আভা ডেস্কঃ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, গুজবের কারণে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। তাই গুজব বন্ধ করে পুঁজিবাজারকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট আইনটি পুরোপুরি শক্তিশালী করা হবে। পাশাপাশি বিদ্যমান আইনগুলো পুরোপুরি কমপ্লায়েন্স ও প্রয়োগ করা হবে।
বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজার উন্নয়নে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, ‘তাদের (ডিএসই) কমপ্লায়েন্স দুর্বল। গুজব ছড়িয়ে পুঁজিবাজারে কারসাজি করা হচ্ছে।’
সরকারের অনেক এজেন্সি থাকার পরও গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তাহলে এজেন্সিগুলোর কাজ কি- এমন প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আইন শক্তিশালী হলে এজেন্সিগুলো কাজ করতে পারবে। কিন্তু আইনে দুর্বলতা থাকলে করা যাবে না। আমি সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানকে বলেছি পুঁজিবাজারে শতভাগ কমপ্লায়েন্স করতে হবে। যদি আইনকে আরও শক্তিশীল করতে হয় প্রয়োজনে তাই করা হবে।’
রাজধানীর আগারগাঁও পরিকল্পনা কমিশনে অর্থমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা দু’ঘণ্টা বৈঠক হয়। সেখানে ডিএসই’র পক্ষে পুঁজিবাজার উন্নয়নে উচ্চ পর্যায়ের ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠনসহ ১১ দফা প্রস্তাব দেয়া হয়।
মন্ত্রী বলেন, ‘পুজিবাজারে আরও একটি গুজব ছিল সরকার ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমানো নিয়ে। কিন্তু টাকার মূল্যমান কমানোর কোনো চিন্তা সরকারের নেই। টাকার মূল্যমান কমানোর প্রয়োজন নেই। ডিসেম্বরে রেমিটেন্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪০ শতাংশ। একটি আইটেমে প্রবৃদ্ধি ৪০ শতাংশ রের্কড। এটি উদাহরণ হিসেবে আনছি এ জন্য যে, রেমিটেন্স খাতেও টাকার মূল্যমান কমানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখাতে ২ শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে এ অর্জন করা হয়। ফলে কোন খাতে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের কিছু ভালো শেয়ার বাজারে আনার প্রস্তাব দিয়েছে ডিএসই। আমি বলেছি, এ বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। শেয়ার বাজারে আনতে সময় প্রয়োজন। কবে আনব সেটি দিনক্ষণ দিয়ে বলতে পারব না। তবে একমত তাদের সঙ্গে প্রকাশ করেছি যে, সরকারের ভালো শেয়ার বাজারে আনা হবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পুঁজিবাজারে এডভান্স ইনকামট্যাক্স (এআইটি) কেটে নেয়া হয়। এআইটি হার কম করে কাটা যায় কিনা এ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এটি বিবেচনা করার কথা বলেছি। যতটুকু সম্ভব বিবেচনা করা হবে। ব্যাংকিং ফাইন্যান্স ব্যবহারের সুবিধা চেয়েছে ডিএসই। অন্য ব্যবসার ক্ষেত্রে একজন গ্রাহক ব্যাংকে গিয়ে ঋণ করতে পারে, ঠিক তেমনিভাবে পুঁজিবাজারের ব্যবসায়ীরা যেন একই সুবিধা পায়- এটি তাদের (ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ) দ্বিতীয় প্রস্তাব ছিল। আমরা বলেছি ব্যাংকে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে কারও কোনো বাধা নিষেধ নেই। এটি ব্যাংক ও গ্রাহকের সম্পর্কের ভিত্তিতে হবে। অন্যরা যেভাবে ব্যাংকের ঋণ পায়, একইভাবে পুঁজিবাজারের ব্যবসায়ীরা যেন সে সুবিধা পায়। পুঁজিবাজার বিগত সময়ে সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেছে। এ রের্কড থেকে মনে হচ্ছে পুঁজিবাজারের অবস্থা ব্যাংকিং জগতে আরও ভাল হবে। এ প্রস্তাবও গ্রহণযোগ্য বলে তাদের জানানো হয়েছে।’
বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর কাছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে ১১ দফা প্রস্তাব দেয়া হয়। এসব প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে আনয়ন, টি-বন্ডের লেনদেন যথা শীঘ্র চালুকরণ, বহুজাতিক কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে উদ্বুদ্ধ করা, গ্রামীণফোন এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বন্দ্বের দ্রুত নিষ্পত্তি করা।
এছাড়া ডিএসই’র কর্পোরেট কর হার ৩৫% এর পরিবর্তে ১৫% নির্ধারণ, স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেকহোল্ডারদের কাছ থেকে ট্রেডের ওপর অর্থ আইন ২০০৫ এর ৫৩ (বিবিবি) অনুযায়ী ০.০১৫% এর পরিবর্তে ০.০৫% হারে উৎসে আয়কর আদায় এবং লেনদেনের ওপর কর হার ০.০১৫% নির্ধারণ করা। প্রস্তাবের মধ্যে আরও আছে অডিট রিপোর্টের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, বাজারে অর্থের সরবরাহ বৃদ্ধি, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সমন্বয় কমিটি গঠন ও ঋণ প্রস্তাবের বিশেষ বিবেচনার অনুরোধ।
যুগান্তর