দেশি-বিদেশি পেঁয়াজে ভরপুর পাইকারি বাজারের গুদাম, তবুও দাম ‘ডাবল সেঞ্চুরি’ ।

আভা ডেস্কঃ পেঁয়াজের ভর মৌসুম চলছে। দেশি-বিদেশি পেঁয়াজে ভরপুর পাইকারি বাজারের গুদাম। খুচরা বাজারেও সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে। এমনকি প্রতিদিনই এই নিত্যপণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে। এমন অবস্থার মধ্যেও বৃষ্টির অজুহাত দেখিয়ে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে হু হু করে।

গত তিন দিনের ব্যবধানে এর দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ টাকার বেশি। গত বুধবার প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা। শনিবার বেড়ে পণ্যটি আবার ‘ডাবল সেঞ্চুরি’ হাঁকিয়েছে। কেজি প্রতি সর্বোচ্চ ২১০ টাকা বিক্রি হয়েছে।

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর দাম সর্বোচ্চ প্রতি কেজি ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। পরে আমদানি বাড়ায় ও দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসায় দাম কিছুটা কমে আসে। গত সোমবার থেকে লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে পেঁয়াজসহ শীতের সবজির ক্ষতি হবে- এমন আশঙ্কায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা আবার দাম বাড়াতে শুরু করেছেন। এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারেও।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে তীব্র শীত ও কুয়াশা পড়েছে। তবে এখন অনেক জায়গায় রোদও উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাঠপর্যায় থেকে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে পেঁয়াজ চাষের তেমন ক্ষতি হয়নি। কেননা শীতকালে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় এবং দীর্ঘ সময় বৃষ্টি না হওয়ায় মাটি ছিল শুষ্ক। যে সামান্য পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তাতে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। বরং এই বৃষ্টি সেচের মতো কাজ করেছে। ফলে এর উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া শীত বাড়লে পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়। এবার যেহেতু শীত বেশি পড়ছে সে কারণেও এর ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক চণ্ডী দাস কুণ্ডু বলেন, কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ও কুয়াশা পড়লেও পেঁয়াজের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় রোদ উঠতে শুরু করেছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, সার্বিকভাবে বাজার তদারকি করা হচ্ছে। দিনে দুটি টিম অধিদফতরের পক্ষ থেকে বাজার তদারকি করছে। দাম বাড়ার পেছনে অনিয়ম পেলে ভোক্তা আইনে শাস্তির আওতায় আনা হবে। কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না।

এদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টির কারণে ক্ষেত থেকে কৃষকরা পেঁয়াজ তুলতে পারেননি। এ ছাড়া সরবরাহ ব্যবস্থাও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাবে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। যে কারণে দাম বাড়তে শুরু করেছে। তবে রোদ উঠলে এর সরবরাহ বাড়বে, তখন দাম কমে যাবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

এ বিষয়ে শ্যামবাজারের পাইকারি আড়তদার সংকর চন্দ্র ঘোষ যুগান্তরকে বলেন, কয়েকদিনের বৈরী আবহাওয়ায় কৃষকরা মাঠ থেকে পেঁয়াজ তুলতে পারেননি। আড়তে সরবরাহ কমে গেছে। এ জন্য দাম একটু বেড়েছে। এ ছাড়া চায়না থেকে পেঁয়াজ আমদানি খরচ পড়ছে কেজিতে ৬০ টাকা। যে কারণে বাড়তি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে রোদ উঠলেই আবারও পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়বে। আশা করি দু’দিনের মধ্যে দাম কমে আসবে। এ ছাড়া শৈত্যপ্রবাহ এলে সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে দাম বাড়তে পারে।

শনিবার রাজধানীর পেঁয়াজের পাইকারি আড়ত শ্যামবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে পেঁয়াজের কোনো সংকট দেখা যায়নি। বরং প্রতিটি গুদামে পেঁয়াজের বস্তা থরে থরে সাজিয়ে রাখতে দেখা গেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রাকভরে পেঁয়াজ আসছে। সংশ্লিষ্টরা তা ট্রাক থেকে নামিয়ে গোডাউনে তুলছে। এদিন আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বুধবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ পাইকারিভাবে বিক্রি হয়েছে ৭৫-৮০ টাকা। যা বৃহস্পতিবার বিক্রি হয় ৮৫-৯০ টাকা। শুক্রবার কেজিতে ৮০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ১৭০ টাকা। আর শনিবার কেজিতে আরও ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা। এ ছাড়া আমদানি করা চায়না পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬৫ টাকা। যা তিন দিন আগে বিক্রি হয় ৩৫-৪০ টাকা। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।

রাজধানীর নয়াবাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার, মালিবাগ বাজারসহ একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে পেঁয়াজের কোনো ধরনের সংকট দেখা যায়নি। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি আড়তে পেঁয়াজে ভরপুর। কিন্তু সংকটের কথা বলে বেশি দামে বিক্রি করছে। বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন দিন আগে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০-১২০ টাকা। যা শনিবার বিক্রি হয় ১৯০-২০০ টাকা। আর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভ্যানে বিক্রি হয়েছে কেজিতে সর্বোচ্চ ২১০ টাকা। এ ছাড়া চায়না পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮৫-৯০ টাকা। যা তিন দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা।

নয়াবাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. আরিফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, কয়েক দিন পরপর পাইকারি বিক্রেতারা পেঁয়াজের দাম বাড়ায়। আবার সময় সুযোগমতো মুনাফা করে দাম কমায়। কিন্তু আমাদের মতো খুচরা বিক্রেতারা বেশি দাম দিয়ে আনলে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। কম দামে পেলে কম দামেই বিক্রি করি। এখানে দাম বাড়ার সঙ্গে আমাদের কোনো হাত নেই।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে টিসিবির মাধ্যমে ৩৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি অব্যাহত আছে। বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে এসেছে। কিন্তু এর পরও দাম ভোক্তার নাগালে আসছে না। বরং তিন দিনের ব্যবধানে বৈরী আবহাওয়ার অজুহাতে ব্যবসায়ীরা নিত্যদিনের এ পণ্যটির দাম আবারও বাড়িয়েছে।

অন্যদিকে সরকারি সংস্থা টিসিবি বলছে, গত বছর এই সময় দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৫-৩৫ টাকা। যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকা। সে ক্ষেত্রে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি দরে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত লাভ করছেন। তাই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মাধ্যমে তাদের শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে। এরপরও পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না। জনগণের আমার প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে। মনে হচ্ছে এ অবস্থায় আগুনের মধ্যে বসবাস করছি। তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। ন্যায়সঙ্গত মুনাফা করে ব্যবসা করতে হবে। সরকার ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় সবধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে।

জানতে চাইলে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, নানা অজুহাতে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। গত বছর থেকেই এ দাম বাড়ার চিত্র দেখা যাচ্ছে। সরকারের নানা উদ্যোগে দাম কমতে থাকলেও সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা করার জন্য আবারও দাম বাড়াচ্ছে। যা কোনোভাবে অযৌক্তিক না। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সজাগ দৃষ্টি থাকা উচিত। আর দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারকে এবার শক্ত অবস্থানে যেতে হবে। দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে দাম ভোক্তা সহনীয় করতে হবে।

যুগান্তর

Next Post

রাজশাহীতে মাদক দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে শ্রীঘরে ।

রবি জানু. ৫ , ২০২০
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী নগরীতে ৭০ পিস ইয়াবা দিয়ে সোহেল (২৫) নামের এক যুবককে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে শ্রীঘরে ঢুকেছে মাদক ব্যাবসায়ী কালু (২২)। ৪ ডিসেম্বর শনিবার সকাল ১০টার দিকে নগরীর কাটাখালি থানাধিন টাংগন দেড় পাড়া এলাকা থেকে তাকে আটক করে এএসআই রাজিব ও সঙ্গীয় ফোর্স। আটককৃত কালু নগরীর উপকন্ঠ টাংগন […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links