আভা ডেস্কঃ দুর্নীতিকে উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হিসেবে উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার আগে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ‘অসততা’ দূর করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, একজন দুর্নীতিবাজের পরিচয় শুধুই দুর্নীতিবাজ।
আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘দুর্নীতি উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। দেশ ও সমাজ থেকে যেকোনো মূল্যে দুর্নীতি দূর করতে হবে। একজন দুর্নীতিবাজের পরিচয় শুধুই একজন দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক, দুর্নীতি করলে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।’
আগামীতে দুর্নীতি দমনে দুদককে আরও দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি আশা করব, আপনারা নিজেদের ঘর থেকেই এ অভিযান শুরু করবেন। কিছুসংখ্যক লোকের জন্য যাতে পুরো দুর্নীতি দমন কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখবেন।’
দুদককে ‘সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা’ দেখানোর নির্দেশ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘অন্যের দুর্নীতি চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার পূর্বে নিজেদের অনিয়ম ও অসততা দূর করতে হবে। যারা রাষ্ট্র কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব ও ক্ষমতার অপব্যবহার করবে, তাদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে প্রচলিত আইনের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হবে এবং দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না—জনমনে এমন ধারণা জন্মাতে পারলেই দুদকের ওপর জনগণের আস্থা বাড়বে।’
দুর্নীতির মাধ্যমে কোনো অনৈতিক সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রলুব্ধ না করার জন্যও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান আবদুল হামিদ।
সামাজিকভাবে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব জাগ্রত না হলে শুধু দুদকের একার পক্ষে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয় বলেও মনে করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মানুষের মাঝে দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা তৈরি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমেই কেবল দুর্নীতিকে সহনশীল মাত্রায় কমিয়ে আনা সম্ভব। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বব্যাপী প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, ‘কোনো মানুষ দুর্নীতিবাজ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে না। পারিবারিক, সামাজিক ও আশপাশের পরিবেশই মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। তাই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নিজের ঘর থেকেই শুরু করতে হবে। দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। সৎ, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবানদের সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। তাহলেই দুর্নীতি হ্রাস পাবে।’
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘প্রবাদে আছে, এই দুনিয়ায় হায়, সেই বেশি চায়, আছে যার ভূরি ভূরি, রাজার হস্ত করে কাঙালের ধন চুরি। মানুষের চাওয়া-পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ক্রমশ বাড়তে থাকে। চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে সামর্থ্যের সামঞ্জস্য না থাকলেই দুর্নীতির বিস্তার ঘটে।’
আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি রেখে জীবনযাপনের পরামর্শ দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘তাই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি রেখে জীবন ধারণে অভ্যস্ত হলেই সমাজ থেকে দুর্নীতি হ্রাস পাবে। আমার বিশ্বাস, আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে নব উদ্যোগ ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন দৃঢ় পদক্ষেপে সামনে এগিয়ে যাবে।’
জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্যরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন হচ্ছে আজ।
এ বছর দিনটির প্রতিপাদ্য ‘আপনার অধিকার, আপনার দায়িত্ব: দুর্নীতিকে না বলুন’।
দিবসটিতে দুদক নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দুদকের মামলা দায়ের যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি মামলায় সাজার হারও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক চালুকৃত জাতীয় হটলাইন সেবা ১০৬ ইতিমধ্যে জনগণের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে জনগণ যেকোনো দুর্নীতির ব্যাপারে অভিযোগ করতে পারছে।’
দেশ-বিদেশে দুর্নীতি প্রতিরোধী সংস্থা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের প্রশিক্ষণের তাগিদ দিয়েছেন রাষ্ট্রপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতিসংক্রান্ত মামলা অনুসন্ধান ও তদন্ত আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতিবাজদের কৌশলও বদলেছে।’
রাষ্ট্রপ্রধানের মতে, দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনতে দুদককেও আরও কৌশলী হতে হবে; প্রশিক্ষিত জনবল ও প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে।
তিনি বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।’