নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী মহানগরীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক সার্জেন্টের আত্মহত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করাসহ আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে ২ যুবতীকে আটক করেছে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ। এসময় আটককৃতদের কাছ থেকে মৃতের খোয়া যাওয়া মোবাইল উদ্ধার হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো নওগাঁ জেলার মান্দা থানার বালিচ গ্রামের মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী মিস আইরিন ইয়াসমিন লিজা (৩৪) এবং ঢাকা জেলার সাভার থানার ডেন্ডাবর নতুনপাড়া পলাশবাড়ী গ্রামের মোঃ ফিরোজের মেয়ে মোসাঃ শামীমা আক্তার (২৪)। আটককৃতরা ঢাকার সাভারে একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।
পুলিশ জানায়, মৃত মজিবুর রহমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট । সে তার পরিবার নিয়ে উপশহর ২নং সেক্টর, হোল্ডিং নং-৯০/২ বাসায় ভাড়ায় থাকতো। গত ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ রাত্রী ৯.৩০ টা হতে ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সকাল ৮.৩০ টার মধ্যে যেকোন সময় সে আত্মহত্যা করে। সেদিন মৃত মজিবুর রহমানের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বাসায় ছিলো না। সংবাদ পেয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ মৃতদেহ তার ভাড়া বাসা থেকে দরজা ভেঙ্গে বের করে। মৃতের বড় ছেলে তার পিতার আত্মহত্যার বিষয়ে অবগত করলে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়। তার ছেলে আরো জানায়, মৃত্যুর পর তার পিতার মোবাইল ফোন সেট পাওয়া যায়নি এবং মৃতের স্ত্রী জানায়, তার বাসায় থাকা ৪,০০,০০০ (চার লক্ষ) টাকা এবং ব্যাংক এর কিছু কাগজপত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সম্মানিত পুলিশ কমিশনার মোঃ আবু কালাম সিদ্দিকের নির্দেশে আত্মহত্যার রহস্য উদঘাটনসহ আসামীদের সনাক্ত করে গ্রেফতারের লক্ষে কাজ শুরু করে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ।
সর্বশেষ বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নিবারন চন্দ্র বর্মন পিপিএম এর নেতেৃত্বে এসআই মোঃ শাহীনুর রহমান ও তার টিম গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ রাত্রী ৮.৩০ টায় তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা জেলা হতে আসামী আইরিন ইয়াসমিন লিজাকে আটক করে। এসময় তার ব্যক্তিগত মোবাইল ও তার কাছ থেকে মৃত মজিবুর রহমানের খোয়া যাওয়া মোবাইল জব্দ করা হয়। এরপর বোয়ালিয়া থানার ঐ টিম রাত্রী ৯.১৫ টায় অপর আসামী মোসাঃ শামীমা আক্তারকে গ্রেফতার করে এবং তার ব্যক্তিগত মোবাইল জব্দ করে।
গ্রেফতারকৃত আসামী আইরিন জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, মৃত মজিবুর রহমানের সাথে তার কথপোকথন ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল এবং ঘটনার দিন তারা মজিবুর রহমানের বাসায় স্বেচ্ছায় এসে তার পাশের রুমে অবস্থান করছিলো। আসামী লিজাকে মৃত মজিবুর ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ দিয়ে তার রুমে ডাকে। আইরিন তার রুমে যেতে না চাইলে সে আত্মহত্যা করবে বলে ম্যাসেঞ্জারে হুমকি প্রদান করে। এরপর আসামী আইরিন মৃত মজিবর রহমান এর নিকট না গেলে একপর্যায়ে অভিমান করে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ রাত্রী ৩.০০ টার পর যেকোন সময় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
জিজ্ঞাসাবাদের আসামীদ্বয় আরো জানায়, তারা সকাল ৭.৩০ টায় মজিবুরকে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে দেখে তার মোবাইল ফোন সেট, চাবি ও নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত উক্ত সার্জেন্ট রাজশাহী মহানগরীতে প্লট ক্রয়-বিক্রয়, রেন্ট-এ-কার ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। আটককৃত যুবতীদ্বয় ঢাকার সাভারে একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা করতেন। তারা শিক্ষকতার অন্তরালে একটি সংঘবদ্ধ ব্লাকমেলিং চক্রের সক্রিয় সদস্য বলে জানা যায়।
উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে বোয়ালিয়া থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মন।
তিনি আরও বলেন, মৃত মজিবুর রহমানের খোয়া যাওয়া টাকা সহ অন্যান্য মালামাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।