রাজশাহীর কোরবানির হাট জমে উঠেছে, হাটেও পর্যাপ্ত গরু আসতে শুরু করেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর কোরবানির হাট জমে উঠেছে। রাজশাহী অঞ্চলের মধ্যে সর্ববৃহৎ বলে পরিচিত নগরীর সিটি বাইপপাশ হাটসহ জেলার, বানেশ্বর, পাশবর্তি জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের খাশিরহাট বাজার, নওগাঁর কালিগঞ্জ, বগুড়ার গাবতলি হাটেও পর্যাপ্ত গরু আসতে শুরু করেছে। দেশি গরুর পাশাপাশি হাটগুলোতে ভারতীয় বিপুল পরিমাণে গরুর আসছে।
সম্প্রতি রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বড় বড় গরুর বিট-খাটালগুলো খুলে দেওয়ার কারণে ভারতীয় গরু আসার হারও বেড়েছে ব্যাপক হারে। ফলে এবার কোরবানির ঈদে গরুর পর্যাপ্ত যোগান থাকবে বলেই মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এবারো অন্যান্য বারের তুলনায় দেশি জাতের গরু-মহিষের চাহিদায় বেশি রয়েছে।

রাজশাহী অঞ্চলের হাটগুলোতে গরু-মহিষ, ছাগল ও ভেড়া কিনতে আসছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররাও। রাজশাহী প্রাণী সম্পদ দপ্তর সূত্র মতে, এবার রাজশাহী বিভাগে প্রায় ১৮ লাখ পশু পালন হয়েছে কোরবানির জন্য। এই বিভাগে সমপরিমাণ পশু কোরবানিও করা হবে। ফলে চাহিদার তুলনায় পশু পর্যাপ্ত রয়েছে।
রাজশাহী শহরের সিটি বাইপাস হাটে গতকাল গিয়ে দেখা যায়, এই হাটে প্রায় সারা দেশ থেকেই পাইকারী ব্যবসায়ীরা এসেছেন কোরবানির পশু কিনতে। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ থেকে এই হাটে পশু বিক্রি করতে এসেছেন খামারি ও গরু ব্যবসায়ীরা।
হাটের ইজারাদার ডাবলু জানান, সপ্তাহে রবি ও বুধবার এই হাটটি সাধারণত বসে। তবে এখন কোরবানি উপলক্ষে প্রতিদিনই হাট বসছে। গত কয়েকদিনে হাটে বেচা-কেনাও বেড়েছে। হাটের দিন গড়ে ৩০-৪০ হাজার পশু আসছে এই হাটে। অন্যান্য দিনও আসছে ১৫-২০ হাজার করে পশু। এসব পশুর মধ্যে রাজশাহী এবং রাজশাহীর আশে-পাশের জেলাগুলোর খামারে পালন করা গরু এবং মহিষই আসছে বেশি। হাটে আসা মোট গরুর প্রায় ৪০-৪৫ ভাগ পশু আসছে ভারতীয়। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে গরু এবং মহিষ।

হাটের আরেক ইজারাদার আতিকুল ইসলাম কালু বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারো হাটে প্রচুর পরিমাণে দেশি গরু-মহিষ আসছে। বলা যায়, পর্যাপ্ত গরু-মহিষ আসছে হাটে। ফলে এবার কোরবানিতে পশুর দাম নিয়ে কোনো আঙ্ক নাই ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে। দামও এখন পর্যন্ত সহনীয় পর্যায়ে আছে।

এই হাটে গরু বিক্রি করতে আসা রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছী গ্রামের মহিদুল ইসলাম জানান, তাঁর খামারে এবার ১৫টি গরু পালন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি গরু রুয়েছে বিদেশি জাতের। এসব গরু পালন করতে বছর জুড়ে তাঁকে অনেক শ্রম দিতে হয়েছে। কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে এসব গরু পালন করা হয়েছে কোরবানিতে কিছু টাকা লাভের মুখ দেখবেন বলে। তবে ভারতীয় গরু আসার হার আরো বৃদ্ধি পেলে গরুর দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ ক্ষেত্রে দেশের খামারিরা লোকসানে পড়ারও শঙ্কা রয়েছে।

তিনি আরো জানান, তাঁর মতো রাজশাহীতে এবার হাজার হাজার খামারি কোরবানির জন্য গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া পালন করেছেন। তারা যদি লোকসানের মুখে পড়েন এবার, তাহলে সামনে কোরবানির আগে পশু পালন নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন খামারিরা। কারণ গত বছর কোরবানির দুই-একদিন আগে অনেক খামারি প্রচুর পরিমাণে লোকসানের মুখে পড়েছিলেন। কেউ কেউ নামমাত্র দামেই পশু দিয়ে এসেছেন ঢাকায়। কাজেই এবার কিছুটা লাভের আশায় পথ চেয়ে আছেন খামারিরা।

নওগাঁর চৌবাড়িয়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আসলাম বলেন, ‘এবারও দেশেই প্রচুর পরিমাণে গরু-মহিষ পালন হয়েছে। হাটেও যেসব পশু আসছে তার অন্তত ৬০ ভাগই দেশি জাতের। কাজেই এখন আর নতুন করে ভারতীয় গরু-মহিষ আমদানি করার প্রয়োজন আছে বলে মনি করি না। তাহলে কোরবানির গরু পালন করে খামারিরা গত বারের মতো এবারো লোকসানের মুখে পড়তে পারেন।’

সিটি বাইপাশ পশুহাট ঘুরে দেখা গেছে, ভারতীয় সিন্ধু, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং নেপাল থেকেও গরু এসেছে। দেশি জাতের গরুর তুলনায় এই জাতের গরুর গুলর দাম কিছুটা হলেও কম।

গরু ব্যবসায়ী সাগর জানান, হাটে ভারতীয় ২০টি আন্ধা জাতের গরু নিয়ে এসেছেন তিনি। প্রতিটির দাম দুই লাখ ২০ থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা চাচ্ছেন। সেই গরুর মাংস নয় থেকে ১০ মণ হবে। হাটে সেই তুলনায় গরুর ক্রেতা কম। তবে কয়েক দিনের মধ্যে ক্রেতা আরো বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।

ঢাকার আরেক গরু ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, ‘এবার দেশি জাতের পশু রয়েছে ব্যাপক। পাশাপাশি হাটে আসছে ভরাতীয় গরু-মহিষ। ফলে এবারো কোরবানিতে পশুর সঙ্কটের কোনো কারণ দেখছি না। তবে এখনো ঢাকায় কোরবানির বাজার না বসায় শেষ পর্যন্ত দাম কি হবে, সেটা বলা যাচ্ছে না।

তিনি আরও জানান, রাজশাহীর বাজারে এবার মাঝারি আকারের একটি গরু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে। আর বড় আকারের গরু বিক্রি হচ্ছে ৯০ হাজার থেকে এক লাখের ওপরে। ১০-১২ মণ আকারের গরু বিক্রি হচ্ছে দুই-আড়াই লাখ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এবার কোরবানির জন্য গরুর মাংস ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা মণ হিসেবে কেনা-বেচা হচ্ছে। দুই বছর আগে এই সময়ে ১৮ থেকে ১৯ হাজার টাকা মণ হিসেবে ধরে গরু বিক্রি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিটি বাইপাশ হাট ছাড়াও জেলার গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ী, পুঠিয়ার বানেশ্বর, নওগাঁর কালিগঞ্জ, বগুড়ার গাবতলি হাটেও পর্যাপ্ত গরু আসছে।

এদিকে রাজশাহীর বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ দপ্তরের সহকারী পরিচালক ডাক্তার হুমায়ন কবীর জানান, এবার রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় খামারি পর্যায়ে প্রায় ১৮ লাখ গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল পালন করা হয়েছে। গত বার এই সংখ্যা ছিল ২০ লাখের ওপরে। তবে এবারো যা পালন হয়েছে-তা এই অঞ্চলের চাহিদার জন্য পর্যাপ্ত। কিন্তু রাজশাহী অঞ্চলের পশুর চাহিদা রয়েছে সারাদেশব্যাপী। ফলে সারা দেশের বাজারেই যাচ্ছে এই অঞ্চলের পশু।

তিনি আরো জানান, এবার রাজশাহী বিভাগে কোরবানির জন্য সাঁড় গরু পালন হয়েছে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৮৪৭টি, বলদ জাতের গরু পালন হয়েছে ৮৮ হাজার ৮৫১টি, গাভী জাতের এক লাখ ৩১ হাজার ৪৪টি গরু পালন হয়েছে। এছাড়াও মহিষ পালন হয়েছে ১৩ হাজার ৭৯টি। ছাগল পালন হয়েছে ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬৭টি এবং ভেড়া পালন হয়েছে এক লাখ ২৮ হাজার ২০৩টি।

Next Post

চাঁপাইনবাবগঞ্জে নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

সোম আগস্ট ১৩ , ২০১৮
নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে স্থানীয় সুশীল সমাজ, মুক্তিযোদ্ধা, গণমাধ্যম কর্মীসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান প্রধানের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু হায়াত মোঃ রহমতুল্লাহ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নবাগত জেলা প্রশাসক এ […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links