ধর্মের সঙ্গে সংস্কৃতিচর্চার সংঘাত নেই: প্রধানমন্ত্রী

আভা ডেস্কঃ ধর্মের সঙ্গে সংস্কৃতিচর্চার সংঘাত নেই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবাইকে এক হয়ে উৎসবে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে বুধবার সকালে নবনির্মিত আটটি জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।

সংস্কৃতিচর্চার বিকাশে দেশের প্রতিটি উপজেলায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরির কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। লোকজ সংস্কৃতি রক্ষার পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতিচর্চাকে আরও বিকশিত করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

কুষ্টিয়া, খুলনা, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন অনুষ্ঠানে। দেশবাসীকে নববর্ষ ও ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘ধর্মের সঙ্গে সংস্কৃতির অনেকে সংঘাত সৃষ্টি করতে চায়। এটা মোটেও সঠিক না। ধর্ম, যার যার ধর্ম। আমরা এটাই বলি, ধর্ম যার যার, উৎসব সকলের। কাজেই উৎসব আমরা সকলে এক হয়ে পালন করব।’

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে নানা সময় দেশের সংস্কৃতির ওপর আঘাত আসার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ পালন করতে গিয়ে আমরা বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। ১৪০০ সাল বরণ করতে গিয়ে আমরা বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম- এটা হচ্ছে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এমনকি রমনা বটমূলে বোমা হত্যা করেও মানুষ হত্যা করা হয়েছিল, যাতে করে আমাদের সংস্কৃতিচর্চা বন্ধ হয়ে যায়।

‘আজকে পহেলা বৈশাখ আমরা উদযাপন করি, এই একটা উৎসবে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবাই, সব বাঙালি এক হয়ে আমরা কিন্তু এই পহেলা বৈশাখে উদযাপন করি।’

সংস্কৃতিচর্চার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যেকোনো একটি দেশে মানুষের জীবনে সংস্কৃতির চর্চা বা সংস্কৃতির বিকাশ এটা অপরিহার্য। কারণ এই সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে কিন্তু একটি জাতির স্বাতন্ত্র্যবোধটা আরও বেশি বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়। কাজেই আমরা সব সময় এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন।’

প্রান্তিক পর্যায়ের সংস্কৃতি কর্মীদের মেধা বিকাশের সুযোগ করে দেয়াটা সরকারের লক্ষ্য বলে জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলা অর্থাৎ ৪৯৩টি উপজেলায় আমরা আমাদের কালচারাল কমপ্লেক্স গড়ে তুলব। যাতে প্রতিটি উপজেলা থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পায়, সে ব্যবস্থাটা আমরা নিতে চাচ্ছি।

‘উপজেলা পর্যায়ে নির্মিতব্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ৪০০ আসনের মিলনায়তনসহ মাল্টিপারপাস হল থাকবে। সেই হলগুলো এমনভাবে তৈরি করতে হবে, সেখানে চলচ্চিত্র যেন দেখানো যায়। আমরা সেভাবেই করতে চাই। কাজেই সেদিকে লক্ষ রেখে প্রকল্পগুলো তৈরি করা এবং সেগুলোর প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।’

বাঙালির স্বকীয়তা ও সংস্কৃতিকে আরও উজ্জীবিত আর বিকশিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতিচর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের ঐতিহ্য আমরা ভুলব না। আবার যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েও চলতে হবে। কারণ আধুনিক যুগের যে সংস্কৃতি তার সঙ্গেও যাতে দেশের ছেলেমেয়েরা, তারাও যেন তার সঙ্গে মিল রেখে চলতে পারে বা সেই সংস্কৃতিও যেন তারা রপ্ত করতে পারে, চর্চা করতে পারে।

‘কাজেই আমি মনে করি, আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি এবং আধুনিক জ্ঞানও অর্জন করা একান্তভাবে দরকার। একটা থেকে আরেকটা বাদ দেয়া যাবে না। আমাদের সামনের দিকেও এগিয়ে যেতে হবে।’

লোকজ সংস্কৃতিকে অমূল্য সম্পদ আখ্যা দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘একেকটা অঞ্চলভিত্তিক যেসব লোকজ শিল্প যেমন, পালা গান, কবির লড়াই, কবিতা, গান যাত্রা- এ রকম বিভিন্ন জিনিস রয়েছে। যার মধ্য দিয়ে অনেক ঐতিহ্যও আমরা জানতে পারি। এগুলো চর্চা করার সুযোগ সৃষ্টি করা এবং এগুলো বিকশিত করা একান্তভাবে প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সিনেমা আমাদের দেশের মানুষের বিনোদনের একটা অবলম্বন ছিল। যেটা পর্যায়ক্রমিকভাবে, আসলে প্রযুক্তির কারণে হোক, এটা বন্ধ হয়ে গেছে। আমি মনে করি, আমাদের প্রতিটি জেলায় উপজেলায় আবার সিনেমা হলগুলো তৈরি করা উচিত। সিনেমা হলের সঙ্গে শুধু সিনেমা হল না সিনেপ্লেক্স অর্থাৎ সিনেমা হলে সঙ্গে শপিং মলসহ সবকিছুই করতে পারেন।’

এ জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘পুরনো সিনেমা হলগুলো ভেঙে আবার নতুনভাবে তৈরি করে, সেখানে মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা করতে পারেন। এই লক্ষ্যে আমরা কিন্তু এক হাজার কোটি টাকার একটা বিশেষ বরাদ্দ রেখেছি। যারা পুরনো সিনেমা হল ভেঙে নতুন সিনেমা হল তৈরি করবেন, তারা এখান থেকে বরাদ্দ পাবেন। এবং আরো নতুন নতুন সিনেমা হল যারা করতে চাইবেন তাদেরকেও এখান থেকে কিন্তু টাকা দেয়া হবে।’

আটটি জেলার নবনির্মিত শিল্পকলা ভবনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এগুলো যাতে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়। যে যখন ব্যবহার করবেন অন্তত এগুলো যেন কোনোরকম ক্ষতি সাধন না হয়, সংরক্ষণটা ভাল হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। সরকার করে দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু সম্পদটা কিন্তু জনগণের, আপনাদের। কাজেই সে কথাটা মনে রেখে এটা যত্নসহকারে ব্যবহার করবেন, সেটাই আমি চাই।’

খেলাধুলাসহ সংস্কৃতি চর্চার বিকাশে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

Next Post

পুতিন গণহত্যা চালাচ্ছেন: বাইডেন

বুধ এপ্রিল ১৩ , ২০২২
আভা ডেস্কঃ ইউক্রেনে চলছে রাশিয়ার সামরিক অভিযান। এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেন ও পশ্চিমাদের অভিযোগ, বেসামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে রুশ সেনারা। কিয়েভের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মারিওপোলের থিয়েটারে হামলা ও বুচায় বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করেছে রুশ সেনারা, যা স্পষ্টত যুদ্ধাপরাধ। রাশিয়া বরাবরই বেসামরিক স্থাপনায় হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে এবার […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links