পথনাট্য-শিল্পকর্মে ক্যাম্পাসে হিমেল আবহ

আভা ডেস্কঃ মেহগনি গাছের গোড়াটা ইট দিয়ে ঘেরা। ঘিরে রাখা অল্প পরিসর জায়গায় তৈরি করা হয়েছে মানবদেহের অবয়ব। পরনে নীল শার্ট ও ছাই রঙের প্যান্ট। এক পায়ে কালো জুতা। মাথার অংশে বেছানো লালচে খোয়া।

শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা গেল এই চিত্র। ট্রাকচাপায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেল নিহত হওয়ার পর থেকেই নানা কর্মসূচিতে তাকে স্মরণ করে ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সহপাঠীরা।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা ছাপচিত্র ও প্রাচ্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সুপ্তি ঘোষ তৃষার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হিমেলের দুর্ঘটনার পরে যেভাবে পড়েছিল ঠিক সেই চিত্রকেই তুলে ধরা হয়েছে। কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে সেগুলো পাশে লিখে দেয়া হয়েছে। শোকের প্রতীক হিসেবে তিনটা ভাস্কর্য রাখা হয়েছে।’

একই বিভাগের শিক্ষার্থী রাহুল দেবনাথ বলেন, ‘হিমেলের অবয়ব তৈরি করতে আমরা তার ব্যবহৃত শার্ট, প্যান্ট ও জুতা ব্যবহার করেছি। দুর্ঘটনার পর দেখেছি তার মাথাবিহীন দেহটি পড়ে ছিল। আমার বন্ধুকে আমি চেনার মতো কোনো অবস্থা পাইনি। সেই আবেগ ও অনুভূতি থেকে এটি করা হয়েছে।’

গত ১ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনের রাস্তায় পাথরবাহী ট্রাকের চাপায় নিহত হন হিমেল। আহত হন তার সঙ্গে একই মোটরসাইকেলে থাকা আরও দুই শিক্ষার্থী।

হবিবুর রহমান হলের সামনে মঙ্গলবার সকালে শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা। এতে শুধু হিমেলেরই ১৫টি শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হয়, নাম দেয়া হয় ‘হিমেল কর্নার’। এ ছাড়াও প্রদর্শিত হয় তার বন্ধু-সহপাঠীর শতাধিক চিত্র ও শিল্পকর্ম।

প্রদর্শনীর বিভিন্ন চিত্রকর্মে লেখা- ‘এরা মগজ ফেলে ভবন তুলে নাম দিয়েছে উন্নয়ন, মগজখেকো এই জোকেদের নামটা কিন্তু প্রশাসন!’, ‘রাস্তা-ঘাটে পিষে মরি, বাতাসে তোদের শ্বাস, সৃষ্টিকুলের ঘাতকেরা তোরা সাবধানে থাক’…।

চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী আল-আমিন ইসলাম রওনক বলেন, ‘এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে হিমেলের শিল্পকর্মগুলো দেখাতে চেয়েছি। সঙ্গে আমরা গত কয়েকদিন দুর্ঘটনাস্থলে বসে যে চিত্রকর্মগুলো এঁকেছি সেগুলোও এখানে রাখা হয়েছে।

‘এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে হিমেলকে যেমন স্মরণ করছি, তেমনি দুর্ঘটনারও প্রতিবাদ করছি। প্রশাসনের গাফিলতিগুলোও তুলে ধরেছি। যেহেতু আমরা শিল্পী তাই হিমেলকে নিয়ে আমদের যে অনুভূতি সেটা শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’

একই অনুষদের শিক্ষার্থী ও হিমেলে সহপাঠী সামসুন্নাহার খান বলেন, ‘আজ বন্ধু-সহপাঠীরা সবাই মিলে এখানে এসছি শুধু হিমেলের স্মরণে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা জায়গায় পড়তে এসে এ ধরনের মৃত্যু কখনই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বড় বড় ভবন তৈরি হচ্ছে। কিন্তু নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে না।

‘তাই এই ক্যাম্পাসের প্রতিটি শিক্ষার্থী অনিরাপত্তায় রয়েছেন। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ হোক। যাতে হিমেলের মতো আর কোনো শিক্ষার্থীর এভাবে প্রাণ না যায়।’

অভিনয়ে হিমেলের আর্তনাদ

প্রদর্শনীতে চারুকলার শিক্ষার্থীরা একটি পথনাট্য করেন। সেখানে কাল্পনিকভাবে হিমেলের চরিত্রে দুর্ঘটনা ও তার অনুভূতি অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায় মৃত হিমেল জীবিত হয়ে চাপা দেয়া সেই ট্রাকের কাছে ফিরে যান। তিনি ট্রাকের চাকা দেখতে থাকেন। এরপর পড়ে থাকা নিথর দেহের কাছে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে থাকেন।

পরে তিনি নিজের শিল্পকর্মগুলো দেখে স্পর্শ করতে যান। কিন্তু তাকে বাধা দেয়া হয়। জোর করে তাকে মরদেহ হিসেবেই কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়।’

পথনাট্যের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়েল অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন, অনিরাপদ ক্যাম্পাস, প্রশাসনের উদাসীনতা, অব্যাবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।

কল্পিত চরিত্রের অভিনয় সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান অভিনেতা মৃতশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এম এ মোমিন সিদ্দিকী ডিউ বলেন, ‘এখানে কাল্পনিকভাবে হিমেলের মৃত্যুর পরের অনুভূতি ব্যক্ত করা হয়েছে। হিমেল তার শিল্পকর্মের কাছে ফিরে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা প্রতিবন্ধকতা তাকে ফিরে যেতে দিচ্ছে না। বাধা সৃষ্টি করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অভিনয়ে আসলে হিমেলকে দেখানো হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী এই পাঁচটিসহ আরও অনেক প্রতিবন্ধকতা দ্বারা আবদ্ধ।’

Next Post

ভ্যানের সঙ্গে ধাক্কায় বিএনপি নেতার মৃত্যু

মঙ্গল ফেব্রু. ৮ , ২০২২
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে বৈদ্যুতিক খুঁটি বহনকারী ভ্যানের সঙ্গে ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী এক বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার রুপগঞ্জ টেকনিক্যাল কলেজ মোড়ে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল কবির ডন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহত ৪৮ বছর বয়সী হামিদুর রহমানের বাড়ি উপজেলার রুপগঞ্জ কাশিডাঙ্গা […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links