশেম বলেন, কাউন্সিলর সাবেরের ব্যক্তিগত জায়গা বাদে সড়ক ও জনপথের জায়গাসহ বাজারের অনেক জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণ করেছেন। রাশেলকে আমি স্থাপনা বন্ধে নোটিশ প্রদান করেছি। ইউএনও স্যারের নির্দেশে সরকারি জায়গায় মতিনের যে স্থাপনা গড়েছিল তা ভেঙ্গে দিয়েছি।

এবিষয়ে মুঠোফোনে কেশরহাট পৌর মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদ বলেন, আমি অবৈধ স্থাপনার পক্ষে নই। আমি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসনসহ সড়ক ও জনপথ দপ্তরে অবহিত করেছি। তিনি আরো বলেন, হাটে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে আমি পৌর প্রাঙ্গণে গরীব মানুষের সুবিধার্থে কবুতর হাট বসতে দিয়েছি। পৌর কাউন্সিলর সাবেরের সরকারি জমি দখল নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, সড়ক ও জনপথের জায়গা নিয়ে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল তা স্থানীয় সংসদের মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে।

এবিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, সড়কে যে অবৈধ স্থাপনাগুলো আছে তা উচ্ছেদের জন্য চিঠি পেয়েছি এবং একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছি।

Next Post

সাংবাদিক বুলবুল হোসেনের মৃত্যুতে রাসিক মেয়রের শোক

বুধ ফেব্রু. ৯ , ২০২২
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দৈনিক যুগান্তর, সমকাল ও যায়যায়দিনের রাজশাহী ব্যুরো অফিসের ব্যুরো প্রধান ডা. মোজাহার হোসেন বুলবুল (বুলবুল হোসেন) এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। আজ বুধবার এক শোক বার্তায় এই শোক প্রকাশ করেন মেয়র মহোদয়। শোক […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links