গোলাপের সুবাস আজ না ছড়াক/ কুসুমকলি আজ না হোক জীবন, তবু আজ বসন্ত…।

নবপ্রবর্তিত বর্ষপঞ্জিতে গতকাল ছিল মাঘের শেষ দিন। তবে ষড়্ঋতুর এদেশে প্রতি বছরের মতো প্রকৃতিতে এসেছে ফাগুন। ক্যাম্পাস, সড়কমালা, পথঘাট, বইমেলা, পার্ক-উদ্যান-খোলা প্রাঙ্গণগুলোতে দেখা গেছে প্রাণোচ্ছ্বাসে ঋতুরাজ বসন্ত বরণের মুখরতা। বাসন্তীরাঙা বসন আর ফুলের শোভায় সেজে ঘর থেকে বেরিয়েছে তরুণ-তরুণীরা। তরুণীদের মাথায় ছিল গাঁদা ফুলের রিং। হলুদ শাড়ি। আমের মঞ্জরিত মুকুলে ছিল মৌমাছির গুঞ্জরণ, বাগিচায় ফুলের বাহার আর এই নগরেও কোকিলের কুহুতানও থেমে ছিল না। অভ্যাসবশত অনেকে চারুকলার বকুলতলায় গিয়ে হতাশ হয়েছেন। সেখানে বসন্ত বরণের সাংবাত্সরিক যে উত্সব তা হয়নি কাল। কারণ সরকারি নবপঞ্জিতে কাল বসন্ত আসেনি।

বাংলা বর্ষপঞ্জিতে সংশোধনের কারণে এখন থেকে বাংলা ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে পড়ছে। এযাবত্ ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন পালিত হতো, আর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব জুড়ে পালন করা হয় ভালোবাসা দিবস। তবে আজ থেকে দুটি দিবসই বাংলাদেশে একই দিনে পড়ল। বাংলার বসন্তের সঙ্গে পশ্চিমা খ্রিষ্টানদের সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে।

বসন্তের এই সময়ে শীতের রিক্ততা মুছে ফেলে প্রকৃতি জুড়ে থাকে যেন কীসের ছোঁয়া, যেন সোঁদা মাটি আর বহেড়া ফুলের গন্ধ মেশানো। হাওয়াটাও যেন কেমন কেমন! একটু এলোমেলো, কবোষ্ণ। মনকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে শিমুল-পলাশ-আশোকের রক্তরাগে—তার ঝরা ফুলের গন্ধে…। ফাল্গুনে পাগল হাওয়ার উত্তরীয় উড়িয়ে বনফুলের পল্লবে, দখিন-বাতাসে শিহরন জাগানোর দিন এলো। উতরোল মৌমাছিদের ডানায় ডানায়, নিরাভরণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে উঠবার আভাসে আর বনতলে কোকিলের কুহুতান বলছে : ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে..।’ ‘আজি দখিন দুয়ার খোলা/ এসো হে এসো হে এসো হে আমার বসন্ত’—কবিকণ্ঠের এ প্রণতির মাহেন্দ্র লগন এলো। গণমানুষের কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অমর পঙিক্ত ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক/ আজ বসন্ত…। গোলাপের সুবাস আজ না ছড়াক/ কুসুমকলি আজ না হোক জীবন, তবু আজ বসন্ত…।

হূদয়দল খোলার দিন এলো। বসন্ত বিরাজ করে বনে মনে উপবনে। এমন মধুর সময়ে প্রকৃতি আর প্রাণের আপন উচ্ছ্বাস উত্সবের রঙে ঢঙে মদিরায় মেতে ওঠে। ফুল ফুটবার পুলকিত দিনে বন-বনান্তে কাননে কাননে পারিজাতের রঙের কোলাহলে ভরে ওঠে চারদিক।

বসন্তের বন্দনা করে একটি পঙিক্তও লেখেননি, এমন বাঙালি কবি খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভানুসিংহ ঠাকুরের উতলা চিত্তের আকুলতা এমন—‘বসন্ত আওলরে! মধুকর গুনগুন,/ অমুয়া মঞ্জরী কানন ছাওলরে।/ মরমে বহই বসন্ত সমীরণ, মরমে ফুটই ফুল/ মরমকুঞ্জ’পর বোলই কুহুকুহু অহরহ কোকিলকুল…।’

‘ফুলের বনে যার পাশে যাই তারেই লাগে ভালো…’ কবিগুরুর এই পুলকিত পঙিক্তমালা বসন্তেই কি সকলের বেশি মনে পড়ে? কৃষ্ণচূড়া লাল হয়েছে ফুলে ফুলে, তুমি আসবে বলে…। বনে বনে রক্তরাঙা শিমুল-পলাশ, অশোক-কিংশুকে বিমোহিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, ‘এলো খুনমাখা তূণ নিয়ে/ খুনেরা ফাগুন…।’ আবার তারই কণ্ঠে ; ‘ফাগুন এলো বুঝি মহুয়া-মালা গলে/ চরণ-রেখা তার পিয়াল-তরুতলে/ পরাগ-রাঙা চেলি অশোক দিল মেলি’…

বসন্ত বাতাসে পুলকিত ভাটিবাংলার কণ্ঠ শাহ আবদুল করিম গেয়ে ওঠেন :‘বসন্ত বাতাসে…সই গো/ বসন্ত বাতাসে/ বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে…।’

সাগর, নদী, ভূভাগ গ্রীষ্মের তাপবাষ্পে নিঃশ্বাস নেবার আগে এ বসন্তের ফাল্গুনে পায় শেষ পরিতৃপ্তি। নৈসর্গিক প্রকৃতি বর্ণচ্ছটায় বাঙ্ময় হয়ে ওঠে। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালি তরুণ মনে লাগে দোলা। হূদয় হয় উচাটন। ফুল ফুটবার পুলকিত দিন বসন্ত। বন-বনান্তে, কাননে কাননে—পারিজাতের রঙের কোলাহল, আর বর্ণাঢ্য সমারোহ। ‘আহা আজি এ বসন্তে/ এত ফুল ফোটে এত বাঁশি বাজে এত পাখি গায়…।’ আমাদের ঋতুরাজ বসন্তের আবাহন আর পশ্চিমের ভ্যালেন্টাইন ডে যেন এক বৃন্তের দুটি কুসুম। এ যেন এক সুতোয় গাঁথা দুই সংস্কৃতির এক দ্যোতনা। বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। কচিপাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও লাগবে দোলা। বিপুল তরঙ্গ প্রাণে আন্দোলিত হবে বাঙলি মন। বাঙালি জীবনে বসন্তের আগমন বার্তা নিয়ে আসে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। এ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল।

ডেস্ক প্রতিবেদকঃ

Next Post

গাইবান্ধায় ভুয়া ডিবি পুলিশ আটক ।

শুক্র ফেব্রু. ১৪ , ২০২০
গাইবান্ধায় আয়াত খান (২২) নামে এক ভুয়া ডিবিকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার(১৩ ফেব্রুয়ারী) দিনগত রাত সাড়ে দশটার দিকে গাইবান্ধা শহরের পোষ্ট অফিস এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটককৃত আয়াত শহরের মধ্যপাড়া এলাকার মিলু খানের ছেলে । স্থানীয়রা জানায়, ব্রীজ রোড এলাকার টুটুল কনফেকশনারী থেকে তানভীর নামে এক ছেলেকে ডিবি […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links