পশ্চিম রেলওয়ে মেডিকেলের নানা অনিয়ম দুর্নীতি সংবাদ প্রকাশের পর তদন্ত শুরু

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় রাজশাহী (পশ্চিমাঞ্চল) রেল মেডিকেলে স্বজনপ্রীতি ও চাকুরী বিধি লংঘনসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির ধারাবাহিক  সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর পশ্চিমাঞ্চল রেল কতৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

রেল কতৃপক্ষ জানায়, সংবাদ প্রকাশের পর ডেপুটি চীফ অপারেটিং অফিসার (ডেপুটি সিওপিএস) হাসিনা খাতুনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুজন সদস্য হলেন ডিভিশনাল মেডিকেল অফিসার(ডিএমও) ডাঃ মারুফুল আলম ও ডিএসই (হেড কোয়ার্টার) আহমেদ ইশতিয়াক জহুর।

তদন্ত কমিটির প্রধান হাসিনা খাতুন বলেন, তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। অনেক গুলো নথিও সংগ্রহ করা হয়েছে, সেগুলো যাচাইয়ের অপেক্ষায়। তদন্তের জন্য পাকশী-সহ বেশ কিছু জায়গায় যেতে হবে। সেসব কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হলে এর বেশী বলা সম্ভব নয়। তবে আশা করছি আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারবো।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ রেলওয়ে (পশ্চিম) রাজশাহী’র মেডিকেল বিভাগে চাকরি বিধি লঙ্ঘন, ঠিকাদারি কাজে কমিশন বাণিজ্য, ওষুধ চুরি, দায়িত্বে অবহেলাসহ কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগে সংবাদ প্রকাশ হয়।

প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, ঠিকাদারি কাজে মালামাল গ্রহন না করে চালানে স্বাক্ষর, মোট বিলের ৩৫% কমিশন গ্রহণ, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে দিয়ে চাহিদাপত্র তৈরী করে ২ কোটি টাকার অধিক লোপাটসহ নানা অনিয়ম আর দূর্নীতির মহোৎসব হয়েছে পশ্চিম রেলওয়ে মেডিকেলে। এই দূর্নীতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। প্রতিবার-ই দুর্নীতির মহোৎসব শেষ করে অবসরে চলে যাচ্ছেন রাঘবোয়ালরা। অবসরে গেলে, ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছেন সিএমও’র দায়িত্ব প্রাপ্তরা। আবার ওষুধ চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়া পরও কর্মচারিরা আছেন বহালতবিয়তে। ওষুধ কেনার সময় নির্দিষ্ট ওষুধ কোম্পানির থেকে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের কমিশন। হাসপাতালের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাতেও হচ্ছে নয়ছয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম (রাজশাহী) জোনের চিফ মেডিক্যাল অফিসার (সিএমও) ডাঃ সুজিৎ কুমার রায় চলতি বছরে অবসরে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে ফাঁস হয়ে যায় তাঁর কয়েক কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা।

ডাঃ সুজিৎ কুমার রায় পাকশী ডিভিশনের ডিএমও থেকে পদোন্নতি পেয়ে ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ সালে সিএমও (পশ্চিম) হিসেবে যোগদান করেন। সিএমও হিসেবে যোগদানের পর তিনি সেনেটারি ইন্সপেক্টরের শূন্য পদে অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব দেন চতুর্থ শ্রেণির জমাদার, ড্রেসার, খালাসিদের। লালমনিরহাট,  পাকশী এবং রাজশাহীর শুধুমাত্র সেনেটারি বিভাগ থেকেই হাতিয়ে নিয়েছেন ৬ কোটি টাকা।

জানা যায়, পাকশী ডিভিশনে ৫টি সেনেটারি ইন্সপেক্টর পদ আছে। ৫ পদের মধ্যে একজন সেনেটারি ইন্সপেক্টর রয়েছেন। এছাড়া বাকী চারটিতে অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব হিসেবে দেওয়া আছে চতুর্থ শ্রেণির জমাদার, ড্রেসার ও খালাসি পদের চার ব্যক্তিকে। তারা হলেন, রাজশাহীতে জুয়েল সরকার, ঈশ্বরদীতে আকরাম, খুলনায় অয়ন সরকার এবং পাকশীতে জগবন্ধু বিশ্বাস, যারা সবাই সেনেটারি ইন্সপেক্টর পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কর্মরত এবং ডাঃ সুজিতের আস্থাভাজন।

ডাঃ সুজিত যখন পাকশীর ডিএমও ছিলেন, তখন থেকেই বর্তমানে পাকশীর সেনেটারি ইন্সপেক্টর জগবন্ধু বিশ্বাস তার আস্থাভাজন। সেই সুবাদে গত দুই বছরে প্রায় ২ কোটি টাকার উপরে মালামালের চাহিদা নেওয়া হয়েছে তার কাছ থেকেই। যদিও চাহিদা পত্রে একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি স্বাক্ষর করার এখতিয়ার রাখেন না, তবুও শুধু মাত্র দূর্নীতির সফর সঙ্গী হিসেবে আস্থাভাজন জগবন্ধুকে বলির পাঁঠা বানিয়ে লোপাট করা হয়েছে সেই টাকা। মালামাল কেনার শুধুমাত্র হাত বদল হয়েছে টাকার। স্টোরে খাতা কলম ঠিক থাকলেও মালামাল নেই স্টোরগুলোতে। পাকশী ডিভিশনে অন্যান্য সেনেটারি ইন্সপেক্টর পদে দ্বায়িত্ব পালনকরা অন্য কেউ-ই এমন  মালামাল না কিনলেও শুধুমাত্র পাকশী’র দ্বায়িত্বে থাকা জগবন্ধু বিশ্বাস  মালামাল কিনেছেন ২ কোটি টাকার।

এদিকে লালমনিরহাট ডিভিশনে “একাই একশ” সিঃ সেনেটারি ইন্সপেক্টর সারাফাত। তিনি একাই গত কয়েক বছরে প্রায় ৩০-৩৫ কোটি টাকার মালামাল কিনেছেন। সেখানেও সিএমও সুজিৎ কুমার রায় এর আছে ৩৫% কমিশন। এছাড়াও সিএমও রাজশাহী দপ্তরে তার নিজস্ব ক্ষমতাবলে করেছেন কয়েক কোটি টাকার কাজ। ৫ লক্ষ টাকার চাহিদা পত্রের বিপরীতে ৫০ হাজার টাকা কমিশন ও মালামাল গ্রহণ না করেও ৩৫% কমিশন নিয়েছেন তিনি।

Next Post

নন্দীগ্রামে চূড়ান্ত ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

শনি ডিসে. ১৭ , ২০২২
নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার নন্দীগ্রামে চূড়ান্ত ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের কুমিড়া পন্ডিতপুকুর   টাইগার ক্লাবের আয়োজনে কুমিড়া পন্ডিতপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জালাল উদ্দিন মন্ডল স্মৃতি স্মরণে চূড়ান্ত ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত ফুটবল প্রতিযোগিতায় বগুড়ার আলামিন ক্রীড়া চক্র ফুটবল দলকে ২-০ গোলে […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links