নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ৯-১৫ অক্টোবর জাতীয় তামাকমুক্ত সপ্তাহ-২০২০ এএফআইবি’র রাজশাহী বিভাগীয় মতবিনিময় সভায় জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সিগারেটের স্তর প্রথা বাতিলের দাবি জাতীয় তামাকমুক্ত সপ্তাহ ২০২০ উপলক্ষে আজ বুধবার সকালে নগরীর তেরখাদিয়ায় রুডো প্রশিক্ষণ কক্ষে উদযাপন এলায়েন্স ফর এফসিটিসি ইমপ্লিমেন্টেশন বাংলাদেশ (এএফআইবি) ও রুলার এ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (রুডো)’র উদ্যোগে রাজশাহী বিভাগীয় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছর জাতীয় তামাকমুক্ত সপ্তাহের প্রতিপাদ্য “তামাকের মূল্যস্তর প্রথার বিলুপ্তি, জনস্বাস্থ্যের উন্নতি”। মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভাগীয় মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি লিয়াকত কাদির। রুডো;ও নিবার্হী পরিচালক ও এলায়েন্স ফর এফসিটিসি ইমপ্লিমেন্টেশন বাংলাদেশ (এএফআইবি) রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক সোহাগ আলীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন নারী হস্তশিল্প উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও এএফআইবি রাজশাহী জেলা সমন্বয়ক আনজুমান আরা পারভীন, ওয়েব রাজশাহীর সচিব রুমা খাতুন, বৃষ্টি নারী কল্যাণ সংস্থার সভাপতি লুতফুন নাহার, রুডো’র কোষাধ্যক্ষ আব্দুল খালেক, রুডো ইয়ূথ গ্রুপের সভাপতি সাবিত্রী হেমব্রেম প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় বক্তরা বলেন দেশের প্রায় ৭শত বেসরকারি সংগঠন সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পর্যায়ে সপ্তাহব্যাপী একযোগে তামাক বিরোধী সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করছে। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সিগারেটের জটিল কর স্তর প্রথার বিলুপ্তির লক্ষ্যে জনমত সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তামাকের কারণে অনাকাঙ্খিত মৃত্যুরোধ কল্পে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকের ব্যবহার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। মাননীয় প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সিগারেটের জটিল করস্তর প্রথা পর্যায়ক্রমে কমিয়ে এনে আন্তর্জাতিক বিশ্বের ন্যায় একটি সহজ করকাঠামো তৈরীর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি আরও বলেছিলেন ৩ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বিড়ি উৎপাদন বন্ধের কথা উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় এবং অর্থমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির কোন প্রতিফলন না ঘটায় পরবর্তী কোন বাজেটেই তার প্রতিফলন না থাকায় তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সংগঠনসমুহ দারুণভাবে হতাশ হয়েছে। বাজেটে প্রতি বছরই বহুজাতিক কোম্পানীসমুহের উচ্চ ও প্রিমিয়াম স্তরের করের হার না বাড়ানোর মাধ্যমে প্রকারান্তে বহুজাতিক কোম্পানীকেই সুবিধা প্রদান করা হয়েছে যা উদ্বেগজনক। অপরদিকে দেশীয় কোম্পানীর নিম্নস্তর সিগারেট ১০ শলাকার প্যাকেটের মূল্য ৩৯ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৫২ শতাংশ করায় দেশীয় সিগারেট কোম্পানীকে সস্তায় সিগারেট বিক্রির বাজার বিস্তৃতির সুযোগ প্রদান করে দিয়েছে বাজেট। বাজেটে শুভঙ্করের ফঁাকির ন্যায় সুকৌশলে দেশী ও বিদেশী সিগারেট কোম্পানীকে (মৃত্যুর ফেরিওয়ালাদের) পরোক্ষভাবে সহায়তা করা হচ্ছে প্রতি বছরের বাজেটে। এর ফলে সস্তা সিগারেটের প্রকৃতমূল্য কমে যাওয়ায় এর ব্যবহার পূর্বের চেয়ে অধিক বেড়ে যাচ্ছে এবং মৃত্যুর সংখ্যাও পূর্বের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তামাকের কারণে অনাকাঙ্খিত মৃত্যুরোধে আন্তর্জাতিকভাবে একটি স্বাস্থ্যচুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ এ চুক্তিতে প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ। এ চুক্তিতে তামাকের ব্যবহার হ্রাস করণের লক্ষ্যে যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রতিবছর সিগারেটের উপরে মুল্য স্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে করবৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ। প্রতি বছর সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি করা হলেও ৪টি করস্তর প্রথার (প্রিমিয়াম, উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন) প্রচলন থাকায় সরকার জনস্বাস্থ্য রক্ষায় যে উদ্দেশ্যে মূল্য বৃদ্ধি করছে তা কোন কাজে আসছে না। দেশের জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে স্তর প্রথার বিলুপ্তির কোন বিকল্প নেই। উল্লেখ্য দেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লক্ষ্য লোক তামাকজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করে এবং প্রায় ৪ লক্ষ লোক পঙ্গুত্ববরণ করে। এ অপ্রত্যাশিত মৃত্যুরোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তামাকের কারণে অনাকাঙ্খিত মৃত্যুরোধ কল্পে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকের ব্যবহার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। তাঁর অভিপ্রায় বাস্তবায়ন করতে হলে সিগারেটের জটিল করস্তর প্রথা পর্যায়ক্রমে কমিয়ে এনে আন্তর্জাতিক বিশ্বের ন্যায় একটি সহজ করকাঠামো তৈরি করা হলে তামাকের ব্যবহার সহজে হ্রাস পাবে এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটবে।