আভা ডেস্কঃ আমাদের দেশ থেকে ৩১টি প্রাণী একেবারে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং ৫৬টি প্রাণী মহাবিপন্ন অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে।
তিনি বলেন, ‘এই ৫৬টি প্রাণী যদি সংরক্ষণ করা না যায় তাহলে তারাও একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এতে ইকোসিস্টেমের পরিবর্তন হবে। মানুষের জীবনের ওপর খারাপ প্রভাব পড়বে। আমাদের দেশের ২০১৭ সালের জরিপ অনুযায়ী, হাতি আছে মাত্র ২৬০টি। এর মধ্যে গত ২ বছরে ৪০টির মতো মারা গেছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।’
বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার খুলনায় আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।
মিহির আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি প্রচলন আছে। আমরা যা হালাল তা খেয়ে ফেলি আর যা হারাম তা মেরে ফেলি। একটি বন্যপ্রাণীকে মারতে পারলে নিজেকে বীর ভাবি। দীর্ঘকাল ধরে এটি চলে আসছে। আমরা আসলে জানি না এই প্রাণীগুলো ইকোসিস্টেমকে সহায়তা করে আমাদের বাঁচিয়ে রাখছে।
‘বাঘের ৮০ শতাংশ খাবার আসে হরিণ থেকে। হরিণ মারলে বাঘের খাবারের অভাব হবে। একপর্যায়ে তারা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আবার বাঘ না থাকলে সুন্দরবনে হরিণের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। তখন বনে সদ্য জন্মানো গাছ হরিণ খেয়ে ফেলবে। ফলে সুন্দরবন গাছ সংকটে পড়ে যাবে।’
এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ওয়াসিউল ইসলাম।
ওয়াসিউল বলেন, ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের গুরুত্ব সাধারণ মানুষ বুঝতে চায় না। বন্যজীবীরা মনে করেন, সুন্দরবনে বাঘ থাকলে তাদের জীবন হুমকিতে থাকে। পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষরা মনে করেন, বনে হাতি থাকলে ফসলের ক্ষতি হয়, লোকালয়ে আক্রমণ হয়।
‘এসব প্রাণী যদি আমরা মেরে ফেলি তবে ৫০ বা ১০০ বছর পরে আমাদের ওপর কত বড় খারাপ প্রভাব পড়বে তা এখনও বুঝতে পারছি না।’
এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করতে হলে বনজীবীদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সুশাসন থাকতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা করেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৎস্য বিশেষজ্ঞ মফিজুর রহমান চৌধুরী।