চুরি থামছে না রাজশাহী মৎস্য অধিদপ্তরের খামারে

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বছরের পর বছর অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে রাজশাহী মৎস্য ভবন পরিচালিত খামারে চলছে চুরিদারি। প্রায় দ্বিগুণ দামে রেণুপোনা কেনা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য চাষীরা এরকমই অভিযোগ করে আসলেও নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি।

মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এদিকে ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাজা মাছ সরবরাহের কারণে রাজশাহীর বিশেষ খ্যাতি হিসেবে ইতোমধ্যে মিলেছে “লিভিং ফিশ ট্রান্সপোর্টার সিটি” উপাধি। এখানে মৎস্য চাষীরা রাজশাহী জেলা মৎস্য খামারের উপর নির্ভরশীল। বেসরকারি খামার ও নিজস্ব উদ্যোগে পোনা উৎপাদিত হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকার নির্ধারিত দামের প্রায় দ্বিগুণ দামে পোনা বিক্রি করে খুদে মৎস্য  চাষীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। রাজশাহী নগরীর বর্ণালী মোড়ের বিভাগীয় মৎস ভবন ক্যাম্পাসের ভেতরেই রয়েছে এই সহকারী মৎস্য খামার। বছরের ৯ মাস অর্থাৎ তিন মাস বাদে প্রতি সোমবার সকাল সাতটা পর্যন্ত পোনা বিক্রি করা হয়। এখানে কোন সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করা হয় না। একদিকে যেমন সরকারি অর্থ লোপাট হচ্ছে, তেমনি ভাবে মৎস্য চাষীরা সরকারের দেয়া সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি রোববার গভীর রাতে মৎস্য চাষীদের কার কোন মাছের পোনা কতটুকু লাগবে সেটা সাদা কাগজে লিখে টোকেন দিয়ে টাকা জমা নিচ্ছেন, পরদিন ভোরে ফজরের নামাজের সময় থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত মাছের রেণু পোনা বিতরণ করছেন। মৎস্যচাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদেরকে কোন রশিদ দেয়া হয় না, বাটা মাছের রেনু পোনা প্রতিকেজি ৪ হাজার টাকা, রুই কাতলা মাছের রেনু পোনার জন্য কেজি প্রতি ৩ হাজার টাকা করে নেয়া হচ্ছে। যেখানে সরকারি হিসেবে সব ধরনের মাছের রেনু পোনা ১৭০০ টাকা নেবার কথা। পোনা নিতে আসা আব্দুল্লাহ আল তারিক নামে একজন জানালেন, সব ধরনের মাছের রেনু পোনার জন্য কেজিতে ৩০০০ টাকা এবং প্রতি ১০০ গ্রাম এর জন্য  ৩০০ টাকা ধরা হয়। একই কথা জানালেন টিকাপাড়া এলাকার সোহেল রানা, তিনি বলেন, বাটা মাছের পোনার জন্য কেজি প্রতি ৪ হাজার টাকা এবং অন্য সব মাছের পোনার জন্য ৩ হাজার টাকা করে নেয়া হচ্ছে। একই ধরনের অভিযোগ করেছেন আরও ডজন খানেক মৎস্য চাষী।

একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানান, মা মাছ সংগ্রহের মৌসুমে প্রয়োজনের তুলনায় তিন-চার গুন বেশী মা মাছ কেনার ভাউচার তৈরী করা হয়। এছাড়াও গলদা চিংড়ির একটি প্রকল্প কাগজে কলমে থাকলেও তা দৃশ্যমান হয়নি কখন-ই।

উল্লেখ্য,  ২০১৯ সালের জুলাই মাসের ১৯ তারিখে জাতীয় দৈনিক সকালের সময়, ২০ তারিখে জাতীয় দৈনিক মানব জমিন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল দৈনিক জাগরণ, রাজশাহীর সময়.কম সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় তৎকালীন খামার ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক এর অনিয়মের নিউজ প্রকাশিত হলে তাকে বদলি করা হয়। এরপর রাজশাহীর মৎস্য খামারের ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করেন ড. জিনাত আরা। তিনি যোগদানের পর কিছুদিন নিয়মমাফিক  চালালেও আবারও আগের নিয়মেই চলতে থাকে খামারটির নিয়মিত কার্য্যক্রম।

এ বিষয়ে কথা বলতে, পর পর তিন দিন অফিসে গিয়েও পাওয়া যায়নি খামার ব্যবস্থাপক ড. জিনাত আরাকে । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৎস্য খামারে কর্মরত একজন জানালেন, তিনি তার নিজ এলাকার একজন সংসদ সদস্যের বোন হওয়ার দাপট দেখিয়ে আমাদের সাথে প্রায়ই খারাপ আচরণ করেন। আর চুরিদারির বিষয়ে কথা তুললে বলেন, আমাকে কেউ কিছুই করতে পারবে না। তিনি প্রতি সোমবার সকাল ছাড়া বেশীরভাগ সময়ই অফিসে অনিয়মিত। অপর এক কর্মচারী বলেন, অতিরিক্ত টাকা নাকি তিনি একা খান না, মৎস্য ভবনের উর্ধ্বতন সকল কর্মকর্তাকেই দিতে হয়। এছাড়াও মাষ্টার রোল কর্মচারীদেরকে সরকারের দেয়া বেতনের বাইরেও টাকা দিতে হয়। অফিসে না পাওয়ায় তার মুঠোফোনে বারংবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা বলেন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে ভালো হয় ; বিষয়টি আমার জানা নাই, এখন জানলাম, ঘটনা সত্যি হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। অপর প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্বীকার করেন, ২০১৯ সালে খামার ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিক’র নামে অনিয়মের অভিযোগও তিনি মিডিয়া কর্মীদের কাছ থেকেই জেনেছিলেন।

Next Post

রাজশাহীতে ৭ জুয়ারি আটক

শনি মে ২২ , ২০২১
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ৭ জুয়ারিকে আটক করেছে। এসময় তাদের থেকে তাস ও নগর টাকা উদ্ধার করে। নগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আটককৃতরা হলেন- মো. মাসুদ (৪০), মো. কামাল (৫৩), মো. শহিদুল ইসলাম (৪৩), মো. শফিকুল ইসলাম (৪২), মো. হবিবর রহমান (৬০), […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links