টাকা দিলেই মোহনপুরে মিলে পুকুর খননের অলিখিত অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় কৃষি জমি খনন করে চলছে পুকুর খননের মহাৎসব। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসিল্যান্ডকে টাকা দিলেই অলিখিত অনুমোদন পায় পুকুর খননকারীরা। এই সুযোগে তিন ফসলী ধানি জমি কেটে পুকুর খননে ব্যতিব্যস্ত হয়েছেন ভুমি খেকোরা।

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় কৃষি জমি রক্ষায় সহকারী কমিশনার ভূমি, কৃষি ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কোন কার্যকরী উদ্দ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি।  ফলে ভুমি খেকোদের কড়াল থাবায় প্রতি বছর কমছে ফসলি জমি। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে ৬ ফেব্রুয়ারী মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তিন ফসলি জমিতে সরকারি-বেসরকারি প্রকল্প গ্রহণ বন্ধে কঠোর নির্দেশনা দেন। কিন্তু প্রশাসনের ছত্রছায়ায় মোহনপুরসহ জেলার শত শত বিঘা ফসলি জমি ধ্বংস করে পুকুর-দিঘি খনন চলছে। স্থানীয় প্রশাসন দায়সারা অভিযান চালালেও দিনে ও রাতে পুকুর খনন কাজ অব্যাহত রয়েছে।

জেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানা পুলিশের কাছে ভুক্তভোগী কৃষকরা প্রতিকার পেতে প্রতিদিন অভিযোগ দিচ্ছেন। কিন্তু কোনক্রমেই বন্ধ হচ্ছেনা পুকুর খনন। খননকারীরা ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা, এসিল্যান্ড ও থানা পুলিশ, সাংবাদিকদের পেছনে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে মুখ বন্ধ রাখছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

অভিযোগ, কৃষকদের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী মহল ভেকু দিয়ে পুকুর খনন করছে। ফসলি জমি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা মাঠ প্রশাসন পালন করছে না।

তাদের অভিযোগ, ফসলি জমি রক্ষায় অভিযোগ করায় প্রশাসন দায়সারা ও লোক-দেখানো অভিযান চালায়। দুপুরে অভিযান চালিয়ে খনন বন্ধ করা হলেও কয়েক ঘণ্টা পর আবার খননকাজ শুরু হয়। প্রশাসনের পরামর্শে কখনো দিনে অথবা রাতভর খননকাজ চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। যেখানে ফাঁকা জমি পাচ্ছে সেখানে ভেকু দিয়ে খননে নেমে পড়ছে দখলদাররা। উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ফসলি ও সেচ সুবিধাসম্পন্ন জমিতে নির্বিঘ্নে চলছে পুকুর খনন।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিগত তিন বছরে এ উপজেলায় কৃষি জমি কমেছে ৪’শ হেক্টর। বর্তমানে এ উপজেলার আবাদি জমির পরিমান ১১হাজার ৩’শ ১২ হেক্টর যা ২০২০ সালে ছিল ১২ হাজার ৩’শ ১২ হেক্টর। আবাদি জমি কমার সবচেয়ে বড় কারণ হলো ফসলি জমিতে অবৈধ পুকুর খনন। অন্যান্য কারণ অপরিকল্পিত বাড়ি ঘর ও রাস্তা নির্মান।

উপজেলা মৎস্য অফিসের মাধ্যমে জানা গেছে, উপজেলায় বর্তমান পুকুরের আয়তন ১হাজার ২’শ ২৪ হেক্টর। যার মধ্যে সরকারি পুকুর ৩’শ ৫০টি, বেসরকারি ৩ হাজার ৭’শ ৬টি, বাণিজ্যিক খামার ৪৭টি।

উপজেলায় ২০২০ সালে পুকুরের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬’শ ১২টি। বর্তমানে পুকুরের সংখ্যা ৩ হাজার ৭’শ ৫৩টি। গত তিন বছরে এ উপজেলায় ১’শ ১২ টি পুকুর খনন করা হয়েছে।

বর্তমানে উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় মহাসড়কের পাশে পত্রপুর ব্রীজের ধারে ২৬ বিঘা ফসলি জমিতে নতুন পুকুর খনন করছেন মৌগাছি ইউপি’র বাটুপাড়া গ্রামের আদম ব্যবসায়ী আয়েজ উদ্দিন ও নন্দনহাটের মিজান নামে এক ভূমিদস্যু। পুকুর খননের দ্বায়িত্বে আছেন ভেকু মালিক রফিক। একই স্থানে ১০ বিঘা ধানি জমিতে পুকুর কাটছেন নওহাটা মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান মানজান। অপরদিকে ঐ পুত্রপুরের বিপরীতে সাবাইবিলে ১০০ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করছেন মামুন। ঐ মামুন অতিরিক্ত সচিব আলমগীর কবীর নামে একজন সচিবের নামে দীর্ঘদিন যাবৎ পুকুর খননের কাজ চালিয়ে আসছে। মামুনের পুকুর খননের দ্বায়িত্বে থাকেন জাহিরুল।

পুকুর খননকারীদের দাবি তারা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এবং ইউএনও অফিসে পুকুর খননের আবেদন জমা দিয়ে খনন কাজ চালাচ্ছে।

এ উপজেলায় যতগুলি পুকুর সংস্কার, নতুন পুকুর খনন করে মাটি বিক্রয় করা হয়েছে প্রতিটি সেক্টর থেকেই প্রশাসনের নামে উঠেছে টাকা। পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে চলেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরই মধ্যে পুকুর খননকারীরা তাদের কাজ শেষের দিকে নিয়ে এসেছেন। দিন-রাত চলছে পুকুর খনন। নতুন পুকুর খননের জন্য হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনের অলিখিত অনুমোদন বা চুক্তি।

পত্রপুরে পুকুর খনন বিষয়ে ইউএনও-কে জানানো হলে তিনি এসিল্যান্ডকে নির্দেশ দিলে এসিল্যান্ড অবৈধ পুকুর খননের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানার পরক্ষণে ১ টি ভেকুর পরিবর্তে আরো ৩টি ভেকু মেশিন দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। স্থানীয়রা ধারনা করছেন প্রশাসনের পরামর্শেই ৪টি ভেকু মেশিন দিয়ে দিনে ও রাতে খনন কাজ শেষ করার চেষ্টা করছে পুকুর খননকারীরা।

মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা ফাতেমাতুজ্- জোহ্ রা বলেন, পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। ম্যানেজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব ফালতু কথা কোথায় পান। ভুক্তভোগী জমির মালিকরাও অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার পাচ্ছেন না এমন বিষয়ে, তিনি বলেন অভিযোগ পেয়েই আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি।

এ বিষয়ে জানতে মোহনপুর উপজেলা’ (ভূমি) সহকারী কমিশনার প্রিয়াঙ্কা দাসকে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি ।

সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছরে শুধু পুকুর-দিঘি খননে রাজশাহীর ১২ হাজার হেক্টরের বেশি ফসলি জমি ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার হেক্টর আমবাগানও রয়েছে।

Next Post

ঈশ্বরদীতে রাস্তা দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন

শনি মে ২০ , ২০২৩
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি: ঈশ্বরদীতে রাস্তা দখল করার অভিযোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২০ মে)  সকালে ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সামনে পৌর শহরের মশুরিয়া পাড়ার ভুক্তভোগী এলাকাবাসী এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এ সময় মানববন্ধনে ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর পক্ষে রুমি খাতুন বলেন, “মুক্তিযোদ্ধা আকরাম খান কেমন মুক্তিযোদ্ধা যে গ্রামবাসীর রাস্তা দখল করে রাখে। আমাদের ৪০ […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links