আভা ডেস্ক:
রাজধানীতে গণপরিবহনের সংখ্যা অনেক কমে গেছে
যাত্রীরা যাতায়াতে অসহায় হয়ে পড়েছেন
গণপরিবহন কম থাকার সুযোগ নিচ্ছেন অটোরিকশা চালকেরা
অটোরিকশা চালকেরা নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণ বা তিন গুণ নিচ্ছেন
আগের সপ্তাহে ছিল নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন। এখন চলছে ট্রাফিক সপ্তাহ। লাইসেন্স না থাকাসহ নানা কারণে রাজধানীতে গণপরিবহনের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এই সুযোগে আবারও ইচ্ছেমতো ভাড়া হাঁকছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকেরা।
বেসরকারি চাকরিজীবী তানিয়া আক্তার গতকাল বুধবার মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে শাহবাগে অটোরিকশায় এসেছেন। চুক্তি অনুযায়ী তাঁকে ৩০০ টাকা দিতে হয়েছে। অথচ মিটারে উঠেছিল ১৭৫ টাকা। তাঁকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১২৫ টাকা বেশি দিতে হয়েছে।
যাত্রীরা জানান, অটোরিকশাচালকেরা কদাচিৎ সরকার-নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রীদের আনা-নেওয়া করেন। তবে রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলো চালুর পরে অটোরিকশার ভাড়া নৈরাজ্য কিছুটা কমেছিল। নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ১০ বা ২০ টাকা দিতে হতো। কখনো-কখনো সেটা ৫০ টাকায় ঠেকত। কিন্তু শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে রাস্তায় গণপরিবহন কমে যায়। এরপর আবার পরিবহনশ্রমিকেরা ধর্মঘট শুরু করেন। এসবের মধ্যেই গত রোববার থেকে শুরু হয়েছে ট্রাফিক সপ্তাহ।
এসব কারণে রাজধানীতে গণপরিবহন কম থাকায় যাত্রীরা যাতায়াতে অসহায় হয়ে পড়েছেন। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে কর্মজীবী নারীদের। যাত্রীদের এই অসহায়ত্বের সুযোগ কাজে লাগিয়ে চালকেরা ইচ্ছামতো ভাড়া হাঁকান। হাতে গোনা দু-একটি অটোরিকশা ছাড়া কোনো চালকই মিটারের চলতে রাজি নন। যাত্রীরা মিটারের কথা বললেই চালকেরা যাবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। আবার দরদাম করে যে টাকায় চালক রাজি হন, তা মিটার অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণ ভাড়ায় যেতে হয়। আবার চালকেরা মর্জিমাফিক রুট ছাড়া যেতে চান না।
ধানমন্ডি ৭ নম্বর থেকে সন্তানকে নিয়ে শেরেবাংলা নগরের শিশু হাসপাতালে এসেছেন সালমা আহমেদ। এ জন্য তাঁকে গুনতে হয়েছে ২৫০ টাকা। অথচ মিটারে উঠেছে ১৩০ টাকা। সালমা বলেন, ‘মিটারের ভাড়ার কথা বললে কোনো চালক রাজি হননি। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পরে এক চালকের কথামতো ভাড়ায় চলে এসেছি।’
অন্য সময়ের তুলনায় হাসপাতালে যাতায়াত, অফিসে যাওয়া, অফিস ছুটি শেষে যাত্রীদের বেশি ভোগান্তি হচ্ছে। সরকার ২০১৫ সালে সর্বশেষ সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া ও জমার পরিমাণ বাড়ায়। সে অনুযায়ী, অটোরিকশার দৈনিক জমা ৯০০ টাকা। আর ভাড়া প্রথম দুই কিলোমিটারের জন্য ৪০ টাকা, পরে প্রতি কিলোমিটার ১২ টাকা এবং বিরতিকালীন চার্জ প্রতি মিনিটে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
মিটার অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়ায় না চলার কারণ হিসেবে অটোরিকশাচালক জামাল মিয়া বলেন, এখনো অনেক রাস্তায় যাতায়াত করা যায় না। এর বাইরেও নানা ধরনের খরচ আছে। মিটারে চললে কিছু থাকবে না।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি মো. বরকত উল্লাহ বলেন, বর্তমানে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় সিএনজি স্ক্রাপ (ধ্বংস) করে নতুন নিবন্ধনের মাধ্যমে চালু করা হচ্ছে। এতে মাসখানেক সময় লেগে যায়। ফলে অটোরিকশার সংখ্যাও কম। আবার গণপরিবহন কম থাকার সুযোগে চালকেরা নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণ বা তিন গুণ নিচ্ছেন।
যাত্রীদের ভোগান্তি এবং ভাড়া-নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গণপরিবহনের সংকট হলেই অটোরিকশাচালকেরা যাত্রীদের জিম্মি করে ইচ্ছামতো ভাড়া নেন। এর পাশাপাশি পরিবহন খাতের সব অনিয়ম ও দুর্নীতির দায় সব সময় যাত্রীদের ওপর পড়ে। বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়। দুর্ভোগে পড়তে হয়।
প্রথম আলো