যেসব কুকর্মে সাহেদ গ্রেপ্তার

আভা ডেস্কঃ করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট প্রদান, অর্থ আত্মসাতসহ প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আজ বুধবার ভোরে সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্রসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে গত সপ্তাহের সোমবার থেকে প্রকাশ্যে আসে সাহেদের পৃষ্ঠপোষকতায় রিজেন্ট হাসপাতালের একের পর এক অনিয়ম। র‍্যাবের অভিযানে করোনা টেস্টে অননুমোদিত কিট, বিনামূল্যের পরীক্ষা করার জন্য দুই দফায় টাকা নিত রিজেন্ট, রোগীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পাশাপাশি সরকার থেকেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া এবং অপরাধ ধামাচাপা দিতে অভিনব কৌশল প্রভৃতি নানা তথ্য বেরিয়ে আসে।

অভিযানে জানা যায়, গত ২৩ মে’র পর করোনার কোনো নমুনা পরীক্ষা করেনি রিজেন্ট। বরং নমুনা ফেলে দিয়ে নিজেদের কম্পিউটারের মাধ্যমে ভুয়া ইউনিক আইডি তৈরি করে মনগড়া রিপোর্ট দিতো রিজেন্ট। পাশাপাশি রিপোর্টে জালিয়াতি করে আইইডিসিআর ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন- নিপসমের প্যাড-সিল ব্যবহার করত তারা।

করোনা টেস্টে অননুমোদিত কিট

অভিযান চালিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা টেস্টের অননুমোদিত কিট পেয়েছে র‌্যাব। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিংবা বাংলাদেশ সরকার যে কিট ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি, সেটি দিয়েই টেস্ট করছিল রিজেন্ট।

বিনামূল্যের পরীক্ষা করার জন্য দুই দফায় টাকা নিত রিজেন্ট

সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কোভিড-১৯ বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে রিজেন্টে করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহের কোনো টাকা নেওয়ার কথা না। তবে টেস্টে প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা করে নিত তারা। যাদের ‘করোনা পজিটিভ’ রিপোর্ট দেওয়া হতো, তাদের কাছ থেকে ফের পরীক্ষার জন্য আরও এক হাজার টাকা নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে র‍্যাব।

রোগী থেকেও টাকা নিয়েছে, সরকার থেকেই ক্ষতিপূরণ চেয়েছে

করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে করোনা রোগীদের কাছ থেকে কোনো ফি নেওয়ার কথা না। তবে র‍্যাব অভিযানে গিয়ে দেখেছে, রিজেন্ট রোগী প্রতি দেড় লাখ, ২ লাখ ও সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা বিল আদায় করত। পাশাপাশি ‘রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছে’ এই বাবদ সরকারের কাছে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ বিল জমা দিয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল। অধিদদপ৪্তর হয়ে সেই বিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে প্রায় অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় ছিল। তবে এখনো কোনো অর্থ ছাড় হয়নি।

অপরাধ ধামাচাপা দিতে অভিনব কৌশল

গত কয়েকদিন ধরে এই অভিযোগগুলো প্রকাশ্যে আসতে থাকলে নিজেদের অপরাধ ঢাকতে নতুন কৌশল নেয় রিজেন্ট। অভিনব এই কৌশলের বিষয়ে র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, রিজেন্টের বিরুদ্ধে যখন সবাই অনিয়মের অভিযোগ করছিল তখন রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ এটাকে গোপন করার জন্য গত পরশু একটা প্রেস কনফারেন্স করে। সেখানে তারা বলে, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসবে দায়ী না। রিজেন্ট হাসপাতালের তিনজন কর্মী এর সঙ্গে দায়ী।’

সারোয়ার আলম বলেন, ‘নিজেদের নিরপরাধ প্রমাণ করতে রোববার ১ মাস ৭ দিন আগের ব্যাকডেট দিয়ে ৩ কর্মচারীকে বরখাস্ত করে রিজেন্ট। তাদের বিরুদ্ধে থানায় একটা সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছে রিজেন্ট। অথচ আমরা দেখলাম ওই ৩ কর্মী গত দেড়মাস অফিস করেছে, হাজিরা দিয়েছে।’

রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ ফ্লুইড দিয়ে তাদের হাজিরাখাতার সাক্ষরগুলো মুছে দিয়েছে, যাতে সে প্রমাণ করতে পারে যে আগেই তাদের বরখাস্ত করা হয়। শুধু তাই না রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ এই তিন কর্মচারীদের বলেছে যে, ‘আপনারা চাকরি করেন কোনো সমস্যা নেই, আমরা আপনাদের আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসব।’ তার মানে কর্তৃপক্ষ স্টাফদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে শিকার করার চেষ্টা করেছে। এই সমস্ত অপরাধ ও টাকার নিয়ন্ত্রণ চেয়ারম্যান নিজে করত।

পরে করোনা আক্রান্ত রোগীদের আবেগ নিয়ে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ করায় গ্রেপ্তার হওয়া রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলা করে র‌্যাব। তাদের মধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অবশেষে আজ গ্রেপ্তার হলেন সাহেদ।

 

Next Post

নন্দীগ্রামে আমন চাষাবাদ শুরু

বৃহস্পতি জুলাই ১৬ , ২০২০
নন্দীগ্রাম থেকে আব্দুর রউফ উজ্জলঃ উত্তরাঞ্চলের শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলায় আমন চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক। করোনাকালেও থেমে নেই নন্দীগ্রামের কৃষকরা। ভালো ফলনের আশায় বুক বেঁধে নাওয়া খাওয়া বাদ রেখে জমি চাষাবাদে সারাদিন মাঠে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জমি প্রস্তুত করে চলেছে তারা। গত বোরো মৌসুমে […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links