আভা ডেস্কঃ পারিবারিক কারণে আওয়ামী লীগের কাউকে পদ দেয়া হয় না দাবি করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি হচ্ছে পরিবারতন্ত্রের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
পরিবারতন্ত্রের মধ্যেই রয়েছে বিএনপি।
রোববার সচিবালয়ে নিজ দফতরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ কথা বলেন।
শনিবার এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি পরিবারতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে। শুধু একদলীয় নয়, এক ব্যক্তির দিকে যাচ্ছে।’ এ প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘পরিবারতন্ত্রের মধ্যে বসে তিনি যে কথাটি বলেছেন সেটি তার বেলায় প্রযোজ্য, তার দলের বেলায় প্রযোজ্য। আমি প্রশ্ন রাখি- ইশরাক হোসেন কোন যোগ্যতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে মনোনয়ন পেয়েছেন, তিনি রাজনীতি করেছেন? সাদেক হোসেন খোকার ছেলে, সেই যোগ্যতায় তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তাবিথ আউয়ালের বাবা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, প্রথমবার যখন মনোনয়ন দেয়া হয় তখন তিনি কোন যোগ্যতায় পেয়েছিলেন?’
খালেদা জিয়া বিএনপিতে পুরোপুরি পরিবারতন্ত্র চালু করেছিলেন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) তার বোন খুরশিদ জাহান হককে প্রথমে মহিলা দলের নেতৃত্ব দেন, দলের ভাইস চেয়ারম্যান বানান, এরপর তাকে তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রী বানান। ভাই সাঈদ এস্কান্দারকে এমপি বানান এবং দলের বিশেষ সম্পাদক করেন, তার জন্য দলের নতুন সম্পাদকীয় পদ চালু করা হয়েছিল। তার আরেক ভাই শামীম এস্কান্দার কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকলেও বিমানের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সবকিছু তিনিই নিয়ন্ত্রণ করতেন। খালেদা জিয়ার আরেক বোন ব্রুনাইতে থাকেন বিউটি আপা; তার ছেলে সাইফুল ইসলাম ডিউককে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব নিয়োগ দিয়েছিলেন। এ পদে থেকে তিনি নিজে যেমন ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, তেমনি অনেক কলঙ্কেরও জন্ম দিয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি সরকারি বাড়ি দখল করেছিলেন। তার আরেক ভাই নীলফামারী বিএনপির সভাপতি সাহেরুল ইসলাম তুহিন খালেদা জিয়ার ভাগনে।’ বিএনপিতে তারেক রহমানের পদ পাওয়া নিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘হঠাৎ একদিন সকালবেলা জানতে পারলাম খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান দলের যুগ্ম-মহাসচিব নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি কোনো রাজনীতিতে ছিলেন না।’
বিএনপি নেতাদের পরিবারতন্ত্র নিয়ে কথা বলেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘নিতাই রায় চৌধুরীর মেয়ে নিপুণ রায় চৌধুরী, দু’জনেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। গয়েশ্বর বাবু বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, তার ছেলেও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। মির্জা আব্বাস বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, তার স্ত্রী মহিলা দলের সভাপতি। পুরো পরিবারতন্ত্রের মধ্যে বসে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে কথাটি বলেছেন এটি তাদের দলের বেলায় প্রযোজ্য, আমাদের দলে কাউকে পারিবারিক কারণে কোনো পদ দেয়া হয় না এবং হয়নি। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তারেক রহমান হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে সরকার পরিচালনা করছিলেন, আমাদের দলে এ ধরনের কোনো কিছু হয়নি।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মেয়র ইলেকশন নিয়ে যে ইঙ্গিত করেছেন- ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী। তিনবারের সংসদ সদস্য। জনপ্রিয়তার বিচারে, যোগ্যতার বিচারে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে নওফেলকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, পরে এমপি এবং উপমন্ত্রী করা হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি তিনি তার যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন এবং এ সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল সেটি তিনি প্রমাণ করেছেন।’
যুবলীগের শেখ পরশকে সভাপতি করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শেখ ফজলে নূর পরশ একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষ। তিনি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স এবং আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করেছেন। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার মতো একজন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিকে যুবলীগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমি মনে করি, এটি একটি সময়োচিত পদক্ষেপ। এটি সারা দেশে প্রশংসিত হয়েছে।’
রাজনীতিকরা যখন ক্ষমতায় যান তখন পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি ভুলে যান- বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামালের এমন মন্তব্যের জেরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি যেভাবে ঢালাওভাবে কথাটি বলেছেন- এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ ছিল ১৮ শতাংশের কম। এখন ২২ দশমিক ৪ শতাংশ। বনভূমির পরিমাণ ছিল ৯ শতাংশ, এখন সেটি ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। শিল্পকারখানায় ৩০ শতাংশ ইটিপি ছিল, এখন ৮৫ শতাংশের বেশি। সুন্দরবনে আগে কার্বন স্টক ছিল ১০৩ মিলিয়ন টন, এখন ১৩৯ মিলিয়ন টন। আমি সুলতানা কামালের কাছে অনুরোধ জানাব, ডাটাগুলোয় নজর দেয়ার জন্য। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাজনীতিবিদরা ক্ষমতা পাওয়ার পর বাংলাদেশে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অনেক কাজ হয়েছে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় সরকারের নেয়া উদ্যোগগুলো দেখে চিন্তা করলে সুলতানা কামাল নিজের বক্তব্যের জন্য লজ্জা পাবেন।