আভা ডেস্ক : মিয়ানমারে এখনও রোহিঙ্গাবিদ্বেষী এক হাজারের বেশি পোস্ট ঘোরাফেরা করছে ফেসবুকে। এখনও আপলোড করা হচ্ছে নতুন নতুন ‘ঘৃণা’। এসব পোস্টে রোহিঙ্গাদের হত্যা করার আহ্বানসহ ঘৃণাত্মক নানারকম কথাবার্তা দেখা যাচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের ফেসবুকের ওপর রয়টার্সের নজরদারিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেসবুকে কর্তৃপক্ষ এ ধরনের বিষয় ঠেকানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও, এই সামাজিক নেটওয়ার্কটিকে এখনও মিয়ানমারের এই মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেয়ার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে নিয়মনীতি মোতাবেক জাতিগত কোনো গোষ্ঠীর ওপর ‘সহিংসতা কিংবা অমানবিক’ আক্রমণ নিষিদ্ধ। কিন্তু মিয়ানমারের ফেসবুকে এ ধরনের কিছু কিছু পোস্ট ছয় বছর ধরে অনলাইনে রয়েছে। রয়টার্স বলছে, তাদের হাতে আসা অধিকাংশ রোহিঙ্গাবিরোধী মন্তব্য, ছবি এবং ভিডিও বার্মিজ ভাষায় পোস্ট করা।
সেগুলোতে যা বলা হয়েছে
* রোহিঙ্গাদের গুলি করার আহ্বান, আগুন লাগিয়ে দেয়া এবং শূকর দিয়ে খাওয়াতে বলা হয়।
* গণহত্যার দাবি : একজন লিখেছেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে লড়াই করব, ঠিক যেভাবে হিটলার ইহুদি দমন করেছেন’।
* মুসলিমবিরোধী পর্নোগ্রাফিক অশ্লীল ছবি।
* তাদেরকে কুকুর এবং ধর্ষণকারী হিসেবে তুলে ধরা।
এক বিবৃতিতে ফেসবুক স্বীকার করেছে, ঘৃণাত্মক মনোভাব ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে কারা দায়ী সেটি খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে ছিল, ‘মিয়ানমারের মতো দেশে যেখানে বহু লোক প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।’ ‘আমরা ভুল
তথ্য ছড়ানো বন্ধ করতে এবং ঘৃণা উসকে দেয়া ঠেকাতে সাধ্যমতো কঠোর পরিশ্রম করছি।’ গত মার্চে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা জানান, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ উসকে দেয়ার পেছনে ফেসবুক ব্যবহারের ‘বড় ধরনের ভূমিকা ছিল’।
এরপর ফেসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গকে জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় সামাজিক এ নেটওয়ার্কের সম্পৃক্ততার বিষয়ে মার্কিন সিনেটরদের কাছে জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হয়। সেসময় তিনি স্বীকার করেন যে তার প্রতিষ্ঠানের আরও বেশি কিছু করা প্রয়োজন ছিল এবং দেশটিতে যা ঘটেছে তাতে ‘ভয়াবহ ট্র্যাজেডি’ বলে বর্ণনা করেন।
ফেসবুক পদক্ষেপ নিয়েছে এ রকম তিনটি নির্দিষ্ট বিষয় তুলে ধরেন তিনি-
* বার্মিজ ভাষা জানে এমন ডজন খানেক কন্টেন্ট রিভিউয়ার আনা হয়।
* মিয়ানমারের সিভিল সোসাইটির সঙ্গে কাজে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে মিয়ানমারের সঙ্গে তথ্য আদানপ্রদান।
গত বছর তথ্যনীতি এবং কার্যক্রম পরিচালনা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। অফলাইন থাকা অবস্থায় সম্ভাব্য ক্ষতি ঠেকাতে রিপোর্ট করা কন্টেন্টে দ্রুত সাড়া দেয়া, সক্রিয়ভাবে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য শনাক্ত করার পদ্ধতির উন্নতি। কমিটি তাদের রিপোর্টে জানায়, সামাজিক মাধ্যমটি ‘রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রচার বন্ধ করতে কোনোকিছু করেছে’- এমন প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে জাতিসংঘের তরফ থেকে সমালোচনার মুখে পড়ে ফেসবুক, সেইসঙ্গে মার্কিন এবং ব্রিটিশ রাজনৈতিক নেতারাও সমালোচনা করেন। ২০১৭ সাল থেকে ৭ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমার ছেড়েছে, যাদের অনেকেই এখন বাংলাদেশের শরণার্থী ক্যাম্পে রয়েছে।
যুগান্তর