আভা ডেস্কঃ ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে রাশিয়াকে সহায়তার বিষয়ে চীনকে সতর্ক করেছে ন্যাটো। শুধু সামরিক ক্ষেত্রেই নয়, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে মস্কোকে সহযোগিতা না করতেও আহ্বান জানিয়েছে পশ্চিমা সামরিক জোটটি।
আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসের ন্যাটো সম্মেলন শেষে বিবৃতিতে মস্কোর তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি বেইজিংকেও এ সতর্কবার্তা দেয়া হয়।
ন্যাটোর বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী চীনসহ সব রাষ্ট্রকে আহ্বান জানাই, তারা যাতে রাশিয়ার যুদ্ধপ্রচেষ্টাকে সমর্থন করা থেকে বিরত থাকে এবং রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সহায়তা করে এমন পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকে।
ন্যাটো নেতারা বলছেন, ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান কয়েক দশকের মধ্যে ইউরো-আটলান্টিক জোনে সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করেছে।
পশ্চিমা এ সামরিক জোট বিবৃতিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অবিলম্বে এই যুদ্ধ বন্ধ করে ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি বেসামরিক নাগরিকদের দ্রুত, নিরাপদ ও বাধাহীন পথ চলার অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইউক্রেন সংকটের জন্য ন্যাটোর সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে বলেছে, সবাই জানে ‘ইউক্রেন সংকটের’ জন্য কোন দেশটি দায়ী।
ন্যাটোর ব্রাসেলস সম্মেলনের আগে নাম উল্লেখ না করে যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেছিলেন, বেইজিং ইউক্রেনে রুশ হামলা সম্পর্কে আগে থেকেই জানত। এমনকি চীনের পক্ষ থেকে রাশিয়াকে শীতকালীন অলিম্পিক ২০২২-এর জন্য সামরিক অভিযান শুরুর দিন পিছিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। চীনের কথা রাখতে গিয়েই শীতকালীন অলিম্পিক শেষে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তার এমন মন্তব্যে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উ কিয়ান যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে বলেন, দেশটি ‘মিথ্যুক ও ঝামেলা সৃষ্টিকারী’।
এমনকি রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে উ কিয়ান বলেন, এমন কিছু বলা ‘মারাত্মক ভুল তথ্য’ যা চীনের প্রতি দোষারোপ বা কাদা ছোড়াছুড়ির ক্ষেত্রেই ব্যবহার করে।
তিনি বলেন, ‘অভিযোগগুলো মিথ্যাবাদী ও সমস্যা সৃষ্টিকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের আসল চেহারাই তুলে ধরে এবং চীনকে লক্ষ্য করে ইউক্রেন ইস্যুতে যে মিথ্যা ও ক্ষতিকর তথ্য যুক্তরাষ্ট্র ছড়াচ্ছে তার দৃঢ় বিরোধিতা করে চীন।’
চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াশিংটনের প্রতি ইঙ্গিত করে জোর দিয়ে বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ বিভিন্ন কারণে এবং একটি জটিল ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কারণে শুরু হয়েছে। কিন্তু আমরা বুঝতে পারি, কোন বৃহৎ শক্তি আজকের সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী।’
উ কিয়ান বলেন, ‘বেইজিং চায়, সকল পক্ষ যেন ইউক্রেন সংকটের উত্তেজনা কমিয়ে আনতে আলোচনার দরজা খোলা রাখে এবং চীন সেখানে গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে।’
এ সময় তিনি ইউরোপে একটি ভারসাম্যপূর্ণ, কার্যকরী এবং টেকসই ইউরোপীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানান।
বৈশ্বিক ইস্যুতে চীনের গঠনমূলক ভূমিকার বিষয়ে উ কিয়ান বলেন, ‘চীন কখনও অন্য কোনো দেশ আক্রমণ করেনি, কখনও প্রক্সি যুদ্ধে লিপ্ত হয়নি, প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেনি, কোনো সামরিক ব্লকের সংঘর্ষে অংশও নেয়নি।’
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য এমন সময় এলো যখন একই দিনে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ইউক্রেন ও ইইউর দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ‘পুতুলে’ পরিণত হয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।