একদিনেই ৩৭ বন্দির শিরশ্ছেদ করা হয়েছে সৌদিতে।

আভা ডেস্কঃ সম্প্রতি সৌদি আরবে একদিনেই যে ৩৭ বন্দির শিরশ্ছেদ করা হয়েছে; তাদেরকে মূলত নির্যাতনের পর জোর করে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ত্রাসবাদে জড়ানো, চরমপন্থী মতাদর্শ পোষণ, সন্ত্রাসী সেল গঠন ও দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার দায়ে ওই অভিযুক্তদের শিরশ্ছেদ করা হয় বলে দাবি করে রিয়াদ।

কিন্তু মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন শিরশ্ছেদকৃত এই বন্দিদের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তির কিছু নথি হাতে পেয়েছে। যেখানে উঠে এসেছে কীভাবে তাদের নির্যাতনের পর জোর করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। একই সঙ্গে শিরশ্ছেদকৃতদের অধিকাংশই দেশটির সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়ের সদস্য বলে সিএনএন জানিয়েছে।

সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, শিরশ্ছেদকৃত ৩৭ ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর স্থাপনায় বিস্ফোরক হামলা, বেশ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে হত্যা, চরমপন্থী মতাদর্শ পোষণ ও দেশ বিরোধী শত্রু সংগঠনকে সহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

কিন্তু শুক্রবার সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিরশ্ছেদকৃতদের অনেকেই দেশটির সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়ের সদস্য। শিরশ্ছেদের আগে পর্যন্ত তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছিল। সৌদির কারাগারে বন্দি মোহাম্মদ আল-মুসাল্লাম আদালতে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। তার শরীরে একাধিক জখমের চিহ্ন রয়েছে।

আদালতের ওই নথিতে দেখা যায়, মুসাল্লাম বলেছেন, এখানে যেসব স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে, তার কোনোটিই সঠিক নয়। কিন্তু আমি প্রমাণ করতে পারবো না যে, আমাকে বাধ্য করে এই স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে। ‘কিন্তু দাম্মামের কারা হাসপাতালের মেডিক্যাল রিপোর্ট রয়েছে। আমি তাদেরকে আদালতে তলবের অনুরোধ জানিয়েছি। আমার শরীরে আঘাতের চিহ্ন তারা দেখেছে।’

শিরশ্ছেদকৃতদের মধ্যে ২৭ বছর বয়সী মুনির আল-আদম নামের অন্ধ এবং বধির এক যুবক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আনা সব ধরনের অভিযোগের সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছিলেন। আদম বলেছিলেন, এগুলো আমার কথা নয়। আমি একটি চিঠিও লেখিনি। এটা মানহানিকর লেখা; যা জিজ্ঞাসাবাদকারীরা নিজ হাতে লিখেছেন।

২০১২ সালে গ্রেফতার হয়েছিলেন মুজতবা আল সৈকত। সেই সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। তার বাবা নাদের আল সৈকত আদালতে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের সময় বলেছিলেন, তার ছেলে মাত্র দুই বার বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল; প্রত্যেকবার পাঁচ মিনিট করে সে বিক্ষোভে ছিল।

আদালতের নথি অনুযায়ী, নাদের আল সৈকত বলেন, তার ছেলেকে মানসিক এবং শারীরিক নিপীড়ন করা হয়। যা তার মনোবল ভেঙে দেয়। ‘জিজ্ঞাসাবাদকারীরা তাকে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দিতে বলেন। স্বীকারোক্তি দিলে তাকে নির্যাতন করা হবে না বলে হুমকি দেয়া হয়। পরে এতে স্বাক্ষর করতে তাকে বাধ্য করেন তারা।’

সৈকত যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেখানে ওয়েস্টার্ন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার দিন তাকে সৌদির বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে ৯০ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়। আদালতের নথি বলছে, ব্ল্যাকবেরি স্মার্টফোন ব্যবহার করে বিক্ষোভের আয়োজন ও দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের অভিযোগ স্বীকার করেছিলেন আল-সৈকত।

রোববার দেশটির রাজধানী রিয়াদে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলার চেষ্টা নস্যাৎ করার একদিন পর ওই গণ-শিরশ্ছেদ করা হয়। রাজধানীর উত্তরাঞ্চলে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর একটি ভবনে হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার দায়ে ইতোমধ্যে আইএসের ১৩ যোদ্ধাকে গ্রেফতার করা হয়।

জুলফি এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর ওই ভবনে আইসের হামলার দায় স্বীকার করে নেয়ার পর অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

নিউইয়কভিত্তিক মানবাধিকা সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, যে ৩৭ জনের শিরশ্ছেদ করা হয়েছে; তাদের মধ্যে অন্তত ৩৩ জন দেশটির সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়ের। ১৯০০ সালের পর সৌদি আরবের ইতিহাসে একদিনে সংখ্যালঘু এই গোষ্ঠীর সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্যের শিরশ্ছেদের ঘটনা এটি।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে কমপক্ষে ১০০ জনের শিরশ্ছেদ করা হয়েছে। গত বছর তেল সমৃদ্ধ এই দেশটিতে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত অন্তত ১৪৯ জনের শিরশ্ছেদ করা হয়।

যুগান্তর

Next Post

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে দশম দেশ পাকিস্তান।

শনি এপ্রিল ২৭ , ২০১৯
আভা ডেস্কঃ ভিসার মেয়ার শেষ হয়ে যাওয়া ও নির্বাসিত নাগরিকদের ফেরত নিতে অস্বীকার করায় পাকিস্তানের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়াও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ পাকিস্তানিদের ভিসা প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে। শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাকিস্তানে কনস্যুলার কার্যক্রম অপরিবর্তিত থাকবে। কিন্তু গত ২২ এপ্রিলের ফেডারেল রেজিস্টারের প্রজ্ঞাপনে […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links