ইভিএমে ভোট ‘ভোটাধিকার হত্যার এক নিঃশব্দ দুরভিসন্ধি প্রকল্প’ মির্জা ফখরুল ।

আভা ডেস্কঃ আসন্ন ঢাকা দুই সিটির নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। ইভিএমে ভোট ‘ভোটাধিকার হত্যার এক নিঃশব্দ দুরভিসন্ধি প্রকল্প’ উল্লেখ করে তা বাতিল চায় দলটি। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ৩০ জানুয়ারির ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে কেএম নূরুল হুদা কমিশনের নেতৃত্বে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটা ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তনের যে কোনো নির্বাচনে ‘প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোটাধিকার হত্যার মহাষড়যন্ত্র।’ জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার দায়িত্ববোধ থেকে বিএনপি নির্বাচন কমিশনের ইভিএম ব্যবহারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও বাতিলের দাবি জানাচ্ছে। আমরা আশা করি, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন জনগণের অধিকারহানির ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করবে। একই সঙ্গে তারা প্রচলিত ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করে জনগণের ভোটাধিকার নির্বিঘ্ন করবেন। কারণ ইভিএমের তুলনায় কাগজের ব্যালটে ভোট দিতেই ভোটাররা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট কারচুপির নানা দিক তুলে ধরতে গুলশান কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

ইভিএমের নানা ত্রুটি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ইভিএমে প্রোগ্রামিংয়ে ভ্রান্তি, যান্ত্রিক ত্রুটি এবং বিদ্বেষাত্মক টেম্পারিং বা কারসাজির সুযোগ আছে। এছাড়া কম্পিউটারভিত্তিক ভোট প্রদান যন্ত্রের অন্তর্নিহিত দুর্বলতা, উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ইভিএম নিয়ন্ত্রণের সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিশেষ দলের পক্ষে নির্বাচনী ফলাফল পাইয়ে দেয়ার সুযোগ আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যে ইভিএম কিনছে তাতে ভোটার ভেরিয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল বা ভিভিপিএটি (যন্ত্রে ভোট দেয়ার পর তা একটি কাগজে ছাপা হয়ে বের হবে) সুবিধা নেই। নির্বাচন কমিশনের ব্যবহার করা ইভিএমে ভোটারদের বায়োমেট্রিকস বা আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে ভোট দিতে হয়। যদি আঙুলের ছাপ মেশিন পড়তে না পারে, তাহলে নির্ধারিত নির্বাচনী কর্মকর্তা ২৫ শতাংশ ভোটারের বায়োমেট্রিকস ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা ‘ওভাররাইড’ বা বাদ দিতে পারেন। ভোটারের অনুপস্থিতিতে দলবাজ নির্বাচনী কর্মকর্তা যে এ ক্ষমতা অপব্যবহার করে, তার পছন্দের প্রার্থীকে জিতিয়ে দেবেন না, তার নিশ্চয়তা দিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশন কার্যত অক্ষম। আর এখানেই হল শুভঙ্করের ফাঁকি। তাছাড়া ইভিএম আগে থেকেই এমনভাবে প্রস্তুত করা যেতে পারে, যাতে ভোটার যে কোনো প্রার্থীকে ভোট দিলেই তা কোনো পূর্বনির্ধারিত প্রার্থীর পক্ষে রেকর্ড হয়ে যাবে। উন্নত প্রযুক্তির এই যুগে এটি এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর বর্তমানের ইভিএমগুলো যে অনুরূপ বিশেষভাব প্রস্তুতকৃত নয় তার নিশ্চয়তা কে দেবে?

এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, আমরা পুরো ব্যবস্থাটি বাতিলের দাবি জানিয়েছি। দেখি নির্বাচন কমিশন কি রি-অ্যাক্ট করে। তারপর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি লিবারেল ডেমোক্রেটি একটি দল। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদলে বিশ্বাস করি। তাই এ মুহূর্তে ইসির অধীনে আর নির্বাচনে যাব না দল এখনও এমন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।

ইভিএম ব্যবহারের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং স্টেকহোল্ডাররা এর বিরোধিতা করেছেন। এরপরও ইভিএম ব্যবহারের এই একতরফা সিদ্ধান্ত সিটি নির্বাচনে নিঃশব্দ ডিজিটাল কারচুপির ষড়যন্ত্র বলে আমরা মনে করি। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রচলিত কাগুজে ব্যালট পেপারে ভোট কারচুপিতে বর্তমান সরকার সফল হলেও তারা দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়েছে এবং হচ্ছে। তাই এবার তারা ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিঃশব্দ ভোট কারচুপির ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। যাতে রাতে বা দিবালোকে ভোট ডাকাতির মতো কোনো হৈচৈ থাকবে না। সবাই দেখবে সব ঠিকঠাকমতো চলছে; কিন্তু ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে অতি সহজে ভোট ডাকাতি সুচারুরূপে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যেই বিশ্বের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতার কারণে ইভিএম বিতর্কিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ কারণে অনেক গণতান্ত্রিক দেশ এ পদ্ধতি প্রত্যাখ্যান করেছে। সেখানে নূরুল হুদা কমিশন আসন্ন ঢাকা সিটি নির্বাচনের সব কেন্দ্রে সেই ইভিএম ব্যবহারের একতরফা ব্যবস্থা নিচ্ছে। এর মাধ্যমে ডিজিটাল কারচুপির এক নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে ইসি। যা বাংলাদেশের বিধ্বস্ত নির্বাচনী ব্যবস্থার কফিনে সর্বশেষ পেরেক বলে ইতিহাসে গণ্য হবে। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইভিএম ব্যবহারকে বর্তমান দলবাজ ইসি ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সম্মিলিত ষড়যন্ত্র। যা আগামীতে মানুষের ভোটের অধিকারকে স্থায়ীভাবে কেড়ে নেয়ার এক মহাষড়যন্ত্র বলে বিএনপি মনে করে।

তিনি দাবি করেন, বিএনপি সর্বান্তকরণেই একটি বিজ্ঞানমনস্ক, আধুনিক এবং প্রযুক্তিবান্ধব রাজনৈতিক দল। কিন্তু যে প্রযুক্তি ব্যবহারে এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকারের মতো মৌলিক মতপ্রকাশ ক্ষুণ্ণ হতে পারে, তা আমরা কখনই বরদাশত করব না।

তিনি বলেন, নগরবাসীর সেবা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। ডেঙ্গু প্রায় মহামারী রূপ ধারণ করে কয়েকশ’ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। জনশ্র“তি আছে, ডেঙ্গু ব্যর্থতায় ভোট প্রচারে জনরোষ থেকে রক্ষা পেতে আওয়ামী লীগ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র সাঈদ খোকনকে বাদ দিয়ে গোপালগঞ্জ থেকে প্রার্থী ভাড়া করতে বাধ্য হয়েছে। সরকার দীর্ঘকালের জন্য ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মূলত ইভিএম প্রকল্পকে সামনে নিয়ে এসেছে। কারণ কেবল ইভিএমের মাধ্যমেই দেশের সব মানুষ, দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলসহ সবাইকে অন্ধকারে রেখে রাষ্ট্রযন্ত্রের গুটিকতক দায়িত্বপ্রাপ্ত ফ্যাসিস্ট সহযোগীর যোগসাজশে রাষ্ট্রক্ষমতাকে চিরস্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত নেয়া সম্ভব।

ফখরুল বলেন, আমরা গভীর হতাশা ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, এই চক্রান্ত বাস্তবায়নে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিকেও ব্যবহার করার ঘৃণ্য অপতৎপরতা চলছে। যার অংশ হিসেবে ‘ইভিএম’ প্রকল্পে সেনা সদস্য নিয়োগের প্রচার চালিয়ে সরকার ও ইসি এক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে যে কোনো ধরনের বিতর্কিত কাজের বাইরে রাখার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।

ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি হিসেবে বিভিন্ন সময় আর্থিক সাশ্রয় ও দ্রুততার সঙ্গে ভোটগ্রহণ ও গণনার কথা বলা হয় যা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য বলে দাবি করেন তিনি। এ ব্যাপারে বেশকিছু তথ্যপ্রমাণও তুলে ধরেন ফখরুল।

যুগান্তর

Next Post

দশ বছরে সেরা বাংলাদেশী বোলার সাকিব আল হাসান

সোম জানু. ৬ , ২০২০
আভা ডেস্কঃ ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল, এই এক দশকে দেশের হয়ে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি এ তিন ফরম্যাটেই সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করেছেন সাকিব আল হাসান। টেস্টে ক্রিকেটের আভিজাত্যের ফরম্যাটে ৪২ ম্যাচে ১৬২ উইকেট শিকার করেছেন সাকিব। মাত্র ২৭ ম্যাচ খেলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০৬ উইকেট শিকার করেছেন তাইজুল ইসলাম। আর ২২ […]

এই রকম আরও খবর

Chief Editor

Johny Watshon

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit, sed do eiusmod tempor incididunt ut labore et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat. Duis aute irure dolor in reprehenderit in voluptate velit esse cillum dolore eu fugiat nulla pariatur

Quick Links