আভা ডেস্ক :যশোরের চৌগাছা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমানকে ‘স্টুপিড’ বলেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবাদত হোসেন। মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদের মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভা চলাকালে তিনি চেয়ারম্যানকে গালাগাল করে আরও বলেন, ‘এ লোকের সঙ্গে কিসের মিটিং করব?’ চেয়ারম্যানও পাল্টা তাকে ঘুষখোর অভিহিত করে বলেন, ‘উনাকে না মেরে ভাত খাওয়া যায় না।’
মঙ্গলবার দুপুর ১টায় চৌগাছা উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন সভায় উপস্থিত একাধিক সদস্য।
সভায় অংশগ্রহণকারী একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান জানান, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভা শুরু হয়। সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবাদত হোসেনের সঞ্চালনায় সরকারি দফতরগুলোর প্রধানরা তাদের অফিসের কাজের অগ্রগতি পর্যায়ক্রমে উপস্থাপন করতে থাকেন। একপর্র্যায়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এএসএম আবদুল্লাহ বায়েজিদ তার দফতরের কার্যক্রম উপস্থাপনের সময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ‘অতি দরিদ্রদের জন্য ৪০ দিন কর্মসৃজন প্রকল্প’র বিল পরিশোধ করতে কেন এত দেরি হচ্ছে জানতে চাইলে পিআইও বলেন, ৩টি ইউনিয়নের বিল দেয়া হয়েছে। অন্য আট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা বিল জমা না দেয়ায় বিল দেয়া যাচ্ছে না বলে জানান। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, আমি উপজেলা চেয়ারম্যান। নিয়মানুযায়ী উপজেলা পরিষদের সব কাজ আমার সঙ্গে সমন্বয় করে করতে হবে। অথচ আমাকে না জানিয়ে নিজেদের ইচ্ছা মতো শ্রমিক কর্তন করে বিল দিচ্ছেন। আপনারা পেয়েছেন কী? পাল্টা উত্তরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আপনার সঙ্গে কিসের সমন্বয় করবে। তার এ কথায় শুরু হয় বাদানুবাদ, যা একপর্যায়ে বাকযুদ্ধে পরিণত হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘুষখোর বললে নির্বাহী কর্মকর্তা উঠে দাঁড়িয়ে সংযত হয়ে কথা বলতে বলেন। নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যান একে অপরের দিকে তেড়ে যান। এ সময় ইউএনও উপজেলা চেয়ারম্যানকে ‘স্টুপিড’ বললে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে।
চেয়ারম্যান বলেন, ‘বেয়াদব, আপনি শুধু কর্মসৃজন থেকেই নয়, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর থেকেও ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।’ এ সময় পাশের চেয়ারে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রনি আলম নূর উভয়কে শান্ত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ সময় ‘ওর সঙ্গে কিসের মিটিং করবে?’ বলে সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যান এবং তার সিএ মহিউদ্দিনসহ সব কর্মকর্তাকে মিটিং থেকে বেরিয়ে আসতে বলেন। তবে সিএ মহিউদ্দিন বেরিয়ে গেলেও অন্য কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা তাদের সিটে বসেই থাকেন। তখন উপজেলা চেয়ারম্যান বলতে থাকেন, ‘তাহলে কি উনারে না মেরে ভাত খাওয়া যায়?’ এ ঘটনার ৫ মিনিট পর নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেই সভাকক্ষে প্রবেশ করে তার সিটে বসে পিআইওকে তার অসমাপ্ত বক্তব্য শেষ করতে বলেন। পিআইও বক্তব্য দেয়া শুরু করলে আবারও উপজেলা চেয়ারম্যান এবং নির্বাহী অফিসারের মধ্যে বাকযুদ্ধ শুরু হয়। এ সময় অপর পাশের চেয়ারে বসা উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশীষ মিশ্র জয় এবং ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের এহেন আচরণে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান।
চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অতি দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রতিটি ঘর থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে নিয়েছেন, যা আমার কাছে প্রমাণ আছে। ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের হাজিরা থেকে উৎকোচ নিতে না পেরে অধিক পরিমাণ শ্রমিকের হাজিরা কর্তন করছেন। আগেও তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার-দফাদারদের মাসিক বেতন না দিয়ে তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। তবে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবাদত হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কোনো অনিয়ম করিনি। ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের বিল যাচাই-বাছাই করে দেয়া হয়েছে। এতে অনেকের গাত্রদাহ হচ্ছে।
যুগান্তর