রাজশাহীতে আবারও ভবন ধ্বসের বীজ বপন

নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবন ধ্বসের রেশ কাটতেই না কাটতেই আবারও ভবন ধ্বসের বীজ বপন হচ্ছে রাজশাহী কলেজের বহুতল ভবন নির্মানে !
জানা যায়, ভবন নির্মানে নিম্ন মানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার, দীর্ঘদিন ফেলে রাখা দুই তলা দূর্বল ভবনের ওপর তড়িঘড়ি করে তিন তলার ছাদ দিয়ে মাত্র ১৫ দিনের মাথায় ৪ তলার ছাদ ঢালাই, শুরু হয়েছে পাঁচতলার কাজও।  প্রথমে দুই তলা পর্যন্ত এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করে সরে যায়, পরে দীর্ঘদিন পড়ে থাকার পর আবার তড়িঘড়ি করে অন্য জনকে দিয়ে করানো হচ্ছে ভবন নির্মানের কাজ।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহী কলেজের মাঠের শেষে অর্থাৎ নদীর পাড়ের দিকে তৈরী হচ্ছে রাজশাহী কলেজের একটি একাডেমিক ভবন। সেখানে সাংবাদিকদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে সটকে পড়ে মেসার্স সামির ট্রেডার্সের লোকজন। দেখা যায়, রড, সিমেন্ট, বালু এবং ইট সহ সব নির্মান সামগ্রী-ই নিম্ন মানের। সামির ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারি নুরুল হুদার ফোন নম্বর চাইলে দিতে অস্বীকৃতি জানায় মিস্ত্রিরা।
পরে মিস্ত্রিদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ঠিকাদার আমাদের যা কিনে দেবে আমরা তা দিয়েই কাজ করি। মাত্র ১৫ দিন আগে তৃতীয় তলার ছাদ দিয়ে আবার চারতলার ছাদ দিচ্ছেন এতে বিল্ডিং দূর্বল হবে না ? এ প্রশ্নের উত্তরে মিস্ত্রি বলেন, এটা ঠিকাদারের কাজ, তারা যেভাবে বলবে আমাদের সেভাবেই করতে হবে।
কাজটি সম্পূর্ণ দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবএসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (এসএই) আব্দুস সামাদ বলেন, আমি সাব এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার, আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষ যেভাবে হুকুম করেন আমি সেভাবেই কাজ করি। বক্তব্য নিতে চাইলে আমার এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার স্যার অথবা এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার স্যারের সাথে কথা বলুন। এরপর তিনি তার এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের নম্বর পাঠান ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে।
একাধিক সূত্র জানায়, রাজশাহীতে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগে যে কোন  ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পেতে কাজ ভেদে প্রথমেই গুনতে হয় ১০ থেকে ২০% পর্যন্ত ঘুঁষের অঙ্ক। আবার কাজ শেষ হবার আগেই বিল তুলতে দিতে হয় ৫ থেকে ১০% ঘুঁষ। এখানেই শেষ নয়, বিলের চেক তোলার সময় একাউন্টসকে দিতে হয় তোলা টাকার পরিমানের আরও ২% ঘুঁষ। এত এত ঘুঁষ দিয়ে ঠিকাদার সঠিকভাবে কাজ-ই বা করবে কি করে এরকম প্রশ্ন করলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি।
অপর একটি সুত্র নিশ্চিত করেন, ছাদ ঢালায়ে সাটারিং কাজে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। সাধারণত ছাদ ঢালায়ের এ কাজে ষ্টীল ব্যবহার করার নিয়ম। নিয়মবহির্ভূত ভাবে সাড়ে তিন কোটি টাকা বিলও পরিশোধ করা হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সালামকে ম্যানেজ করেই এসব অনিয়ম দূর্নীতি করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন সুত্রটি।
কথা বলতে মেসার্স সামির ট্রেডার্সের নুরুল হুদাকে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সালামকে কল দিলে তিনি বলেন, আমার কাছে এসব বলে লাভ নাই। আপনারা আমার উর্ধতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, সময় সল্পতার কারণে অল্প সময়ের ব্যবধানে দুইটি ছাদ ঢালাই দেওয়া হয়েছে। অল্প সময়ে ব্যবধানে দুটি ছাদে ঢালাই দেওয়া যুক্তিযুক্ত আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। কমিশন নেওয়ার কথা সঠিক না। আমি তাদের এখনো কোন বিল দেয়নি।
কথা বললে রাজশাহী উন্নয়ন কতৃপক্ষের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার (অর্থরাইজ অফিসার) আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোনো বহুতল ভবনের ছাদ ঢালায়ের সময় ২১-২৮ দিন সাটারিং খোলা উচিত না। ২১-২৮ দিনের নিচে সাটারিং খুলে দ্বিতীয় ছাদ ঢালাই অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এতে ভবন দুর্বল হয়।
এ বিষয়ে জানতে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল খালেককে একাধিকবার ফোন দিলে তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

 

Next Post

রাজশাহীতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বন্ধু মহল পরিবারের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

শনি এপ্রিল ৬ , ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজশাহীতে বন্ধু মহল পরিবারের উদ্যোগে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে রাজশাহী মহানগরীর প্রায় তিন শতাধিক বন্ধুদের নিয়ে ইফতার, দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৬ এপ্রিল (শনিবার) বিকাল ৫:৩০ মিনিটে পিঁপড়া আপ্যায়ন এন্ড কনভেনশন সেন্টারে (এসএসসি) ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৫ সালের বন্ধু মহল নিয়ে ইফতার আয়োজন করা হয়। প্রতি […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links