আভা ডেস্কঃঃ দেশের সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে বড় ধরনের ভুল হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন পরীক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, বেশ কয়েকটি প্রশ্ন ভুল উত্তরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করার কারণে মেধাতালিকা থেকে বাদ পড়েছেন অনেকে।
পরীক্ষা আয়োজনের দায়িত্বে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও ভুল স্বীকার করেছে। তবে তারা বলছে, হাতে গোনা কিছু প্রশ্ন মূল্যায়নে ভুল হয়েছে। এগুলো সংশোধন করে শিগগিরই নতুন করে ফল প্রকাশ হবে।
সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হয় গত ২৭ নভেম্বর। এদিন সাতটি কেন্দ্রে ৩ হাজার ৪১৯টি আসনের বিপরীতে ৩৪ হাজার ৮৪৬ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেন।
এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয় ১ ডিসেম্বর। তবে প্রকাশিত ফল নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম অসন্তোষ। তাদের অভিযোগ, ১০০টি প্রশ্নের মধ্যে অন্তত ৯টি প্রশ্নের ভুল উত্তরকে সঠিক ধরে নিয়ে নম্বর দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে সঠিক উত্তর দিয়েও মেধাতালিকা থেকে বাদ পড়েছেন অনেকে। এ কারণে খাতা পুনর্মূল্যায়ন করে নতুন করে ফল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা।
সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পরীক্ষায় ইংরেজিতে ১০, প্রাণিবিজ্ঞানে ১৫, উদ্ভিদবিজ্ঞানে ১৫, পদার্থবিজ্ঞানে ২০, রসায়নে ২০ এবং গণিতে ২০ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটার বিধান ছিল। মেধাতালিকায় থাকতে পরীক্ষার্থীকে সর্বনিম্ন ৫২ নম্বর পেতে হবে।
এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয় ১ ডিসেম্বর। এতে অনেকে কাঙ্ক্ষিত ফল না পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে খাতা চ্যালেঞ্জ করেন। এক হাজার টাকা ফি জমা দিয়ে অনেক শিক্ষার্থী উত্তরপত্র যাচাইও করেছেন। আর তখন ভুল উত্তরে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের বিষয়টি বেরিয়ে আসে।
খাতা যাচাই করে অন্তত ৯টি প্রশ্নের উত্তরে ভুল পাওয়ার দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। এই ৯টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়েও শিক্ষার্থীরা কোনো নম্বর পাননি, উল্টো প্রতিটি উত্তরের জন্য নেগেটিভ মার্কিং করা হয়েছে। অন্তত ২৫ শিক্ষার্থী এ বিষয়টি জানিয়েছেন।
এ ঘটনার অনুসন্ধানে জানা গেছে, একজন পরীক্ষার্থী ৩ ডিসেম্বর নিজের উত্তরপত্র যাচাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সেকশনে যান। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারে সংরক্ষিত স্ক্যান করা উত্তরপত্র দেখতে দেয়া হয়, এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত উত্তরের নমুনাও দেখানো হয়।
ওই পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরপত্রের নমুনা সংগ্রহ করেছে । এ ছাড়া ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত পরীক্ষার একটি প্রশ্নও সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো যাচাই করে দেখা যায় অন্তত ৯টি প্রশ্নের ভুল উত্তরকে সঠিক বলে চিহ্নিত করে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ওএমআর মেশিনের মাধ্যমে সব খাতা মূল্যায়ন করা হয়েছে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারণ করে দেয়া ১০টি ভুল উত্তরকে মেশিন সঠিক ধরে নিয়েছে। এভাবে ভুল মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রকাশিত ফলে মেধাতালিকায় ৩১০০ জনকে এবং ওয়েটিং লিস্টে ৩১০০ জনকে রাখা হয়েছে।
পরীক্ষার্থী মির্জা দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘আমার প্রাপ্ত নম্বর দেখা যায় ৪৬, কিন্তু আমার হিসাবে নম্বর আসার কথা ৫৪। আর সর্বনিম্ন ৫২ নম্বর পর্যন্ত পাওয়া শিক্ষার্থীদের মেধাতালিকায় রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভুল না করলে আমিও মেধাতালিকায় থাকতে পারতাম।’
আরেক পরীক্ষার্থী তালহা জুবায়ের বলেন, ‘আমি আর আমার এক বন্ধু একসঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছি। নিজেরা হিসাব করে দেখেছিলাম আমার ৫৮ আসার কথা, আর আমার বন্ধুর আসে ৪৯। তবে ফল প্রকাশের পর হলো উল্টো। আমার বন্ধুর নাম এলো কিন্তু আমার এলো না।’
এই পরীক্ষায় খাতা বাতিল এবং পরীক্ষায় অনুপস্থিত হিসেবে ১২০ জনের তালিকা দেখিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়টি নিয়েও আছে অভিযোগ।
পরীক্ষার্থী মনিরুজ্জামান মমিন বলেন, ‘আমার পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছিল। তবে খাতা বাতিল হওয়া পরীক্ষার্থীদের তালিকায় আমার নাম এসেছে। পরে খাতা যাচাই করে দেখি আমার রোল নম্বরের একটি সংখ্যার বৃত্ত সামান্য ভরাট হয়নি। এতেই খাতা বাতিল করা হয়েছে।’
রংপুরের পরীক্ষার্থী ফারিয়া আলম জানান, তিনি গাজীপুরে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিলেও ফলাফলে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে। আক্ষেপ করে ফারিয়া বলেন, ‘মাকে নিয়ে এত কষ্ট করে পরীক্ষা দিয়ে এলাম, কিন্তু দেখা যাচ্ছে আমি অনুপস্থিত। এটা কীভাবে সম্ভব!’
এসব অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াস উদ্দীন মিয়া বলেন, ‘পরীক্ষায় দুই-একটা প্রশ্নে একটু সমস্যা হয়েছে। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করছি, দুই-এক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। আমরা খাতাগুলো পুনর্মূল্যায়ন করে নতুন করে রেজাল্ট দিয়ে দেব।’
অন্তত ৯টি প্রশ্ন ভুল উত্তরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করার অভিযোগ তুলে ধরলে তিনি বলেন, ‘এতগুলো হবে না, তিন-চারটা প্রশ্নের ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে। এটা যেহেতু সমাধান হয়ে যাচ্ছে তাই আর কোনো জটিলতা হবে না।’
তিনি দাবি করেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ওএমআর শিটের উত্তরপত্রের বৃত্ত ভরাট করতে গিয়ে হয়তো কারও ভুল হয়েছে। সেটা যাচাই করে দেখা হচ্ছে।’
১২০ জনের খাতা বাতিল ও অনুপস্থিত দেখানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা তাদের বৃত্ত ভরাটের সময় রোল নম্বর, মোবাইল নম্বর, পিন নম্বর সবই ভুল করেছিল। তাই খাতা বাতিল করা হয়েছে।’