রাজশাহীতে দক্ষ প্রশিক্ষকবিহীন সাইনবোর্ডসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানেই চলছে গাড়িচালক তৈরির কাজ।

ডেস্ক রিপোর্ট : রাজশাহীতে দক্ষ প্রশিক্ষকবিহীন সাইনবোর্ডসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানেই চলছে গাড়িচালক তৈরির কাজ। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষকদেরই নেই কারিগরি শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা। নেই প্রশিক্ষণের জন্য আধুনিক ট্রেনিং কার, এমনকি প্রয়োজনীয় অবকাঠামোও।

এখান থেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে কোনোরকমে চালকের সনদ নিয়ে অনেকে বেরিয়ে পড়েন গাড়ি চালাতে। আর এই চালকরাই ঘটাচ্ছেন দুর্ঘটনা। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বাস্তব পরিস্থিতি জানতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) শিগগির অভিযানে নামার কথা জানিয়েছে। যারা প্রশিক্ষণের শর্ত পূরণ না করে প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নগরীর বিলসিমলা এলাকায় ১৯৭৪ সালে গড়ে ওঠে রাজশাহী মোটর ড্রাইভিং ও মোটর মেকানিক ট্রেনিং স্কুল। ৩৭ বছর পর ২০১১ সালে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমোদন লাভ করে এটি। প্রতিষ্ঠানটি প্রশিক্ষণ শেষে চালক ও মেকানিকদের সনদ দেয়। এ সনদ নিয়ে তারা বিআরটিএতে আবেদন করে লাইসেন্স নেন। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ এমদাদুল হক বকুল বিআরটিএ নিবন্ধিত একজন প্রশিক্ষক।

৮৫ বছর বয়সী বকুল এখন প্রতিষ্ঠানে এলেও প্রশিক্ষণ দিতে পারেন না। অন্য প্রশিক্ষকরা ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেন। আর এসব প্রশিক্ষকের সরকারি নিবন্ধন নেই বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রশিক্ষণার্থীরা জানান, রাজশাহী মোটর ড্রাইভিং ও মোটর মেকানিক ট্রেনিং স্কুলে অদক্ষ প্রশিক্ষকরা দায়িত্ব পালন করছেন। এ কারণে প্রশিক্ষণার্থীরা ভালো চালক হয়ে বের হতে পারছেন না।

গত রোববার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে গিয়ে অফিস সহকারী আলম নবীকে পাওয়া যায়। তিনি ওই সময় দুই প্রশিক্ষণার্থীকে তাত্ত্বিক জ্ঞান দিচ্ছিলেন। তিনি প্রশিক্ষক কি-না জানতে চাইলে আলম নবী জানান, মাঝে মধ্যে তাত্ত্বিক বিষয়গুলোর ক্লাস নেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক পাস।

তিনি প্রশিক্ষণ দিলেও নিজে মোটর ড্রাইভিং ভালোভাবে জানেন না। আলম নবীর দাবি, তিনি মাঝে মধ্যে কাজ চালিয়ে নিলেও প্রতিষ্ঠানের ব্যবহারিক পাঠ নেন আরেক প্রশিক্ষক আবু বকর। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাসহ তারও প্রশিক্ষক নিবন্ধন নেই।

নেই মাঝারি ও ভারি মোটরযান চালানোর অভিজ্ঞতাও। একটি ট্রেনিং কারে প্রশিক্ষণ দেন তারা। সেটিও বহু পুরনো। নেই ফিটনেস। নিজেদের মাঠ না থাকায় ব্যস্ততম রাস্তায় চলে প্রশিক্ষণ।

একই চিত্র নগরীর শেখপাড়া ফায়ার সার্ভিস মোড় এলাকার সেবামূলক মোটর ড্রাইভিং ও মেকানিক স্কুলেও। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আবদুর রশিদ নিজেই প্রশিক্ষক। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

তারও প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ নেই। তার এবং নিজের প্রতিষ্ঠান- কোনোটিরই নিবন্ধন নেই। সড়কের পাশের একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। একটি মাত্র পুরনো ট্রেনিং কার থাকলেও সেটি রাখার জায়গা নেই। মাঠ না থাকায় তিনি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন নগরীর রাস্তায়।

নগরীর ভদ্রা মোড়ের একটি ছোট্ট কামরায় গড়ে উঠেছে ফ্রেন্ডস মোটর ড্রাইভিং স্কুল। প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষক কামাল হোসেন পলাশও একটি ট্রেনিং কার নিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তার প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

রাজশাহী শহরের বাইরে একমাত্র চালক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মৌসুমী মোটর ড্রাইভিং ট্রেনিং সেন্টার। ২০০২ সালে এ প্রতিষ্ঠানটি চালু হয় জেলার বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌর এলাকায়। এর স্বত্বাধিকারী ও প্রশিক্ষক হুজুর আলী সেনাবাহিনীর সাবেক প্রশিক্ষক।

জানতে চাইলে হুজুর আলী বলেন, তার প্রশিক্ষক নিবন্ধন থাকলেও প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেই। বিধি মেনে তিনি আবেদন করেছেন অনেক আগেই। কিন্তু এখনও অনুমোদন মেলেনি। তিনি আরও দাবি করেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার জনকে তিনি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তারা সবাই এখন দক্ষ চালক।

নগরীর চালক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে তিনটি স্বল্পমেয়াদি কোর্সে চালকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। মানভেদে সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ফি নেয়া হচ্ছে। চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে আকৃষ্ট করা হচ্ছে প্রশিক্ষণার্থীদের। অভিযোগ রয়েছে- ১৫ থেকে ২০ দিনেই মানহীন চালক তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকায় এসব চালকই কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন দুর্ঘটনার। তবে ভিন্ন চিত্র রাষ্ট্রায়ত্ত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি)। বিভিন্ন মেয়াদে কয়েকটি কোর্সে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে এখানে। স্বল্প খরচে এমনকি খরচ ছাড়াই মানসম্মত প্রশিক্ষণ মিলছে এখানে। দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষকদের আলাদা প্রশিক্ষণও।

রাজশাহী টিটিসির অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মাহবুবুর রশীদ তালুকদার জানান, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত এবং বেকারত্ব দূর করা সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এরই অংশ হিসেবে চালু রয়েছে এসব কোর্স। তিনি বলেন, সম্প্রতি চালু হয়েছে বিনা মূল্যের চালক প্রশিক্ষণ কোর্স। এতে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি যাতায়াত ভাতা এবং লাইসেন্স ফিও দিচ্ছে সরকার।

মূলত শিক্ষিত যুবকরাই এগিয়ে আসছেন প্রশিক্ষণে। দুর্ঘটনার জন্য অদক্ষ চালকের দায় কতটুকু জানতে চাইলে রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক মোমিনুল ইসলাম মোমিন বলেন, অদক্ষ চালকের দায় কিছুটা থেকেই যায়।

তবে ত্রুটিপূর্ণ যান, রাস্তার অবস্থা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থারও দায় সমান সমান। এ নিয়ে কাজ করা দরকার। অনুমোদনহীন চালক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নজরদারির বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ’র রাজশাহী অফিস প্রধান ও সহকারী প্রকৌশলী (ইঞ্জিন) এএসএম কামরুল হাসান বলেন, এমন অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের খবর তাদের কাছে নেই। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিআরটিএ রাজশাহী অফিস জানিয়েছে, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত শুধু রাজশাহীতেই লাইসেন্স নিয়েছেন ২৮ হাজার ২৯৫ জন অপেশাদার চালক। একই সময়ে ৯ হাজার ৮২১ জন পেশাদার চালক লাইসেন্স নিয়েছেন। এর বাইরে হাজারো চালক লাইসেন্স না নিয়েই মোটরযান চালাচ্ছেন। সম্প্রতি নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর এ নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আনু মোস্তফা for jugantor

Next Post

সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে

শুক্র আগস্ট ১৭ , ২০১৮
আভা ডেস্ক : আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধিসহ কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিভাগসহ দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে বলে আজ আবহাওয়ার এক পূর্বাভাসে বলা হয়। এ ছাড়া রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া, […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links