তিন কারনেই গাজিপুরে নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি।

আভা ডেস্ক: খুলনা সিটি করপোরেশণ নির্বাচনে বিএনপির সেসব দুর্বলতা ছিল, সেগুলো গাজীপুরেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, তিন কারণে গাজীপুর সিটিতে বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের ভরাডুবি হয়েছে। কারণগুলো হলো—নির্বাচনি প্রচারণায় দুর্বলতা, প্রতিটি কেন্দ্র পোলিং এজেন্ট নিশ্চিত করতে না পারা, নির্বাচনের সময় দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার। দলটির নেতারা বলছেন, এই দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে না পারলে আসন্ন তিন সিটিতে পরাজয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতাদের তেমন কোনও ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকে না। এসব নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ভর করে প্রার্থীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের কর্মদক্ষতার ওপর। গাজীপুরে প্রার্থী হিসেবে হাসান সরকারের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ভালো ছিল। কিন্তু সেখানে স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীরা নির্বাচনে তেমন একটা সক্রিয় ছিলেন না। এজন্য সাংগঠনিক দুর্বতলা যেমন দায়ী, তেমনি দলীয় নেতাকর্মীদের স্থানীয় প্রশাসনের গ্রেফতার-হয়রানিকেও তারা দায়ী করছেন। এছাড়া এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীর চাইতে প্রশাসনের বড় ভূমিকা ছিল। যা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সবার নজরে এসেছে।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের সমন্বয়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠিন সম্পাদক (ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) ফজলুল হক মিলন বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট বলেন, ‘গাজীপুর সিটিতে বিএনপি হারেনি, হেরেছে দেশের জনগণ। প্রশাসনের সহায়তায় সরকার দলীয় লোকেরা ভোটচুরি-জালভোট দিয়ে তাদের প্রার্থী জিতিয়েছে, যা বিশ্ববাসীও দেখেছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন আবারও প্রমাণ করেছে যে সুষ্ঠু নির্বাচন করার যোগ্যতা তাদের নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রচারণায় তেমন কোনও ঘাটতি ছিল না। তবে প্রচারণার সময়ও বিভিন্ন জায়গায় বাধাপ্রাপ্ত হয়েছি।’

তবে গাজীপুরে দায়িত্ব পালন করেছেন, বিএনপির এমন একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘খুলনা সিটিতে নির্বাচনি প্রচারণায় তেমন ঘাটতি ছিল না। কিন্তু গাজীপুরে প্রথমদিকে যে রকম সরব প্রচারণা ছিল, সেটা নির্বাচনের দুই দিন আগে অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ে। তখন থেকেই মূলত বিএনপি নির্বাচনে পিছিয়ে পড়ে। এর বাইরে খুলনার মতো প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিশ্চিত করা যায়নি, যা নির্বাচনে হারে বড় প্রভাব ফেলেছে। প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট ও ভোট কেন্দ্রের বাইরে ভোটার স্লিপ বুথ নিশ্চিত করা গেলে এমন পরাজয় হতো না।’

গাজীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহবুব উল হক গোলাপ বাংলা ট্রিবিউন বলেন, ‘সব ধরনের বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে স্থানীয় নেতাকর্মীরা নির্বাচন কাজ করেছে। তবে এসব বিষয় নিয়ে আমি ফোনে কিছু বলতে পারবো না।’

বিএনপির গাজীপুর নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনে আমরা পোলিং এজেন্ট দেইনি, এটা ঠিক নয়। প্রতিটি বুথের জন্য একজন করে পোলিং এজেন্ট নির্ধারণ করা ছিল। সেই অনুযায়ী সকালে ভোট শুরুর পর থেকে টঙ্গি এলাকার প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু দুপুর ১২ টার পর থেকে বাধার কারণে আর পোলিং এজেন্টরা থাকতে পারেননি। আর টঙ্গির বাইরে অন্য এলাকার ভোট কেন্দ্রের অনেক এজেন্টকে আগের রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। কাউকে কাউকে কেন্দ্রে না যেতে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিশ্চিত করা যায়নি।’

সোমবার (২৬ জুন) নির্বাচনের দিন বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে অধিকাংশ কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি।এরমধ্যে কোনাবাড়ীর আইডিয়াল হাইস্কুলে স্থাপিত ৬০ নম্বর (পুরষ) কেন্দ্র, পারিজাত কোনাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত ৫৭ নম্বর (পুরুষ) কেন্দ্র, মোহাম্মদীয়া ইসলামিয়া কওমি মাদ্রাসা ৫৮ নম্বর (মহিলা) কেন্দ্র, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আমজাত আলী সরকার পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়-২ (মহিল), রাজ্জাক মাস্টার দাখিল মাদ্রাসার ১১০ ও ১১১ নম্বর (মহিলা) কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি। তবে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী আহম্মদ আলী পাবলিক স্কুল কেন্দ্রে (মহিলা), ১ নম্বর ওয়ার্ডের টঙ্গীর আশা মডেল স্কুল ভোটকেন্দ্রে (মহিলা), ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের আমজাত আলী সরকার পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়-১ (পুরুষ) এসব কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপির মিড়িয়া সেলের প্রধান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেইনি, এটা ঠিক নয়। গাজীপুরে ৪২৫টি কেন্দ্রে ২ হাজার ৭৬২টি বুথ ছিল। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে আমাদের পোলিং এজেন্ট ঠিক করা ছিল। কোথাও বিকল্প এজেন্টও ছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগের রাত থেকে পোলিং এজেন্টদের অ্যারেস্ট করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন সকালে অনেক সেন্টার থেকে এজেন্টদের সাদা পোশাক পুলিশের ধরে নিয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া সকালে যেসব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টরা গিয়েছিলেন, তাদের সাদা পোশাকের বিভিন্ন সংস্থার লোকজন কেন্দ্রে গিয়ে বলেছেন, আধাঘণ্টা থেকে একঘণ্টা সময় দিলাম, চলে যাও। এরপর অনেকে কেন্দ্র থেকে বের হতে বাধ্য হয়েছেন। এ সুযোগে কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের উৎসব করে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। এগুলোর অনেক প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। এসব রেকর্ড আমার দলের নীতি-নির্ধারকদের কাছে পাঠিয়েছি।’

বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনের দিন অভিযোগ করা হয় তাকে অনেক এজেন্টকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও ডিবি।

দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘নির্বাচনের দিন ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড আঞ্জুমান হেদায়েতুল উম্মত কেন্দ্র এজেন্ট হাবীবুর রহমান, ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড টিডিএইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের এজেন্ট ফারুক, ৩১ নম্বর ওয়ার্ড ধীরাশ্রম জি. কে আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র এজেন্ট সেলিম রেজা, বিএনপি নেতা মানিক, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাহারা খাতুন কিন্ডারগার্টেন কেন্দ্রের এজেন্ট মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম, ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র থেকে সাবেক কমিশনার শরিফ মিয়া, ৩৪নং ওয়ার্ডের শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে মনির হোসেন মোতাহার, ৩৬নং ওয়ার্ডের গাছা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ধানের শীষের এজেন্ট গাজীউল হক ও মামুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) গাজীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল আমিন সজীব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার মনে হয় গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের বড় কারণ হচ্ছে শেষ মুহূর্তে তাদের প্রচার-প্রচারণা ভালো ছিল। আর বিএনপির পরাজয়ের কারণ ছিল দলটির প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের নির্বাচনি প্রচারণা ছিলেন না নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের জয়ের বড় কারণ শ্রমিক ভোটার। নির্বাচনের বিজিএমইএ লোকজন এসে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে গেছে। যার কারণে শ্রমিক ভোটের বড় অংশ আওয়ামী লীগ প্রার্থী পেয়েছেন।’

বাংলা ট্রিউব্রুন

Next Post

অবশেষে বেতন পেল আরবান হেলথ কেয়ার কর্মীরা।

বৃহস্পতি জুন ২৮ , ২০১৮
নিজস্ব প্রতিবেদক: সন্ধ্যায় বেতন পেলো আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস কর্মকর্তা কর্মচারীরা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে এসএমএস এর মাধ্যমে নিশ্চিত হন তারা। এসএমএসে আড়াই মাসের বেতন দেয়া হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানায়। এর আগে বেতনের দাবিতে সাকলে প্রজেক্ট ম্যানেজার ও রাজশাহী জেলা প্রশাসককে কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করে কর্মকর্তা কর্মচারীরা। ফিল্ড অফিসার […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links