কাটাখালীতে মাদক ব্যবসায়ীর জন্য মাসোহারা, সেবনকারীর জন্য চাঁদা নির্ধারণ।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ কাটাখালী থানা এলাকায় এখন মাদক বিক্রির হাট বসে। যেখানে মাদক নির্মূলে আরএমপি পুলিশ কমিশনার বন্ধপরিকর, সেখানে কাটাখালী থানার কতিপয় অসাধু পুলিশ মাসিক মাসোহারা নিয়ে মাদক ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যাক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। মাদকের এই ড্যান্ডিক্ষ্যাত এলাকায় মাদক উদ্ধার নাই বললেই চলে। আইওয়াশের নামে মাঝে মাঝে অভিযান করে নামে মাত্র উদ্ধার দেখান থানা পুলিশ। যে এলাকায় ডিবি পুলিশ ও র‌্যাব প্রতিনিয়তই অভিযান পরিচালনা করে মাদকের বড় বড় চালান আটক করছে সেখানে কাটাখালি থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে জনমনে। এই এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীর জন্য মাসিক মাসোহারা, আর সেবনকারীর জন্য চাঁদা আদায় করেন কাটাখালী থানা পুলিশের এস আই জাহাঙ্গীর।

রাজশাহী মাদকদ্রব্য নিয়ন্তরণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী মাসিক ২০ হাজার বেশী ফেন্সিডিলের ব্যবসা হয় এই অঞ্চলেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, চলতি বছরে ১ হাজার বোতল ফেন্সিডিল আটকের নজির নেই এই থানার। যখনই আটক হয় তখন ঊর্ধে ৫০/৭০/৯০ বোতল ফেন্সিডিলের বেশী উদ্ধার হয়না। তাহলে রহস্য কি?

কারনটা কিন্তু এলাকাবাসী সকলের জানা। এলাকাবাসীর বক্তব্য হচ্ছে মাসিক মাসোহারায় অঘোষিত ক্যাশিয়ার কাটাখালি থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই জাহাঙ্গীর মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন। ফলে মাদক সেবী আটক হলেও আটক হয় না মাদক ব্যবসায়ী। যেখানে মাদক সেবনের জন্য প্রতিনিয়তই প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ টি মোটর সাইকেল প্রতিদিন গড়ে মাদক সেবনে যায়, সেখানে মাদক পাওয়া যায় বলে থানা পুলিশের অভিযান ফাঁকা থাকে। এমন শোনা যাচ্ছে প্রতিটি মোটরসাইকেল্ ধরে গড়ে ২০০ থেকে ৫০০ পযর্ন্ত টাকা নেওয়া হয় মাদক সেবীদের নিকট থেকে।

এরুপ অনেক মাদক সেবী অভিযোগ করে বলেন, টাংগন এলাকায় গেলেই পুলিশকে চাঁদা দিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় থানা নিয়ে গেলে মোটা অংকের টাকা দিয়েও ছাড় না পেয়ে আরএমপি ধারায় চালান হতে হবে। প্রতিদিন কাউকে না কাউকে আটক করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে আরএমপি করেন থানা পুলিশ।

নাম প্রকাশে অনৈচ্ছুক টাংগন এলাকার এক ব্যক্তি জানান, “এসআই জাহাঙ্গীর” ছোট বড় সকল মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উত্তোলন করেন সাপ্তাহিক মাসহারা। সপ্তাহে ও মাসে কোন মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কত টাকা উত্তোলন করতে হবে তা নির্ধারন করেন । আর কোন মাদক ব্যবসায়ী টাকা না দিলেই তার নামে দেন মামলা।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ১৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাত আনু: ৯টার দিকে কাটাখালী থানাধীন টাংগন এলাকার বালুর ঘাট থেকে আটক করা হয় ৩ জন মাদক ব্যবসায়ীকে। তাদের নাম হচ্ছে হিলটন, সোহেল ও ইসলাম নামের অজ্ঞাত এক ব্যাক্তিকে। রাজশাহী কাটাখালীর থানার সেকেন্ড অফিসার “এসআই জাহাঙ্গীর” তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসেন রাত ৯.৩০ মিনিটের দিকে।

এরপর শুরু করেন দেন দরবার। ৩ মাদক ব্যবসায়ীকে ছাড়াতে তাদের পরিবারের কাছে দাবি করেন ৬০ হাজার টাকা। অবশেষে ৩৫ হাজার টাকার চুক্তিতে তাদের থানা থেকে ছেড়ে দেন রাজশাহী কাটাখালীর থানার সেকেন্ড অফিসার “এসআই জাহাঙ্গীর”।

এদিকে কাটাখালী বালুর মাঠ এলাকায় সরেজমিন অনুসন্ধানে গেলে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক এলাকাবাসী জানান – এলাকার হিলটন, সোহেল ও অজ্ঞাত ইসলাম নামের এক ব্যাক্তিকে থানায় আটক করে নিয়ে যান এসআই জাহাঙ্গীর কিন্তু আটকের কয়েক ঘণ্টার মধ্য তাদের ছেড়েও দেন। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক এলাকাবাসী আরও জানান মাদক নিয়ে ঐ তিন ব্যাক্তিকে আটক করলেও তাদের ছেড়ে দেন “এসআই জাহাঙ্গীর”।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কাটাখালি থানাধিন মাসকাটাদিঘী পূর্বপাড়া গ্রামের হায়দার, টাংগন এলাকায় হানিফ, মিলন, কালু, চায়না, আফরোজ, তজিবার, লিটন, রফিক, রিংকু, হাসান । টাংগন পূর্বপাড়া, মধ্যপাড়া ও পশ্চিমপাড়া এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা হলো: রায়হান, শুকটা রাজিব, সজিব, আলিরাজ, হারান, পরান, নাজির,আলাম, কালোনী, এবাদুল, আসাদুল, ফারুক, মাইনুল, আরজুল, উজির, কালাম, জসিম, বাহালুল, লুৎফর, আকাশ হোসেন কটা, হালিম, সজল, অজ্ঞাত কারনে তারা ধরা ছোয়ার বাইরে। আর সাধারন মাদক সেবীদেরই বেশি আটক করা হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। আর এদের কাছে নিয়মিত মাসহারা আদায় করেন “এসআই জাহাঙ্গীর”।

উক্ত বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী কাটাখালী থানার সেকেন্ড অফিসার “এসআই জাহাঙ্গীরের ০১৩২০০৬১৬৫৯ নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

পরবর্তীতে রাজশাহী কাটাখালী থানার ডিউটি অফিসারকে ০১৩২০০৬১৬৫৯ নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলেও সেটিও সারাদিন সুইজড অফ দেখায়।

সর্বশেষ রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র এডিসি গোলাম রুহুল কুদ্দুসের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান – প্রতিটি থানায় এখন সিসি ক্যামেরা বিদ্যমান বিধায় আসামী ছেড়ে দিয়ে থাকলেও সিসি ক্যামেরায় তা অবশ্যই প্রতীয়মান হবে। এছাড়া রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বর্তমান পুলিশ কমিশনার মোঃ আবু কালাম সিদ্দিক স্যার বলেছেন – রাজশাহী মহানগরীতে এ ধরনের অপরাধ করে আর কেউ পার পাবেনা। সকল ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে স্যার কঠোর নির্দেশনা জারী করেছেন। কারন মাদক, দেশ ও সমাজের শত্রু। তাই সে যদি পুলিশ সদস্য হয়ে মাদকের সাথে কোন সখ্যতা গড়ে তোলে তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর থেকেও কঠোরতর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এই মুখপাত্র।

Next Post

শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় শ্রমিক লীগ সভাপতির অবদান স্মরণীয়, প্রধানমন্ত্রী।

শুক্র নভে. ২০ , ২০২০
আভা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,মহান মুক্তিযুদ্ধ ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় শ্রমিক লীগ সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মন্টুর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। শুক্রবার (২০ নভেম্বর) এক শোকবার্তায় তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শুক্রবার (২০ নভেম্বর) […]

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links